পর্ব - ০১


বিশাল এক পাষাণ সম রয়েছে লেপ্টে পড়ে ॥
এক পলকের সেই সে দেখার স্মৃতি,
কোন সে মোহ মায়ার যাদুর নেশার ঐ পিরীতি,
আমারে দিয়েছে শিখিয়ে নিঃশ্বাসের সুরে বিচ্ছেদের গীতি,
দেখা কিবা কথা না হলে গোপন চোখের জলে কষ্ট পাবার এ কোন রীতি,
আজও রয়েছে হৃদয় জুড়ে জ্বালাময় বিষাদে এ বুক ভরে ॥
পায়নি কিছু তবু যায়নি মুছে যায়নি ভূলে,
কত সোহাগ যতনে তারে রেখেছে মনের শিকায় তুলে,
কি বেদনা হেথা নাবলা ব্যাথা কারে বলো আমি কেমনে তা দেখাই খুলে,
দুটি অন্তরে হায় রবে চীরতরে হোক সে দূর অজানায় গেলেও দুজনে মরে ॥
কভূ দেখানো তা যায়না,
কেউ তা শুনিতে বা দেখিতেও পায়না,
অশ্রুহীন বদনও নহে মলিন নিরব কষ্টের সে কান্না,
পোড়া মন বেহায়া এমন মানেনা মানা ঐ স্মৃতিই যেন তার সান্তনা,
খলখল দাউদাউ দাবানল সে দহন অবিরল জ্বলে গহীন অতল মনের ভিতরে ॥
যাদুর মায়ায়,
ভরা ঐ মোখখানা হায়,
মিথ্যে আশায় পথ চাওয়ায় দিন যায়,
আজও সারা দিনমান সকল কাজে ও কথায়,
সবার মাঝে যেন কত ভয়ে লাজে শুধু খুঁজে বেড়ায়,
হারানো দিনের ঐ সে সুখ আর কি কেউ কভূ কোথা পায়,
পোড়া কপালের ছাইগুলো আহা মোর কে মাখিয়ে দিলো সারা গায়,
দোষ দেবো আমি কারে আর, সে ক্ষতির পূরণ হবে বলো কবে কেমন করে ॥
আহা দুই দিগন্তে দুইজন,
কেজানে কোথায় বেঁচে আছে কিনা নাকি তার হয়েছে মরণ,
মনের মানুষ কেন হইলনারে সংগী, আমার রঙ তামাসার রংগী ও অন্তরের আপন,
বিধিরে আমিতো জানি ওরে তুমি নও পাষাণ তবে কেমন তোমার বিধিবিধান আর আজব এ ভূবন,
সবইতো আছে আমার কাছে ধনজন ঢের ভোগ বিনোদন,
তবু কেন সুখ নাই হায়, ঐ সুখপাখীটা বারেবারে সে ধরতে চায়, হন্নে হয়ে তারে খুঁজে বেড়ায় সারাক্ষণ,
আমার এতকিছু ডানেবামে, কত লোকজন পিছুপিছু সব কাজেকামে, তবু কেন মন তার ভরলনারে সে কি কারণ,
ভর দুপুরে নিঝুম রাত গভীরে কার তালাসে গোপনে একাএকা সে বিজনে বিচরে ॥


পর্ব - ০২


ঐ একজন মনেতে যার বাস,
দেখা নাই কথা হয়না একশত চূয়াল্লিশ মাস,
গোপনে আসি মোর মনের সুখ আর চোখের ঘুম করে হামেসা বিনাশ,
জানা নাই ঠিকানা তবু তার লাগিয়া দেওয়ানা বুকের ভিতর হাহাকার হাহুতাষ,
আমার আপন এ ভূবন,
কত বিষন্ন বিরস নিঝুম ও বিজন,
ইচ্ছে যখন এ দেহটারে করে সে মন্থন লুন্ঠন উঞ্চ সুখের জ্বালাতন,
মরা গাঙে আর ডাকেনা বান জলরাশি বহেনা উজান, মদির জোছনায় ভরিলে উঠান গহীনে প্রাণ করে ক্রন্দন,
এমনই আমার কাটিল জীবন যেন আমি বন্দি দাসী একজন আপন বিছানায় নিজের ঘরে ॥
আজও মন বলে ওরে,
যদি সে কভূ এসে মোর হাত ধরে,
কিবা নাম লয়ে ডাকে মোর দাড়িয়ে থেকে বাহিরে,  
মম পঞ্চ হৃদয় আজও মনেহয় সে আশায় সদা রহে কান খাড়া করে,
হোকনা দুদিনের জীবন, তবুওতো কিছু পেলো মন, কি হবে আর সে হিসেব করে সুখ-দুঃখ কে ভেবে মরে,  
আমি যাবো চলে তার সনে এ প্রাসাদ ছেড়ে চীরতরে, পাঁচজনের মা সন্তান ও কূলমান ভেসে যায় যাক প্লাবন ঝড়ে ॥
মোর বাপ ভাই,
সে ছিল গরীবের ছেলে, তার কেহ নাই,
ছিলেম আমি নাকি খুব রুপসী,  সে নাকি মোর যোগ্য নহে তাই,
আমরা বিয়ে করেছি জেনে,
জ্বলে উঠে সবে তেলে-বেগুনে,
গোপনে একদল ছেলে মিলে পাঁচজনে,
একদিন গিয়ে তারে জোড় করে টেনে ধরে এনে,
ভীষণ মারধর করে এক গভীর রাতের অন্ধকারে দিয়েছিল তারে তাড়াই,
এ সমাজে এমন অত্যাচারী রয়েছে কত যারা করে ধন জন ক্ষমতা ও জাতের বড়াই,
সেইযে চলে গিয়েছিল আর আসেনি কভূ সে ফিরে, শুনেছি নাকি বিদেশে পারি দিয়েছিল সে জানের ডরে ॥
তারপর ওরে হায়,
মোর বড়লোক বাবামায়,
পড়ে গিয়েছিল যেন ভীষণ ভাবনায়,
বিয়ের নামে আমারে দ্রুত তারা ছুড়ে ফেলবে কোথায়,
তবু রাখছিল তারা মোরে সারাদিন সারাক্ষণ চোখে চোখে কড়া পাহাড়ায়,
হন্নে হয়ে খুঁজছিল তারা সবাই মিলে,
তত বিদ্যা কিবা বিত্ত দরকার নাই করবে শিকার অর্থের ঢিলে,
আমরাই পড়াবো চাকরী খুঁজে দেবো চালাবো নাহলে শেষে ব্যাবসা দিয়েই বসাবো আল্লায় চাহিলে,
আমার মায়ের দূর সম্পর্কের এক বোনের ছেলে,
গরীবের সন্তান, আছে জাতকূলমান, জাতীয় দলে নাকি সে ভলিবল খেলে,
দেখতে শোনতে বেশ হ্যান্ডসাম, দুটো পয়সা হলে বেড়ে যাবে দাম, সব ভূলে যাবে মেয়ে ভালো একটা জামাই পেলে,
আমারে রেখে জেলে, অবশেষে এক মধ্যবিত্ত ঘরে বিয়ে দিয়েছিল মোরে ধরে জোড় করে এক বছর পরে ॥


পর্ব - ০৩


আহা ঐ মোর বেচারা স্বামী,
সংগে তার আহা কত অবিচার করেছি আমি,
সয়েছে অবহেলা অযতন হয়ে মোর কাছে সম অতি কমদামী,
সতর বছরের সংসার,
কোন দোষ ওরে ছিলনা কভূ তার,
বাবার ফ্লাটেই ছিল বসবাস আমাদের দুজনার,
ছিলেম আমি বন্ধু নামী এক নির্মম ডাইনী পাষান,
তাই বুঝি কিরে ভূবন মম ঢাকিল আবিলে, এক করুণ জীবনের হলো অবসান,
মাত্র পঞ্চাশ বছরে চলে গেলো সে মোরে ছেড়ে চীরতরে হলো তিরোধান তার পাঁচ দিনের ডেংগু জ্বরে ॥
কভূ পায়নি সে অধিকার তবু ছিলনা,
সেবা যতন আদর ও সম্মানের খানা,
কোন অভিযোগ লোভ ক্ষোভ অভিমান কিবা তার কোন বায়না,
তার সে ভালবাসা ছিল অতিব মহান,
আমারে খুশী রাখিতে, সে সদা রহিত পীড়িত ও পেরেশান,
বয়সে ছিল অনেক বড় তবু তরতাজা সতেজ ও সবল প্রাণ,
এত জ্বালাতন দূর্ব্যাবহার তবু দেখিনি কভূ মলিন আমি তার ঐ মোখখান,
জিতে গেলো সে দেখিলাম বসে হিসাব কষে, আমারইতো শেষে হয়েছিল হার,
এক বিশাল বিষাদ সাগর আমারে ঠেলে পিছনে রেখে ফেলে করে পর দিয়ে বুকে এক শূণ্যতার পাহাড়,
কত ভাল মানুষ ছিল সে আর,
অমানুষ আমি বন্ধুর নামে স্ত্রীর বেশে পাশে তার,
সাহস পায়নি তাই বুঝি সে চায়নি কিছু,
বুঝেও আহা আমি এড়িয়ে গেছি দেইনি তাহা ঘুরেছে কত মোর পিছুপিছু,
তার অধিকার করেছি হরণ,
আমিওতো ঠকেছি কেন হায় বুঝিনি তখন,
আজ আর কি মূল্য তার ঐ অবারিত রুপ আর রসেভরা আবৃত যৌবন,
আজ আমি সব জানিলাম,
কত ভাল ছিল সে আর কতযে তার দাম,
হায় সব বুঝিলাম, আমার সকল দুঃক্ষ সুখের সোহাগের সাম হঠাৎ যখন গেলো মরে ॥
কি করা যদি দেহমনে চায়,
তিন পুরুষের সংগ পেয়েও শেষে কেন হায়,
আজ আমি এই বয়সে বড় একা সংগীহীন ও অসহায়,
মানুষ কেনযে হয় এমন, বারবার কতযে তার ভূল হয়ে যায়,
মানুষ চেনা ও ভবের এ বাজারে আসল সওদা কেনা আসলেই বড় দায়,  
কোন সে মোহের নেশার টানে,
অভিজাত একজনেরে তার সাদর আহ্বানে,
আবার করিলাম বিয়ে গোপনে, যেন না লাগে ঘা কারো মানে,
বড় হয়ে যাওয়া ছেলেমেয়ে ও প্রতিবেশী আর স্বজন ঘরে বাহিরে কেউই যেন তা না জানে,
এই শর্তে রহিবে দুজন মিলিবে যখন চাহিবে মন, যে যার আপনা গোপনীয়তা আর আত্ব-মর্যাদার সুদূর অবস্থানে,
বিকৃত রুচি কুৎসিত আচরণ তার এই ষাটোর্ধ বছরে,
নহে সোহাগ পরশ আলিংগন হিংস্র পশুর মতন পিছন থেকে এসে ঝটিকা ঝাপটে ধরে,  
বোঁকারাম কি মজা পেলো শুধু পিছে,
রেখে এত রুপ-শোভা এত সুখ সামনে সে কিরে মিছে,
দারুণ কাতর হই আমি ঐ ঝড়ের কবলে পড়ে,
কত সে মাতাল জ্বালা আর উঞ্চ সুখের থইথই নালা দেখেনা ছুয়ে পড়েনা নজরে,
সব হারায় আজ অনুশোচনায় আমারে আহত করে,
রাতে বসে জায়নামাজে দোচোখ আমার বারবার জলে আসে ভরে,
আজ কেন শ্রদ্ধায় মরমের শির নত হয়ে যায় ক্ষমা পেতে চায় হায় ধরে দুটি পায় গিয়ে তার কবরে ॥


পর্ব - ০৪


এক মধুকর,
সে মায়ার যাদুকর,
আমার প্রথম প্রেমের প্রিয় বর,
ঐ মোখ ছিলযে আহারে কত নেশাময় সুন্দর,
কতনা সুখের গোলা ছিল তা সদা খোলা ছোট্ট ঐ কুড়ে ঘর,
কিছু না বুঝিতে জানিনা কেন পিছু নিয়েছিল মোর মহাভয়ংকর এক ঝড়,
আজ মনে পড়ে মনেহয়,
সেতো তার স্বেচ্ছায় পলায়ন নয়,
মোর মন বলে ওরে সে নহে ছিল কভু পলাতক,
যেটুকু তারে চিনেছিলাম মিথ্যা মন্দে সে হয়নি নিলাম ছিলনা প্রতারক,
হয়ত সে রাতে তারে খুন করে আহারে গুম করেছিল লাশ আমার স্বজনের একদল হিংস্র ঘাতক,
হয়নি সে ঘটনা আজওতো জানা রহস্যময় গল্প ফাঁস নহেরে অল্প এক বিস্ময় নির্মম ইতিহাস অতিশয় বেদনাদায়ক,
শত প্রশ্ন আহা কত কষ্ট কল্পনা হয় বারবার পথভ্রষ্ট, ঐ স্মৃতির উপরে গোপন ব্যাথার অশ্রু পড়ছে নিরবে ঝড়ে ॥
সে এক মহা কালরোগ,
কেমনে কবে তা কোথা হতে এসে হয়েছিল মোর দেহমনে যোগ,
তাইতো দেখা হলোনারে ভালো করে এ জীবনটারে, আর আসল স্বাদটুকু তার করা উপভোগ,
দেমাগে শিরা-উপশিরায়,
কে ঢুকিয়েছিল কে দায়ী আজ কে নেবে তার দায়,
যারে একবার পায় আপনি আপনার সংগী আর সুখ খুঁজে নেবার ঐ নেশায়,
অদেখা অচেনা এক রাক্ষস এসে বন্ধুর বেশে কাছে বসে সবটুকু সুখ তার শেষে হায় কেড়ে নিয়ে খায়,
কোন ভুলে কার লাগি এ জীবনটা হলো নষ্ট,
বাহিরে রাঙানো শত বাহারে অন্তরে অদেখায় আহারে জমানো কত কষ্ট,
পনরতে প্রেম চুরি করে বিয়ে ভরল তরী ভুল আর কুহেলিকা দিয়ে সুখের আশা হলোযে পথভ্রষ্ট,
এলোমেলো সব স্বপ্নগুলো কুড়িতেই সব ঝড়ে পড়লো কল্পনায় সাজানো কানন এ বুকের ভিতরে ॥
দেবো নাকি একটা মামলা করে,
পুলিশের জন্য হবে এক রহস্য মজার এত বছর পরে,
এদেশের পুলিশ,
কিযে দক্ষ চৌকষ অভিঞ্জ ও পটু ইস,
তারাযে বিশ্ব সেরা,
শুধু হয়ে আছে তাদের ব্যার্থতার বেড়া,
রাজনৈতিক চাপ ও প্রভাব আর কালো টাকার লোভ ও মোহে ঘেরা,
এ দুইয়ের বাহিরে যারা,
ওরে ভাই হেন কিছু নাই যা পারেনা তারা,
এসব কিছু্ই সত্য নয় শুধুই ধোকা ফাঁকি আর অভিনয় ভান ও ভনিতা ছাড়া,
আসামী খুঁজে পায়না,
মামলা লয়না তদন্তও শেষ হয়না,
সহজে সবকিছু করা যায়,
যদি তারা আসলেই তা করিতে চায়,
সব অপরাধী যেন ওরে তড়িৎ তার সঠিক সাজা পায়,
প্রাণ ভয়ে যেন সবে পংগুর মত বন্দি হয়ে থাকে পড়ে,
সবে চায় যূগযূগ তার আপন ঘরে, না আসে এ জীবনে আর কভূ বাহিরে, কলুষিত না করে এ সমাজটারে ॥