মনে পড়ে সেই কবে, হয়েছিল আমার প্রিয়ার বিয়ে ॥
সবাই তারা ঢাকায় থাকে,
তার মা কত বিনয়ে আমার মাকে বুবু বলে ডাকে,
সেই সুবাদে তার বাবা মা,
হতো আমার পরম শ্রদ্ধার খালু খালাম্মা,
একদা যারা, আমার পাঠানো ঘটকেরে দিয়েছিল ঘর হতে বের করে তাড়িয়ে ॥
সেদিন সে এলে মোর এই ঘরে,
কাটিত জীবন ডুব সাঁতারে, নানা অনটনে পড়ে,
তার সে অযতন অনাদরে হায় দেখে দেখে আমিওযে কষ্ট পেতাম,
কঠিন বাস্তবতার কাছে ভালবাসার হতো হার, আর তার কাছে মোর কমে যেতো দাম,
আজ বুঝি, কত ভাল করেছিল সেদিন তার বাবামায়, আমার সংগে তারে বিয়ে না দিয়ে ॥
রঙিন আলোর ঝলমলে এক হেমন্ত রাতে,
বিয়ে হয়েছিল মোর মন বধূঁয়ার, এক ধনীর দুলালের সাথে,
দামী বাড়ীগাড়ী প্রচুর নগদ আর, নানা লাভজনক কারবার, ছিলযে তার হাতে,
জড়ির লালশাড়ী পরিয়ে আর গা ভরা সোনাদানায় নিয়েছিল বউটারে তার রানী সাজিয়ে ॥
দূরন্ত দুটি লাল ঘোড়ায়,
বরকনের গাড়ীটারে টগবগিয়ে টেনে নিয়ে যায়,
পিছনে বিরাট সজ্জিত বাদক দল,
সবাই ব্যাস্ত সদাই ছিল সবল ও সদর্প চঞ্চল,
আড়ালে লুকিয়ে ছিলেম তাকিয়ে, পথঘাট এলাকা মাতিয়ে তুমুল ঢাকঢোল ঘন্টা বাঁশরী ও কাশর বাজিয়ে ॥
আমার সে সুখের বাসনা ও স্বপ্ন সাধ,
সেদিন মোরে দিয়েছিল কত কষ্ট আঘাত আর অপবাদ,
এত পেয়েও আজও এ জীবনে, বুকেতে লুকানো তারে না পাওয়ার সে শূন্যতার বিষাদ,
সাধ্য যে আমার ছিলনা,
সবাই শেষে দিয়েছিল করে মানা,
ছিলনা তার কভূ কোন ভোগবিলাস বায়না,
মোর দীনতা ও অক্ষমতা ছিলযে তাদের সবার জানা,
ঐ কাপুরুষ আমায় লয়ে, অচিন দেশে পালিয়ে কেনযে গেলনা,
তাই অপবাদের ছলে, নানা কটূ কথা বলে, আজও দিতে চায় মোরে যাতনা,  
ক্ষোভে ও রোশে আজও সে মোরে দোষে, দিয়ে গোপন হানা, কেন সে মোরে এসে চিলের মত কেড়ে নিয়ে গেলোনা,
ছিল অনেক স্বপ্ন আশার সযতন জালবোনা,
মোর কোন ভাষা ছিলনা, তারে বুঝানোর মত মম সে বেদনা,
মম অক্ষমতা ও দীনতা মোরে শুধু কষ্ট আর অপবাদ ছাড়া আর কিছুতো দিলোনা,
অলীক সুখের সাজানো ভূবন আমার, সহসা ঘিরিল আঁধার, গিয়েছিল চিতাখলার বিজন নিঝুম গহীনে হারিয়ে ॥
জানি আজ নেই কোন মোর দাম,
নাহয় পারিনি হতে আমি তার প্রিয় সাম,
আমিতো ওরে শুধু তার সুখমান ই চেয়েছিলাম,
তাই অনেক কষ্ট পেলেও সেদিন আমি খুউব খুশীই হয়েছিলাম,
মোহ ও আবেগের ঝড়ে,
তারে জোড় করে এনে ধরে,
একটা অভাবের ঘরে কেমনে ওরে আমি তার নায্য পাওনা দাম কিবা সুখ দিতাম,
হয়ত শেষে আমি ছোট হয়ে যেতাম,
হেন এক আসামী অপরাধী নেই যার কোন দাম,
শেষে আমি কি করিতাম, যদি তারে সুখ দিতে না ই পারিতাম,
প্রতিটা কথায় কাজে শুধু ভয়ে আর লাজে ছোট হয়ে থেকে আমি বারবার হারিতাম,
তার সুখের যেন কোন ব্যাঘাত না ঘটে,
নতূন বউয়ের প্রেম ছিল, একথাও যেন কভূ না রটে,
তা হতে ওতো পারে বটে,
তাই আমি না ক্ষেপে একটুও না চটে,
আবেগ ও রোশে বিনাদোষে এ সমাজে কতকিছু ঘটে,
আমার সুখের হয় হোক নিলাম, তার ঐ নব জীবন পটে, কষ্টের কালিমা না মাখিয়ে,
ইচ্ছে করেই তাই গিয়ে অনেক দূরে, চোরের মতই ভাই আমি চুরি করে, বহুদিন ছিলাম পালিয়ে ॥
একদা এক আশা এক মন ছিল দুজনার,
দুইয়ের মাঝে শেষে লক্ষ মাইলের গজাল বিশাল পাহাড়,
কাটিল বহুদিন,
দিনেদিনে বাড়িল প্রেমের ঋন,
দেখা নেই, কথা হয়না,
কেউ জানেনা কারও খোঁজ বা ঠিকানা,
কেজানে তাতে কার বেশী দেনা, কেবা রলো পানা,
কি আছে কার মনে, আজও বুঝি সে প্রেমের ওরে মরন হলোনা,
একজনের নাবলা অদেখা অপার দুঃখ আর দুঃখ,
আর একজনের গা হতে যেন সদা খুশবো ছড়ায়,
হাটিতে রাঙাপায় কে যেন নূপুর বাজায় আর মাটিতে আলতা ভরায়.
বিনুনি আর ঝলমলে বসন বেয়ে পড়ছে গড়ায় রুপ আর বুকভরা উপচে পড়া সুখ,
রঙে ভরেছে চারদিক, আমোদ আর বেড়ানোর হিড়িক, ভরপূর কানায়কানা গিয়েছে তার সীমানা ছাড়িয়ে ॥
আজিকে তো নেই আর,
সেদিনের সেই তাড়না ও জোয়ার,
হয়েছেতো যার যেমন অজানা সুখ-দুখের সংসার,
কারো কাছে, আরকি আছে, নতূন কিছু ওরে চাওয়া পাওয়ার,
তবু কেন কড়া নজরদারি, আমি তা বুঝিতে নারি, আজও এত বিধিনিষেধ উপরে তার,
যদি তার ফল হয় ভয়ংকর,
সুপ্ত বাসনার জ্বালা দ্বিগুনে বেড়ে গিয়ে পূনঃ উঠে ঝড়,
মরমে আগুন জ্বালায় আর পূরনো বাসনার পিয়াস হয় দূর্নিবার,
যদি চুপিসারে মনের মন্দিরে,
মনের মানূষ ছায়া হয়ে আজও ঘুরেফিরে,
যখনই সময় পায়, শুধু আসে আর যায়,
চোখের নিরব ভাষায় কি যেন কহে আর চায়,
কোন সে আশায় গোপনে বসে পথ চায় নিভূনিভূ্ তার ঐ প্রেমের প্রদীপখানা জ্বালিয়ে ॥
হামেশা বেলা অবেলায়,
কোন সে মায়া যাদুর নেশায়,
সকল কথায় কাজে মনের কোনায়,
আজও যতনে সংগোপনে মালা গেঁথে যায়,
তারে না পাওয়ার বেদনায়, লয়ে তার কথাগুলি আর, ঐ সে ভালবাসার স্মৃতিগুলি আদরে দুহাত ভরে তুলে নিয়ে ॥
আমার পোষা ময়না,
গা ভরা তার ঝলমলে গয়না,
জানিনা কোন ক্ষোভে অভিমানে আজও সে কথা কয়না,
অনেক কষ্ট মনে, তাই মনের বনে গোপনে তার আনাগোনা,
মোর জানতে ইচ্ছে করে সুখের প্রাসাদে থেকেও কিরে সে সুখ পেলোনা,
বসন্ত নেই, ভাটা পড়েছে ফাগুনে, তাই কিরে পায়না দেহমনে কোমল সে সান্তনা,
জাগ্রত মোর তোলপাড় করা কষ্টগুলিরে, কেউ যদি এসে ঝাটা মেরে তাড়িয়ে শেষে দিত ঘূম পাড়িয়ে ॥  
ঐ বিয়ে আর ঐ সুখ সম্ভার,
তা ছিল আমার পক্ষ থেকে জন্য তার,
পরম সেরা এক মহান অমর পরোক্ষ উপহার,  
আমার ঐ বিষাদ ভরা বিসর্জন,
আমারে করেছে জুদা, চোখ ও মনের ক্ষুধা করেনি পূরণ,
জীবন আমার হয়েছে এক তরুহীন বিজন মরু,
কেউ কেউ ভাবে ও বলে, আমি নাকি ছিলেম এক মূর্খ বোঁকা গাধা ও গরু,
আমার সব সুখ স্বপ্ন আশার হয়েছে মরন, তাকে হারিয়ে সে বিষাদ বেদনা গিয়েছে সিন্ধুর সীমানা ছাড়িয়ে ॥
আমিতো এক হতভাগা অপরাধী,
জানিনা তবু কেন, কোন দায়ে মোরে আজও সে রেখেছে বাঁধি,
মোর কোন অভিযোগ নাই,
ধন্য হবো যদি আমি তার ক্ষমাটুকু পাই,
আমিতো ভূলিতেও চাই, তবু তারে ভোলা যায়না, কারে কবো সে বেদনা, স্মৃতি হতে কেন সে যায়না হারিয়ে ॥
হদ্দ বোঁকা আর অবুঝ এই মন,
সবইতো ফাঁকি সবইতো শেষ, কি আর বাঁকী রয়েছে এখন,
তবে কোন আশাতে, সেকি শুধু লোক হাসাতে, তার পথচেয়ে সে রলো আজীবন,
সে কি তবে তার অন্ধ অবুঝ সরল ভালবাসা ফিরে পাবার একটু ক্ষিন আশা শূন্য দুহাত শূন্যে বাড়িয়ে ॥
অমৃত প্রেম, বুঝি তাই কিছু চায়,
নাহলে কেন আশা দেয় আহত ভালবাসায়,
ভাবের জগতে হায় ডুবে রয় যেন সে নিজেরে হারায়,
অনতিদুরে ঐ বুঝি সেই প্রিয় মোখ সে দেখিতে পায়,
আর তাতেই বুঝি তার হৃদয় জুড়ায়, নাহলে কেন সে বারবার হায়,
জানিনা কোন আশায় নাকি সব হারানোর হতাশায়,
আজও কেন হায় ধূ ধূ ধূসর প্রান্তহীন মরু বালুকায়,
এক অবুঝ হিয়া কুহেলিকায় বুক বাধিয়া গোধূলী বেলায়,
অসীম দিগন্তে অপলক তাকিয়ে যেন আজও কার লাগি রয়েছে ঠায় দাড়িয়ে ॥