এ জগতে আসলে, কেউ ছিলনা তার ॥
বলব আজিকে অতী অল্প,
এমন এক অসম সাহসী বীরের গল্প,
আজীবন করেছে হাজার রণ নহে তা কাহিনী কল্প,
বিপুল সাফল্য বিজয় ও অর্জন সম্ভার ছিল ঐ সাহসী যোদ্ধার,
জীবন করেছে পার, না মেনে কোথাও কভূ কোন পরাজয় কিবা হার ॥
ছিল কত পেরেশানি তাড়না,
তবে ছিলনা কোন কষ্ট যাতনা ও বেদনা,
অনটন আর টানাপোড়নের মাঝেও এক মহা শান্তি সুখের সংসার ॥
তবু তার কভূ ছিলনা,
কোন হাহুতাশ কিবা ভাবনা,
চারিদিকে বাধা আর ঘের দেয়া সীমানা,
খুব ধীরে হেটে চলা, কম কথা বলা, হয় ধারনা,
সে যেন এমন এক নিরিহ গোবেচারা দিনেও যে রাতকানা,
তবু নেই ছিলনা তার, কোন লেশ শূন্যতা কিবা দীনতার হাহাকার ॥
একে একে চলে গেল বাবামা,
পিছে ফিরে কেউ আর কারো দিকে তাকালোনা,
যার যার স্বপ্ন আশার আলপনা, পাঁচ বোন ও ভাই ছিল তিনজন তার ॥
পৌছে গেল ধীরে ধীরে,
সবারে রাহু যেন ঝাপটে ধরিল ঘিরে,
মানূষের আত্বাটারে খেলো কামড়ে ছিড়ে,
ভাইবোন সবাই অনেক দূরে, মোহ আর স্বার্থের নিবিড় ভিরে,
ইচ্ছে ও সাধ্য মত, যে পারিল যত, পেলো সন্ধান যে যার লক্ষ্যটার ॥
নহে তেমন উল্লেখ,
জাগ্রত সচেতন উদার বিবেক,
এমন এক সাধারন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্ভ্রান্ত পরিবার ॥
তার শ্বশুর বাড়ী,
সবাই বলে নাকি মধুর হাড়ি,
যাওয়া যেতোনা হেথা খুব তাড়াতাড়ি,
পায়েচলা মেঠো পথে, ধূলিমাখা হয়ে একটু ঘেমে,
নৌকা রিক্সা কিবা ছোট লঞ্চে তারপর কিছুটা পথ হেটে, যেতে হতো নেমে,
কখনও গোমতীর পার, কখনও জমির আইল কিবা ঘেষে কোন গাঁয়ের ধার ॥
তার শ্বশুরের ছিল ঢের জোতজমি,
বলনে চালচলনে আহার বিহারে ছিলনা কোন কমি,
শানদার কাঁচারি আর, অঢেল বিত্তবেসাত ধন সম্ভার ॥
যত খালাখালু ও মামা চাচা,
শিখে ফেলেছে যেন সবাই কলকাতার আতিথেয়তা,
দেখেছি ব্যাস্ত সবাই যে যার মত ঐ সূত্রে, আপনার মান ও প্রাণটা বাঁচা,
ভাইকে বলে বোন, ওরে কথা শোন, একটু বোস, চারটে মোখে দিয়ে যা,
লাখো গল্প ও ঘটনা বহে প্রমান তার, এ জগতে আসলে কেউ নহে কার ॥
শালাশালী ভায়রা ও সম্মন্দি,
কারো সনে হয়নি এ জীবনে কোন মিতালী আঁতাত কিবা সন্ধি,
সবাই দোষ দেয় বলে এমন, সে নাকি ছিল কৃপন, স্বার্থপর ও আত্বকেন্দ্রিকতায় বন্দি,
তারা কি তার ভেদ জানে,
সে এমন ছিল বা হয়েছিল কোন কারনে,
পরিবেশ পরিস্থীতির বিরুপ চাপ ও প্রভাবের তাড়নে,
বদলে দেয় মানূষ কিবা তার মন ও আচড়ন, অভাব অনটনের দারুন ভার ॥
নূন আনতে যেন পান্তা ফুরায়,
টেনে আনতে গিয়ে যেন তা ছিড়ে যায়,
ছোট্ট চাদর তাই, মোখ ঢাকলে তা থাকেনা পায়,
এমনি কেটেছে দিন, কত অনাদায় দায় ও ঋন লয়ে মাথায়,
কত খেয়ে না খেয়ে,
এমনি একাকি নিরবে চলতে চেয়ে,
কাউকে কিছু না বলে কিবা কোনকিছু তার না জানিয়ে,
চলেছে থেমে থেমে বারবার বাধা পেয়ে পেয়ে, তবু হয়নি কারো চামচা চাটুকার, কভূ ধারেনি ধার ॥
আপন মনে সৃজনের কত ছবি এঁকেছে,
গতি হারিয়ে চমকে উঠে থমকে দাড়িয়ে থেকেছে,
আঁধারে পথ হারিয়ে দুহাত বাড়িয়ে আলোর প্রভূকে কত ডেকেছে,
শত সাধ বাসনা ও স্বপ্ন আশাগুলি পাথরে চাঁপা দিয়ে তারে বহুকাল ঢেকে রেখেছে,  
ভেংগেছে রথ,
সুদূর গন্তব্যের অচেনা মাঝ মরুপথ,
হয়নি হতাশ রয়নি বসে, ব্যাকূল বিফল মনোরথ,
হয়েছে মূখোমূখী যেন এক জনমদুঃখী কত দুঃসময় আর আপদের শিকার ॥
শত শত অচেনা গ্রাম,
দুচারটে ছাড়া জানিনা তার কোনটার কি নাম,
সবুজ শ্যামল,
খালের মধ্যে হাটু জল,
ধূয়া আর কুয়াশায় মিলে, বৃক্ষচূড়া হতে মাটিতে বিছানো পল্লী মায়ের আঁচল,
হাটিতে হাটিতে কত কি দেখিলাম, মায়াবী গ্রাম নদী বহে ভাটিতে কূলকূল টলমল ছলছল,
আকাশে সাদাকালো মেঘের ভেলা,
কত পাখপাখালী উড়ে উড়ে ডালে ডালে করছে খেলা,
গুদারা ঘাটের বটতলায় বসেছে হেমন্তের সাতরঙে রাঙানো মেলা,
ভাটির মাঝি বসে আছে ধরে নৌকার হাল,
বাড়ীর পথে চলছে হেটে গরু ছাগলের পাল,
বাঁশী হাতে তার সাথে সাথে হাটছে ক্লান্ত রাখাল,
আহা সারা মাঠ ভরে চোখ জুড়ানো হরেক রঙের ফসলের সে বাহার ॥
দূর্গম পথে,
অঁচল ভাংগা রথে,
কিবা একাকি পায়ে হেটে চলিতে,
ছাড়েনি কেউ অকপটে নিন্দা কিবা কটূ কথা বলিতে,
এতটুকু ছাড় দেয়নি কেউ,
বয়ে গেছে বেসামাল কত ঝড়বাদলের ঢেউ,
কমেনি ধকল, সাহস ও মনোবল কিবা বাড়িয়ে হাত সামান্য উদার সহযোগীতার ॥
দেখেছি সবাই শুধু পেতে আর নিতে চায়,
দাওয়াত দিলে সবাই মিলে, খোশগল্পে হট্টগোলে এসে খায়,
কিছু প্রতিদান দেবার কথা ভাবতেই যেন মাথাটা সবার ঘেমে যায়,
একথা সবাই আজ ভূলে গেছে হায়,
ছোটদের প্রতি বড়দেরও রয়েছে অনেক দায়,
মনেহয় ভয়ে মরে, যদি পরে আর সে টাকা ফেরৎ নাহি পায়,
তাই বুঝি দিতে চায়না, কেমনে দিবে কেউ কাউকে ধার, হেন মানষিকতা যার ॥
ছিল শত টানাটানি,
কত তাড়না ও পেরেসানি,
সংসারে যে সুখ থাকেনা তাও জানি,
মিথ্যে নয় এমনও হয়, এই বুঝি গেলো জাত হলো মানহানি,
তবু হয়নি ঋন,
যায়নি বিপথে কোনদিন,
বাড়ায়নি কখনও বাইরে পা সমাজ ও বিধির বিধান যত সীমিত সীমানার ॥
যেটুকু ছিল তাই,
ছিলনা বাম হাতের কামাই,
বাজারে অফিসে যেতো পায়েতে হাটি,
ষোলআনা তার যেন দুধে ধোয়া নিরেট খাটি,
নাইবা থাক তার মধু ঢেলে দেওয়া গরম দুধের বাটি,
মেঝেতে বসে খেতো ভাত ও পড়ত নামাজ বিছিয়ে বাঁশের চাটি,
সাধ বাসনা গুলিরে গলা টিপে ধরে কিবা ঝাড়– পেটা করে করত ছাটাই,
সুদ ঘূষ নাই, শান্তি সুখ আর তৃপ্তির বড়াই, একেবারে এমন হালাল রোজগার ॥
প্রতিদিন বারবার,
মোখবুজে করেছে হজম নানা দূর্ব্যাবহার,
হয়েছে অকাল মরন, কতনা রঙীন স্বপ্ন আশার,
মাঝেমাঝে হায় যেন ছিড়ে যেতে চায় সহনের লাগামটা তার,
আসিবেনা কি সুখ পাতার কুটিরে, হেরে যাবে কিরে সাফল্য বিজয় সততার ॥
মেধার মূল্যায়ন হয়না যেথা যখন,
হেথা চুপিসারে নিরবে আড়ালে শুনিতে পাই ভালোটার ক্রন্দন,
নেই যেখানে আলোর আলোড়ন, আলগা হয় রাজার সনে প্রজার গোপনে হওয়া সে নিবীড় বন্ধন,
আস্থা, ভালবাসা, নির্ভরতা ও নিরাপত্তার এক অলিখিত দেয়ানেয়ার চমৎকার অংগীকার ॥
দৃঢ় প্রত্যয় ও নিষ্ঠার,
নিশ্চয় হবে জয় স্বচ্ছতা, অধ্যবসায়, সততা ও সত্যবাদীতার,
কে বলেছে ভাল মানূষ নেই, তার কোন ঠাই কিবা দাম নেই,
হবেই হবে তাদের জয়, যারা বেশী সয়, মেনে লয় হেরে যায়না কিছুতেই,
বেঁকে যায় তবু ভাংগেনা, বিপদে পায়না ভয়, কারো কাছেই মানেনা কভূ হার ॥
সে ছিল কঠিন এমন,
আদর্শ ও সফল মানূষ একজন,
বড় বড় ঢেউ ও ঝড় ঝাপটা এসেছে যখন,
নিয়তির লিখন ভেবে, করেছে সে তা সদা আলিংগন,
অতী কাছ থেকে দেখা,
ঐ সফরে সে ছিল বড়ই অসহায় একা,
আত্বার আপন, পরম শ্রদ্ধাভাজন, অতিশয় প্রিয় বন্ধু আমার ॥
চার ছেলেমেয়ে তার,
কৃতি সন্তান এক দরিদ্র পিতার,
সরকারী প্রতিষ্ঠানে পাঠ সমাপন হয়েছে সবার,
যদিও নাই বাড়ীঘর, সবাই যেন পর, রঙের ভূবন তিমির পাথার,
আর হয়েছে সবাই তারা ডাক্তার, বিসিএস ক্যাডার, প্রফেসার ও ব্যাঙ্ক অফিসার ॥
ব্যায়ের তুলনায় উপার্জন ছিল অতী কম,
এমনি কেটেছে তার সংসার আজীবন হামেশা হরদম,
কত সুখ আরাম করে হারাম, অবিচল যুদ্ধ ও সংগ্রাম অনটন আর মহাকৃচ্ছতার ॥
কে বলে নাই, নিশ্চয়ই আছে,
আমি বহু দেখেছি, প্রমান পেয়েছি, শিখেছি মেলা তার কাছে,
নিদানেও মানূষ কেমনে আলোয় বাঁচে, অধীন হয়ে সত্য ভালো সবর ও সততার,
জীবনে কাহাকে বলে, কেমনে অটল চলে আর দুই ভূবনে রয়েছে কি ও কত তার শ্রেষ্ঠ মহান পূরস্কার ॥
আজব এ জগৎ সংসার,
হার জিত ও পাওয়া না পাওয়ার,
কারো চরন করে চূম্বন কোমল পাপড়িদল আর,
কারো লাগি পাঠ কারোবা চাট কারো বিশাল মাঠ মজার খেলার,  
দেখি আবার কারোবা অঠাই অথই জল, আজীবন শুধু হাবুডুবু আর প্রাণপন সাঁতার ॥
দেখেছি আমি করে তা যাচাই,
কারো হয়েছে বিজয় আর কারো নাহি তাই,
এমন মানূষ অগনন জীবনের এ হিসাবটা বুঝার সাধ্য নাই,
এমন ধন বলো কি লাভ কি প্রয়োজন কিবা তার দরকার,
করেনা যা দরিদ্র অসহায় স্বজনের বা সাধারনের সামান্য কল্যন ও উপকার ॥
আজীবন কত দেখেছি এমন,
বাপ দাদায় রেখে যায়, অজস্র বিত্তধন,
শেষে উত্তরাধিকারী হয়ে এসে করে ভোগ বিনোদন,  
উল্লাসে উড়ায়, কাকে-বকে খায়, একদিন ধ্বসে পড়ে যায় ঐ ধনের পাহাড় ॥
চলে কি জীবন তার করুনা বিনা,
হলেও অতী সাধারন বেশভূষন ও খানাপিনা,
বিধাতা দেয়না ফিরায়, কারেওতো কভূ করেনি করেনা মানা,
যার এ বিশ্ব ভূবন লালন পালন দায় ক্ষমতা ও অধিকার ষোলআনা মালিকানা,
তার গোলামের লাগি, রহে সদা জাগি, চীর খোলা রয় তার করুনার সকল দুয়ার ॥