প্রসংগ - কবি সঞ্জয় কর্মকার এর ০৮/০৪/২০১৮ ইং তারিখে প্রকাশিত  “প্রশ্ন” শীর্ষক বক্তব্যের আলোচনা


কবি সঞ্জয় কর্মকার এর উপরোক্ত “প্রশ্ন” শীর্ষক বক্তব্যের প্রশ্ন বা জানার বিষয় ছিল সাহিত্য কাকে বলে বা সাহিত্যের সংগা কি ? কবি বা কবিতার সংগা নহে । সে যাই হোক, সাহিত্য কাকে বলে বা সাহিত্যের সংগা কি তা বিশ্লেষন করতে গেলে হয়ত কবি বা কবিতার সংগাও কিছুটা এসেই যাবে । সুবিঞ্জ কবিগন (কবি সঞ্জয় কর্মকার, কবি মোনায়েম সাহিত্য, কবি কবীর হুমায়ুন ও কবি খলিলুর রহমান) এর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদেরই প্রাসংগিক বক্তব্যের সূত্র ধরে এ প্রসংগে সামান্য বাড়তি কিছু যোগ করে বিষয়টিকে আরও খোলসা করতে চাই ।


জীবনই সাহিত্য, সাহিত্যই জীবন। অন্য কথায়, কবিতাই সাহিত্য আর সাহিত্য ই কবিতা। তাই জীবন, সাহিত্য ও কবিতা এই তিনের সম্মিলনেই যেন একই বৃন্তে ফুটেছে একটি ফুল - রং, শোভা ও সৌরভে যার এসেছে পরিপূর্ণতা ।  


কাগজে লিখিত বা মূদ্রিত জীবনের সবকিছুই অর্থাৎ যে পাঠ বা যাহা জীবনকে অন্তরিন্দ্রিয় ও মনন সমৃদ্ধভাবে বিকশিত ও সুন্দর করতে সাহায্য করে তাহাই সাহিত্য । সাহিত্যের অনেক শাখা যেমন - কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, সংগীত, নাটক, ইতিহাস, উপন্যাস ও র্ধমীয় পাঠ ইত্যাদি । জীবনের জন্য অত্যাবশ্যকীয় যে শিক্ষা ও ঞ্জান সমূহ যাহা মানুষ পঠনের মাধ্যমে তার ইন্দ্রিয় সমূহ যেমন চক্ষু, র্কণ এবং মন, মনন, দেমাগ ও আত্মার দ্বারা পূঁথিগত বিদ্যা তথা মূদ্রিত কাগজ সমূহ (এবং বিশাল প্রকৃতি ও অদৃশ্যমান আধ্যাত্মিক জগত) থেকে সংগ্রহ বা লাভ করে থাকে তাহাই সাহিত্য । যারা পড়তে জানেনা তাদের জন্য চক্ষু, র্কণ (দরশন ও শ্রবণ) এবং মন, মনন, গবেষন, দেমাগ ও আত্মার দ্বারা সাহিত্যের নেয়ামত এর কল্যাণ ও মংগলটুকুর স্বাদ আস্বাদন লাভ হতে পারে বা হয়ে থাকে ।    


বিশদ ভাবে বলতে গেলে, যে লেখনী বা পাঠ ও ভাব প্রকাশের অন্য সকল মাধ্যম সমূহ যাহা ১) জীবনের গল্প বলে র্অথাৎ কাগজে কলমে জীবনের সহস্র রুপের ছবি আঁকে, ২) প্রকৃতির শত রঙ ফুটিয়ে তোলে, ৩) কোটি মানুষের মনের না বলা কথা বলে, ৪) আলো ও ভালোর কথা তথা কল্যাণ ও মংগলের মূল্যবান বাণী, পাঠ ও র্বাতা শোনায়, ৪) স্রষ্টা ও তার বেশুমার সৃষ্টির কথা বলে তথা এ দুইয়ের সংগে/মাঝে নিবিড় পরিচয়, যোগাযোগ ও বন্ধন ঘটিয়ে দেয়, ৫) অসার ও অচেতন আত্মার জাগড়ন ঘটায়, ৬) বুজে থাকা/অকেজো তৃতীয় নয়নটি খুলে দেয় র্অথাৎ কানাকে পথ দেখায়, ৭) অন্ধকারে আলো ছড়ায় যেন সবাই পথের ময়লা, কর্দমা, আর্বজনা, কন্টক, গর্ত ও খানাখন্দ তথা আপদগুলি দেখতে পায়, ৮) দিকহারা পথিক ও কাফেলাকে দেয় দিকের দরশন অর্থাৎ অসংখ্য পথের মধ্যে সঠিক অর্থাৎ সহজ, সরল ও মসৃন পথটিকে নির্দেশ করে দেয় এবং ৯) মানুষকে প্রকৃত অর্থাৎ আসল ও আর্দশ মানুষ হবার এমন যোগ্যতা দান করে ঠিক যেমনটি বিধাতায় চায় এ সবের সমষ্টিগত সাবলীল ও কারুময় শিল্প বা প্রকাশনাই সাহিত্য ।


সংক্ষিপ্ত ও ইংগিতময় কিছু কথার সমন্বয়ে শুধু দুচার দশ পংতী বা স্তবক এর একটি লেখা হলেই তা কবিতা হয়ে যায় কিনা বা কোন লেখা বড় হয়ে গেলে শুধু এই দোষেই তা কাব্য থেকে খারিজ হয়ে যায় কিনা তা আমার জানা নেই । তবে এটুকু জানি, শুধু রোমান্স (প্রেম, বিচ্ছেদ ও বিরহ) ইতো জীবন নহে । এটি জীবনের বহু অবস্থার একটি মাত্র । রোমান্স-সেতো পূর্নাংগ মানুষ হবার আগের মানুষের জীবনের অল্প কিছু সময়ের একটি বিশেষ আবেগ বা অবস্থা মাত্র । সবাই জীবনের ঐ অল্প একটু সময়ের একটি মাত্র বিষয় নিয়ে কাব্য রচনা করলে তবে বাকী জীবনের ছবিগুলো আঁকবে কে ? কৈশোর, তারুণ্য ও বার্ধক্যের গল্প কই । দমগুলি হিসেব করলেতো জীবন অনেক বড়, তবে কি জীবনের অজানা সেই কোটি ঘটনার গল্প অব্যাক্ত বা অজানাই থেকে যাবে ? তাই আসুন না, কবির চোখ, মন ও কলমের বিচরণ ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করি আর সবে মিলে সঠিক ধারনার জীবনটাকে ফুটিয়ে তুলি।


সবার জন্য সুস্থ্য ও সুন্দর দীর্ঘায়ু কামনায় ------- ধন্যবাদান্তে,


আবু হক মুসাফির