ভূমিকা - এটি একটি কবিতায় ছোটগল্প । একেবারে পূরোটাই কল্পিত সৃজন এর এক সুদীর্ঘ মধুর স্বপ্ন । জীবন থেকে নেওয়া অর্থাৎ তৃতীয় নয়নে দেখা একটি জীবন দরশন মূলক কবিতা । বিচিত্র রঙে সাজানো এ বিশ্ব জগত এবং জীবনের এক অসীম অপার শাশ্বত ও সার্বজনীন রুপ এর কলম-চিত্র যা হয়তোবা সকলের দৃষ্টিতে একই রকম না’ও হতে পারে । হয়তো কারো কাছে তা তেমন ভালো না’ও লাগতে পারে, আবার কারো কাছে লাগতেও পারে দারুণ চমৎকার, তাই তা যাচাইয়ের সুযোগটা না হারিয়ে একবার পড়ুন ।
ওরে ভাই কাব্যের পরিসর বা আকার দেখেই ক্লান্ত কিবা ক্ষান্ত হয়ে যাবেন না যেন । কাগজে-কলমে অংকিত বৈচিত্রময় জীবনের পাঁচমিশালী গল্প-চিত্র একটু বড়তো হবেই । পঞ্চরসের জীবনের গল্পের স্বাদ পেতে হলে একটু সময়তো দিতেই হবে । একবার আমার বড় কবিতা পাঠ করেই দেখুননা - হয়তো কখনও তা মনেই হবেনা বিরক্তিকর বা সময়ের অপচয় । বরং তারপর কি হলো, লেখকের আর কি বক্তব্য এলো কিবা আরও কি জানার বাকী রয়ে গেলো ঠিক এমনই একটা প্রবল জানার অন্বেষায় হয়তো আপনাকে টেনে নিয়ে যেতেও পারে তার প্রান্ত অবধি । কিছু পেতে হলে ভাই কিছু দিতেই হয় - এ প্রথাতো চিরন্তন বিনিময় ।
অনেক সময় দিয়ে লেখক যা লিখেছেন তাতে একটু সময় দিয়ে হয়ত আপনি পেতেও পারেন এমন কিছু মূল্যবান পাঠ যা নহে বিজন বিরান তৃণহীন মাঠ বরং যেথা ছড়ানো এমন কিছু সোনালী বাণী যা হয়ত রাখবে ধরে কেউ যেন না যায় কর্দমাক্ত ড্রেনে কিবা গভীর কুয়ায় পড়ে, অধিকন্তু আলো ও ভালোয় তাদের আনবে টানি । একবার তা পরখ করতে গিয়ে একটু নাহয় ঠকলেনই তাতে কিইবা এমন আসে যায় । ক্ষুদ্র এক টুকরো রতনের আশায় কতজনে ইতো বিশাল ছাইয়ের টাল ঘাটে আর তা উড়িয়ে দেখে । আপনিও নাহয় কৌতুহল বশতঃ কিবা অনুসন্ধিৎসু হয়েই সেই প্রত্যাশায়ই দুচারটা ছাইয়ের টাল একটু ঘেটে দেখলেন ।


পর্ব - ০১


কিছু অলীক,
কিছুবা হয় সঠিক,
মরুভূমে মরীচিকা চিকচিক,
কুহেলিকায় পেরেশান হয়ে যায় কত মুসাফির পথিক,
কেউ ঠিকানা পায়, হন্নে হয়ে পিছনে ছুটে পড়ে চক্রবাকে কেউবা হারায় দিক,
কিছু নিদ্রায় কিছু জাগরণে, স্বপ্ন দেখার লগ্ন ভাংগার সুখ-দুঃখের মিশ্রণে কাটে এ জীবন ।
সুখ কারে কয় তা দেখতে কেমন,
বিদ্যা রুপ বিত্তধন জৌলুস ও ভোগবিনোদন,
কোন বাজারে কি দামে আহারে কে বলিতে পারে তা হয় বিপণন,
কি প্রয়োজন, এত প্রভাব প্রতিপত্তি বিলাস বৈভব ও রাজ সিংহাসন ।
কেউ ধন,
ক্ষমতার আসন,
কেউ জন কেউবা মন,
এসো জানি কার কিসে মোহ কিবা পছন্দ কে কি ভিতরে ভিতরে করে অন্বেষণ ।
কে কি চায়, কার কিবা নাই,
সেইতো সম্বল ও সবচেয়ে বড় ধন ভাই,
শূন্য অসার, ওরে তবু কেনযে করে তারা বড়র বড়াই,
সৎ ও বিচক্ষণ যেবা সেইতো বিদ্যান-জ্ঞানী, ঐ মানুষইতো হওয়া চাই,  
তাহলে আবু হকে বলে, যাই হোক অনটন সময় হলে, ওরে নিশ্চয় মিলে যাবেই তাই,
তার দাম কত আর তা কোথা পাওয়া যায়, কেবা সুজন ও জীবনের লাগি কেমন সংগী প্রয়োজন ।
পড়ে জীবনের চক্রবাকে বিষম ফান্দে,
কেউ সুখ সুখ করে অন্তরে অন্তরে নিরবে গোপনে কান্দে,
নাই মাথা গোঁজার ঠাই, কারো চালডাল হাড়ি চুলো নেই মজা করে একবেলা রান্ধে,
কেউ ভাবে চুপচাপ পালিয়ে যাবে, কোটি কোটি টাকা থুই দিয়ে বিসর্জন, নিরুদ্দেশে স্বেচ্ছা নির্বাসন ।
চলুন একটু দেখে আসি,
আমরা সবাই কেমন ভালোবাসি,
যার যে অবস্থানে যদিও কষ্ট-বিষাদ রাশিরাশি,
কষ্ট দুঃখ ছেড়ে যাবেনা এই বুক, রবে আমরণ পাশাপাশি,
তবু একটুখানি সুখ ভরায় শূন্য এ বুক, যাদুর পরশে জড়ায় আসি একটু হাসি,
ছোট্ট হলেও কে কি বলে, কত রুপ আর কত রঙ-শোভা তার, একটু জানি কারেইবা কয় জীবন ।
চক্ষু মুছে কান্না ফেলে,
অতীতটারে দুহাতে ধরে তারে পেছনে দিয়ে ঠেলে,
আর কিছুতো চাওয়ার নাই, একটু সুখ, একটু সম্মান ও একটু ভালবাসা পেলে,
গোপনে খুঁজে বেড়াই,
কোথা গেলে ওরে কেমনে তারে পাই,
অবহেলা নাই, মেঘের ভেলায় ভেসে স্বপনের বেলুন উড়াই,
যেই বুক ও কোল যেন হরষের দোলনায় খাওয়া দোল, নিজেরে হারাই আর সব ভুলে যাই,
রয়েছে যেথা নিরাপদ ঠাই, হোক আর কিছু নাই, শুধু ভাল মানুষ খাটি বন্ধু চাই আমি একজন ।  


পর্ব - ০২


নতুন এক জায়গা,
বুকভরা দম যেন অন্যরকম সে ভালোলাগা,
উঁকি দেওয়া ছাড়া কেমনে ছুতে পারা, ঐ চাঁদ ছুয়েছে যেন বাঁশঝাড়ের আগা,
রুপালী রুপে চকচকায়,
পূবের বিলেই প্রচুর পাওয়া যায়,
ডুলা ভরে কিনে ওরে নিতে ঘরে মন চায়,
এখনই ধরে আনা তা সবারই জানা ঐ তাজা মাছগুলি হায়,
দেখে চোখ জুড়ায়, লাফালাফি করে বারবার মাটিতে যায় পড়ে, বিছানো জেলের ডালায়,
ফের জলে ফিরে যেতে চায়, কাটারি চাপিলা ভাটা বাচা টেংরা পাবদা মেনী খলসে মলা দিয়ে বড়বড় ভাগা,
অভিনব সে এমনই এক সফর,
আপন হতে কতক্ষণ যদিও জগতের সবাই পর,
বাংলার গ্রামগুলো কত সুন্দর, নতুন পরিবেশ ও হাসিভরা নতুন মোখের অচেনা সব লোকজন ।
কাঠালিয়া নদীর ওপার,
উপজেলা শহর, লাগোয়া গ্রাম নামটি তার,
শহর থেকে হবে ত্রিশ/চল্লিশ কিলোমিটার, নহে বেশী দূর,
চিলমারি পুলিশ ফাড়ির নিকটেই নয়নাভিরাম ঐ বসতি ”শান্তিপুর”,
জোয়ারের জলে ধোয়া, নিরিবিলি সবুজের সমারোহে যেন আসলেই ভরপূর,
যাত্রা শুরু ঢাকা থেকে,
সবুজের সমারোহ দেখে দেখে,
এক অচিন গ্রামে বেড়াতে চলেছি ফুরফুরে উড়োউড়ো মন, আজ আমরা শুধু তিনজন ।
একজন বন্ধু ও একজন ছোটভাই,
দুজনেরই গাড়ীবাড়ী সবই আছে, শুধু আমারই কিছু নাই,
একজন ঠিকাদার ও পদস্থ কর্মকর্তা অন্যজন, বিত্তধনে অনেক বড় তারা সবাই,
মানুষটি ঐ এমনই একজন,
যার আছে মন, ছিল আছে সাধ তবে নাই শুধু ধন,
সাগরের মত অতল গহীন এবং উদার ও অসীম ঐ নীল আকাশের মতন,
নাই সঞ্চয় সম্বল নাই ঋন, শূন্য তার বিশাল আপন জগত ভুবন, একেবারে বিরান বিজন ।
কেজানে তা কতটুকু ঠিক,
কেউ বলে কবি সাহিত্যিক,
মস্তবড় লেখক গবেষক ও দার্শনিক,
কেউ নাই বন্ধু প্রিয়জন,
শুধু কাগজ-কলম লিখন ও বিরচন,
তবুও রুচিশীল গম্ভীর,
ছোট্ট মাথায় তার অগনিত ভাবনার ভির,
দিগন্তে প্রসারিত তৃতীয় নয়ন, ভেদ করে ছুটে পাহাড় প্রাচীর,
প্রশান্ত সৌখীন, নাই কোন দায়-ঋন, সাদামাটা সম্ভ্রান্ত সাদাসিধে ও ছিল সে অতি সাধারণ ।


পর্ব - ০৩


নতুন স্বাদের এক আনন্দময় সফর,
পুড়ে যায় ও ভাংগে অজানায় কত শান্তি-সুখের ঘর,
ধুয়েমুছে ঐ ছাইয়ের টালের উপর,
বাধিতে আবার ঘর ব্যস্ত সবাই থেমে গেলে ঝড়,
আপনজনা পর হয়ে যায়, আবার আপনও হয় কত অচেনা পর,
কয়জনে পায় কিবা রাখে তার খবর,
ঢল প্লাবন আপদ ও নিদান আসে একটা আরেকটার পর,
কোথাও কাশবন, শোভিত রঙীন কুসুম কানন, বায়ু শনশন কোথাও ধূসর মরু-বালুচর,
সহস্র রুপে, সোনার খাঁচায় ও আঁধার কুপে, অযুত রঙে দেখেছে যেবা এ জীব-জগত ও জীবন ।
এমনি করেইতো কত ঘটনা ঘটে,
মানুষের এ জীবনটা আসলে আজবই বটে,
সত্যের পরিচয়ে কত মিথ্যা, কুৎসা, কলংক রটনা রটে,
অভিনব ও অচেনা যেন হয় মনে, তবুও এক মহিয়সী রমণীর সনে হয়েছিল প্রিয় কথোপকথন ।
সকাল দশটা/এগারটায় যাবো,
যাবো আমি একা, আর কিছু নয় শুধুই চা খাবো,
যে বিজ্ঞাপনটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়,
কত অজানা খবর আর এভাবেইতো হয় শত শুভ জানা পরিচয়,
বলেছিলাম মাফ করবেন করে বিনয়,
কিছু জরুরী কাজে দুপুরের আগেই ঢাকা ফিরতে হবে নিশ্চয়,
বিধাতার ইচ্ছাতে যেথা সবকিছু হয়,
হেথা আমি তা কি করে বলবো বলুন ওহে মহাশয়,
এখনও যার হলোনা আগমন,
সে কেমনে ভাবে, আবার ফিরে যাবে কখন,
তা দেখা যাবে পরে আসবেন যখন আগেতো সাহেব হোক পদার্পন, তারা দুজনে কথা হয়েছিল এমন ।
দিয়েছিলাম উনাকে বলে,
কোন একটা আধুনিক শপিং মলে,
দুজন সংগী নিয়ে দয়া করে আসবেন চলে,
দেখা হবে কথা হবে, আমরা সবাই মিলে কফি খাওয়ার ছলে,
দুজনে দুজনারে মেনে নেওয়ার ভাব, তাই বুঝি সসম্মানে ঐ প্রস্তাব দুজনেই সানন্দে করিলো গ্রহণ ।
আহারে যানজটে পড়ে,
মেজাজটা যেন মোর গেলো বিগড়ে,
মাথাটা ধরেছে, হিসাবটা এখন আমি মিলাই কি করে,
তাইতো হয়নি ওরে মিষ্টি কেনা,
এখন ভেস্তে গেল শপিংমলে দেখা করার পরিকল্পনা,
বুঝি প্রথমেই আমি ছোট হয়ে গেলাম, কেমনে রহিবে দাম, যদিরে এখনই হলেম দেনা,
এসিতে বসেও যেন ঘামছিলাম, ভেবে পাচ্ছিলাম না কি আমার করা উচিৎ আর কি আমি করব এখন ।


পর্ব - ০৪


ভদ্রমহিলা উনার ছবি দিয়েছিলো,
খুব সুন্দর, ছবি দেখে তাকে লেগেছিল ভালো,
আমার ছবি চাহিলে বললাম, দেখুন আমি দেখতে কালো,
তবে কথা দিতে পারি, এ বিষয়ে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন, আমি মানুষ ভালো,
যদি অবিশ্বাস না করেন ভাই,
এ মনটা ছাড়া আমার আর দেবার মতন কিছুই নাই,
বানিজ্য বসতি ও ক্ষেতি-চাষ,
এক নগন্য দাসের তবে এ কোন বাসনা বিলাস,
আলো ও ভালোর বেঁচাকেনা বিতরণ করিতে বিশ্বজুড়ে বেড়ায় ঘুরে বারোমাস,
না হয় মরণ যতদিন কিবা শোধ ঐ মহারাজার ঋন, আজীবন যদিরে পায় সে মনের মত সংগী একজন ।  
কি আমি করবো তখন,
ভেবে পেরেশান যদিগো হয় এমন,
আমি ছবি দেই আমার, আর তাতেই যত ঘটে অঘটন,
শেষে যদিরে তার স্বপ্ন আশা প্রিয় সাধ ও সাধনার নাহয় আর কভু সাধন,
তা দেখে আমাকে পছন্দ নাহয় আপনার, খারাপ হয়ে যায় স্বপ্নে দেখা আমার কল্পনার রাণী সাহেবার মন ।
তখন তাহলে কি হবে,  
কত কথা আপনাকে আমাকে বলবে সবে,
একটু পথ চাওয়া আর, তারপরে পাওয়ার প্রতীক্ষাটা শেষ হবে যবে,
না হতেই শুরু অভিসার ও অনুরাগ,
আপনি ও আমার দেনাপানার হিসাবটার কেমনে করি ভাগ,
অ ভাই এই বুড়োকালের বিয়ে,
সেকিরে অপবাদ অপরাধ বদনাম, তবে তা ঘুচিব কি দিয়ে,
নেই কোন দোষ কিবা পাপ,
বেহাল জমাট কষ্টগুলির ঐ চাপ ও পরিতাপ,
যদিরে যায় ভুলি নতুন দুয়ার খুলি একটু সুখের প্রলেপ দেয় মুড়িয়ে,
মহারাজার সনে করা অলিখিত ভুলে যাওয়া অংগীকার, যদিগো বিফলতার মাঝপথে তার হয়গো সমাপন ।
আপনাকে আমি চিনবো কেমন করে,
যদি একজনকে ধরতে গিয়ে আরেকজনকে ফেলি ধরে,
নেভীব্ল স্যুট, সাদা চেক শার্ট, মেরুন টাই ও কালো জুতো আসবো আমি পড়ে,
চোখে এসএস চশমা, হাতে একটা ছোট কালোব্যাগ থাকে মোর সব ছোট সফরে,
সুন্নতি বাবরী কোকরানো ঝাকড়া সাদা-কালো চুল ও সাদা দাড়ি সারা মোখ ভরে,
হয়েছে হয়েছে থাক আর,
দিতে হবেনা আমাকে পরিচয় তার,
আমি আপনাকে চিনি ও দেখেছি অনেকবার, ভুল হবেনা চিনে নিতে, তাই হবেনা দিতে আর সে বিবরণ ।


পর্ব - ০৫


এবার বলুন কি রঙের শাড়ী,
আমি যেন আপনাকে সহসা সহজে চিনিতে পারি,
দেখে আপনার ঐ চমৎকার বাহার,
নীড়হারা পাখীটা যদি খুঁজে পায় ঠিকানাটা তার,
পড়বো আমি সিল্কের প্রিন্ট শাড়ী লাল পার মেরুন কালার,
টুকটুকে দুটি গাল,
ঠোটে মাখানো ঐ সে লাল,
ছোট্ট একটা টিপ রাঙাবে লক্ষ্ণী কপাল,
বিভোর চোখ দুটি মোর যেন ফিরাতে কভু না পারি আর,
বাঁকা চোখেতে কাজল আঁকা চাই, মনে থাকে যেন নজর না লাগে অন্য কার,
নহে কারো আর শুধু আপনি আমার, হতে চাই হতে পারি যেন দুজনে দুজনার চিরবন্ধু আপন ও প্রিয়জন ।
কিহবে তাহলে ওরে, যদি আমি দেরীতে খুঁজে পাই,
আর শেষে তর না সয়ে রুপসীর বেশে আপনাকে দেখেও ফেলি জ্ঞান হারাই,
দুজনে যেন পাই ঐ শুভক্ষণ,
শুভকাজে এসে ওরে, শুনিতে চাহেনা মন,
হেরিব দুজনে ভরিয়া নয়ন,
শুভদৃষ্টিতে গহীনে মেতে শুধু দুজনার চাঁদ বদন,
বলে রাখি সাহেব, মোটেও প্রত্যাশা নহে মোর কোন অলক্ষুণে বচন,  
তামাসা বা মজা করার ছলে,
মিনতি ভরে একথা আমি আপনারে রাখি বলে,
চাই শুধু সে বারতা শত সৃজনে যেথা ধন্য প্রসন্ন বিকশিত পুলকিত মুখরিত হয় ব্যথিত তৃষিত জীবন ।  
সংগত ও অনিবার্য্য কারণে,
নহে ছল, কুট-কৌশল, মিথ্যা কিবা গোপনে,
ষাটোর্ধ একজন সুবোধ সুজন সুফি সাধক লেখক ও দার্শনিক এর ১ম স্ত্রীর বর্তমানে,  
পাত্র ও তার এক এতিম পালক পুত্রের জীবনে,
সবদিক সত্য সঠিক ও একেবারে মানবিক বিবেচনা ও মূল্যায়নে,
দত্তক নেওয়া তিন বছর বয়সের শিশুর দায় নিতে কোন দ্বিধা-সংকোচ নেই যে মনে,
করিতে মনে বাসনা, লুকানো হার না মানা, অসহায় জনে সেবা উপকার গিয়ে তাদের ঘরে ঘরে গোপনে,
আকাশের মত উদার ও গহীন অতল সাগরের মতন,  
রয়েছে যেমনই সাধ তেমনই সাধ্য আর বিশাল একটা কোমল ও দয়ালু মন,
ত্রিশোর্ধ এমন শিক্ষিতা, নামাজী, সুদর্শনা, বিধবা/তালাকপ্রাপ্তা নিঃসন্তান/বন্ধা একজন পাত্রী প্রয়োজন ।
মতের অমিল, তর্কবিতর্ক ও মনোমালিন্য,
মনের জগতে অ-নে-ক দূরত্ব, বাহিরে নাই তার কোন চিহ্ন,
মনের ভুবনে যতনে সাজানো সুখের মনের ঘর,
ঘরের চাল বেড়া ও জানালা দুয়ার সবই এখনও রয়েছে সুন্দর,
নেই সঠিক ধারণা তা বলাও যায়না, এত আপন হয়েও তারা এখন কত পর,
বুঝি কারো নেই জানা কেউ বলিতে পারেনা ভেংগেছে সে ঘরখানা কবে এসে কোন সে ঝড়,  
দেখেছি জীবনে বুঝিনা তা কেমনে হয়,
যুগ যুগ ধরে এক ঘরেতে বসত করে তবু কেনরে কেউ কারো নয়,
মা হয়ে যেন করেছে রাজ্য জয়, আর কিছুতে না হলে শেষে নিশ্চয়, চোখের জলে হবে তার সকল সাধন ।


পর্ব - ০৬


এক ছাদের তলে এক ঘরেরই বাসিন্দা,
তারা দুজনেই যেন মনেহয় জিয়নে মরা দুটি লাশ একেবারে জিন্দা,
প্রথম স্ত্রীর সংগে হয়নি আজও তার সম্পর্ক ছিন্ন,
বাক বিনিময় কিবা খুব কম কথা হয়, আজ বহুদিন হয়েছে দুজনার বিছানাও ভিন্ন ।
সে কি খুলে বলা যায়,
স্বামী তার অধিকার বলেইতো পায়,
চোখ ও শ্রবণ নাবলা ভাষায় সংগীর কাছে কতকিছু চায়,
গহীন রাতের ঘুমভাংগা ঘড়,
মন যদি চায় উঞ্চ মধুর কোমল পরশ এ দেহটার উপর,
কিসের বন্ধু যদিরে সংগীরে ঠকায়,
নিশ্চয় ওরে কিছু কথা আছে বিবেকের ঘরে, সবে যাকে বলে দায় ।
কেন এত দূর্লভ শ্রদ্ধা ভক্তি ও বিনয়,
কিছুটা সোহাগ সহযোগিতা বা সহমর্মীতা মান্যতা ও ভয়,
আস্থাহীন নাই কোন নির্ভরতা ঋন সোহাগ দরদ তা কেমনে প্রেম হয়,
বন্ধু বলে কি বয়সে বড় হয়েও গুরুজন কিবা অভিভাবক হবার যোগ্য সে ওরে নয়,  
বুঝি তাই সে কিছু পেতে চায়, বাসনার ক্ষুধা পূরায়, ঐ প্রয়োজন কি দোষের যা চাহে এই দেহমন ।  
নিগৃহীত, অবহেলা ও অবজ্ঞার পাত্র,
ইচ্ছামত সব করে, আমি কি তাই কেমনে সহে তা গাত্র,
কোন কথা শোনেনা,
মতামত নেয়না অনুমতি চায়না,
কেবলই মোরে শিখাতে ও জ্ঞান দিতে চায় আমি যেন তার অবাধ্য এক ছাত্র ।
হতে পারে কোন অপরাধ ভুল,
কে মেনে লবে নিজেরে কলাগাছ কিবা কাঠের পুতুল,
জীবন মানেতো দুজনে মিলে এক আর,
মধুর দেওয়া নেওয়া দুজনার ভালবাসার এক সুন্দর ও সুসম উপহার,
ক্ষুধা ও পিপাসার বিনিময়, কে করিবে তা অস্বীকার এ দুটি নয়ন ও দেহমনের চাহিদা যার
প্রয়োজন হয় যখন ।
উগ্র এক স্বেচ্ছাচারি,
কখনওবা বদমেজাজি ও অত্যাচারি,
রহিবে একজন আর, অন্যজনে ছেড়ে যাবে বাড়ী,
কেনযে এমন যেন সারাক্ষণ, হাতে রহে তার ঝাটা,
কত হেন বাড়াবাড়ি, ক্রোধ তেজ চোপা ও মেজাজের ছাটা,
হায় যেন তার সারা গায় লেপে দিয়েছে কেবা শুকনো মরিচের বাটা,  
কথা যেন কথা নয়, হুকুমজারি করছে চাবুক মারি হেন তীক্ষ্ণ এক বর্শার কাঁটা ।
আমি কি তার কামলা,
নাকি পোষ্য আর সে বড় আমলা,
কি অপরাধ, হয়েছে কোন সে গোপন ঝামেলা,
অবজ্ঞা ও অবহেলা,
কত ভাল লাগে ওরে খেলতে সে খেলা,
এই আক্ষেপ ও কষ্টে ঐ স্বামী বেচারার কাটে প্রতিদিন সারাবেলা,
নিরব বিবাদী অপরাধি আসামী শুধু একজন, করে মাকে সমর্থন ছেলেমেয়েরা এসে সালিসি দরবার বসে যখন ।


পর্ব - ০৭


ঠিক করেছি এবার তাই,
শুনেছি বোবার নাকি কোন শত্রু নাই,
তাই যেন তার শেষ নাই হেন বাহাদুরি ও বড়াই,
চিৎকার চেঁচামেচি না করে তাই আর ঠিক এমনই প্রশান্ত হতে চাই,
তবুও, যদিও অপবাদ আর কথার বাণের দূর্ব্যবহার আমি বরাবরই তার কাছে হেরে যাই ।  
এক ঘরে এক ছাদের তলে,
বলোনা ওরে এভাবে কতদিন কেমনে চলে,
এক খাঁচাতে, কেমনে বলোনা হয় বসবাস বাঘে আর ছাগলে,
মন ও মানের প্রাণ বাঁচাতে হলে,
ওরে সে তাই করিবে যা ঐ বেচারার মনটা বলে,
মেঘেতে ভেসে নাহয় অবশেষে যাব পালিয়ে নিরুদ্দেশে যদিরে স্বপ্ন ফলে,
যদি বাসনাগুলি পায় সতেজ সবল প্রাণ করিব দুইহাতে দান ও সেবা উপকার জীবন যাদের ঘামের জলে ।
হতে স্বাধীন ও স্বনির্ভর,
কাউকে করে আপন হয় হোক কেউ পর,
বালুচরে বাঁধিব নাহয় আমি ছোট্ট একটা সুখের পাতার ঘর,
ভেবে কি হবে আর জয়-পরাজয় এ জীবনতো সুখ দুঃক্ষময় কখনও বসন্ত কখনও ঝড় ।
বড় আক্ষেপ করে সে বলে,
বড় একা ভাই, কেউ নাকি নাই তার দলে,
সব ছেলেমেয়েরা একত্র হলে,
তাদের মায়ের চোখের জলে আবেগের ঢলে, তারা সবে যায় গলে ।
বাবা তাদের হায়,
বড়ই কোনঠাসা ও অসহায়,
আর কত সহ্য হয়, কেউ যেন কারো নয়, যেন এমন দুই মেরুতে তারা দুইজন ।
বুঝিনা কি করি কোথা যাই,
কেমনে বা কোথা গেলে নিরব ও বিজন একটু সুখ পাই,
রক্ত-মাংসের মানুষ একজন,
রয়েছে যার ভিজামাটির একটা মন,
বাহিরে ভিতরে ওরে তিনটি সদা খোলা নয়ন,
ঐ শিশু এতিম ছেলেটি বুঝি হয়েছিল তার বাড়তি কারণ,
একদিন পত্রিকায় গেলো, ছাপা হলো ঐ একখানা করুণ ও অসহায় বিজ্ঞাপণ ।
তার ইচ্ছে মত একদা পালিয়ে গিয়ে,
যুবতী মা তার স্বামীর মরণে করেছিল আবার একটা বিয়ে,
দুবছরের শিশু ছেলেটিরে তার, একমাত্র খাবার আহারে মায়ের স্তন্যপান ছাড়িয়ে,
ছেলেটিরে তার বুড়ো দাদীর কাছে রেখে দিয়ে,
একদা হঠাৎ বাপের বাড়ীর নামে ওরে, গিয়েছিল ঐ মা ইচ্ছে করে চিরতরে হারিয়ে ।
এক নব জীবন,
দারুণ সে পিয়াস ও সম্মোহন,
নতুন স্বামী আহা কতযে দামী গড়ে ইতিহাস হয়ে অনন্য উদাহরণ, জনমের তরে তারে করে বিসর্জন ।
কাঙ্খিত নয়, কারো পরকিয়া প্রেম,
যৌন অপরাধের সে এক অতি আধুনিক রঙ মাখানো ফ্রেম,
কোন ক্রোধে অভিমানে, প্রতিশোধ নাকি নেশার বানে, খেলছে কতজনে গোপন মজার গেম ।


পর্ব - ০৮

শোনে অবাক হলাম,
কিছুটা দুঃক্ষও আমি তাতে পেলাম,
রসিক জনে এক নষ্টপ্রেমের দিয়েছে কি সুন্দর নাম,
সবার জীবনেই চাই একজন ভাল বন্ধু ও প্রিয় সাম,
আসলে ভাই,
যার কোন বিকল্প নাই,
বড় প্রয়োজন চাই ই চাই, এ দেহমনটার একটুখানি সুখ ও আরাম,
দুধের স্বাদ ঘোলে না মিটিয়ে,  
অবৈধ যৌনতার চেয়ে হাজার ভালো ওরে বিয়ে,
যেথা রয়েছে ঢের বিনোদন পুলক প্রশান্তি, শিহরণ সুখ-শান্তি আনন্দ-আরাম পুণ্য ও সুনাম,
আজব এ জগত ও জীবন,
মানেনা কানুন আছে এমন কিছু প্রয়োজন,
কজনে পারে, অনেকেই হারে করিতে জয় ঐ ত্যাগ ও সহন,
তাই ঐ মা ও শিশু দুজনের তরে, সমবেদনায় মোর গেলো মন ভরে, আমিও তাদেরে করিলাম সমর্থন ।
সব ইন্দ্রিয় ও রিপুগুলি,
হাত ও পায়ের সকল শিকল ও বাঁধন খুলি,
অধিকার ও প্রিয় বাসনাগুলি তার রেখে দিয়ে শিকায় তুলি,
কেমনে উপেক্ষা করি, হাত-পা চক্ষু বাধি ক্ষেপে উঠা সাধগুলি বলে কেমনে তা থাকি ভুলি,
দোষ কি যদিরে কাজ করে খাই,
সে কিরে খোটা, তার বিনিময়ে প্রিয় দোসর হয়ে একটু সুখ যদি পাই,
ভালবাসার প্রতিদানে ভালবাসা আর,
সুখের প্রতিদানে দিয়ে সে অংগীকার,
দুজনে দুজনারে দুহাতে ঝাপটে ধরে শূন্য এ বুক ভরে রহিব জড়াই,
ঝাপটে ধরে আমাকে, সদা জড়িয়ে থাকে ও করে দুঃসহ জ্বালাতন, মরমের একজন সংগী বিনা হয়কি জীবন ।
একটু সুখের ঠাই,
সম্মান ও ভালবাসার চাই,
যার নাই, এমন কেউ যদি চাহে তাই,
নহে কোন বাড়তি বিনোদন,
জীবনের লাগি হয় যদি কিছু জরুরী প্রয়োজন,
দূরন্তপনায় আমারে হারাতে চায়, সে যে আকুল করিতে হায় অহরহ সারাক্ষণ, গড়িতে একটা নতুন ভুবন ।
হাড়েহাড়ে বুঝিলাম আমি তাই,
স্ত্রী ও সন্তান সবইতো আমার আছে শুধু একজন প্রিয় বন্ধু নাই,
বন্দি সাধগুলি মোর,
কেবলই ভাংগিতে চাহে লৌহ দ্বোর,
এক পিপাসার জগতে না পাওয়ার হতাশার করজোর,  
বলিতে তাদেরে হয়েছে ওরে নিশি ভোর,
এই ভেবে নহে আমি কোন অপরাধী, এক বিষাদি প্রতিবাদি নহে বিবেকের চোর ।


পর্ব - ০৯


নিজের একটা ভুবন,
একটু সুখ ও হরষের কিছু বিনোদন,
একটু সাহস ও কিছুটা বলের যোগান বলছে দিবে মন,  
সকল নাইয়ের কষ্ট ও সাধ্যের দীনতাগুলি যেন ওরে আমি ভুলে যাই, করিতে জমাট প্রেম কারেও নিবেদন ।  
মনের মত মানুষ একজন,
গহীনে গবেষণ আর দূরে দরশন,
বড় প্রয়োজন, রয়েছে যার একটা খাটি মন,
আসল কিবা ভালো মানুষ, ফুটেছে যার তৃতীয় নয়ন,
সুমনন, সুবচন ও ভালো কাজ বা সৃজন বাসনার আকুল সাধনার সাধন,  
সে কিরে অপরাধ গড়া আপন ভিন্ন জগত, একটা আলাদা নতুন জীবন, দোষ কি বাধা নেই চাহিলে মন ।
যাওনা করো গিয়ে,
তবে তুমিও নাহয় আরেকটা বিয়ে,
পোতানো আতশবাজি পুড়ে আর ভাংগা ঢোল বাজিয়ে,
নেই বাধা রয়েছে বিধান, বিবি চারজন,
করিতে সবার ভরণ-পোষণ সাধ্য সামর্থ্য বা উপার্জন,
একেবারে পক্ষপাতহীন ও সুবিচারি যার নয়ন মানষিকতা ও উদার মন,
যদিগো রহে সুস্থ্য দেহ, রহে অখুশী নহে কেহ, হয়ে এমন মহৎ ও সৎ মানুষ সবার প্রিয়জন,
দেখিব তোমার কত শক্তি ও দাম, আমিও নাহয় অনুমতি দিলাম, কে রুধিবে কে করেছে তোমারে বারণ ।
তারপর,
সুন্দর ও অসুন্দর,
শোভন অশোভন ও অতি বিরক্তিকর,
হেন মজা করা কিবা তামাসা ভরা গালেতে যেন মারছে চড়,
লয়ে যারা মানুষের জীবন,
তথা জীবনের স্বাভাবিক সমস্যা ও প্রয়োজন,
বুঝিলাম ফের এটা তারই জের, পত্রিকায় দেয়া মোর ঐ বিজ্ঞাপন,
নিন্দুক হয়ে ও সেগুলি লয়ে উপহাস করে মেনে নিলাম ধরে হয়তোবা তারাই ওরে শিক্ষিত ইতর,  
তিক্ত আচরণ, আজব ও উদ্ভট ব্যবহার ও বচনের এলো কত ফোন, তবু হলো এ নিয়ে নানাজনে কথোপকথন ।
ঐ সবার মধ্যে সেরা মুখরা ও উছলা,
ভদ্র, বিনম্র, মার্জিত ও অতিশয় ধীর ও গম্ভীর কম কথা বলা,
না দেখে আমার ঐ সব ও সবার মাঝে উত্তম পছন্দের ছিল ছদ্দনামের ঐ মহিলা–শকুন্তলা,
হবে দেখা ও কথা, ভালোকরে চেনাজানা,
সুখের পিয়াসি, না পাওয়ার কষ্টে উদাসী ও স্বপ্নের জালবোনা,
সুরেলা কন্ঠ মিষ্টভাষী, বেশী বলতে দেওয়া ও ধর্য্য ধরে পরম শ্রদ্ধাভরে সব কথা শোনা,
আমিও অবশেষে আর, না করে পারিনি গ্রহণ তার, টেলিফোনে করেছিলো যে মোরে চা পানের আমন্ত্রণ ।
সদয় ও কোমল মন, মানবতা ও দান,
অসহায় দীনজনের সেবা, উপকার ও সমাজকল্যাণ,
কিবা সেবামূলক পুণ্যময় কোন ব্যবসায়ে যদি হতে চান কেহ নিবেদিত প্রাণ,
মরাদেহ যেন পেলো জান,
স্বতঃস্ফর্ত ও স্বপ্রণোদিত এমনই মহান,
লিখে পাঠালো মোরে যখন তার বিশদ জীবন বৃত্তান্তখান,
এই প্রথম মানুষ হবার দাম, নতুন এক জীবন হাতে পেলাম, আজিকে হলো যেন মোর সাধনার সাধন ।


পর্ব - ১০


আমার কি আছে কি নাই ও বিত্তবেসাত ধন,
বললাম – জানতে চাইবেন না কে আমি ও মানুষ কেমন,
বয়স, লেখাপড়া, পেশা বা জীবিকা এবং সমস্যা বা চাহিদা ও প্রয়োজন,
সবার কি সবকিছু হয়, থাকে কিবা পায়,
কেউ ধন, কেউবা ভাল মন ও বন্ধু সুজন খুঁজে বেড়ায়,
দান করেন তারে বিধাতায় যারে যখন যেমন তার ইচ্ছে কিবা মন চায়,
কে বড় কে ছোট, কে সুখী কে দুঃখী কার বেশী দায়-ঋন, বলাটা বড়ই কঠিন মাটির এ দুনিয়ায়,  
পড়ে জীবনের চমকিত ভেলকি ফাঁদে,
আহারে সুখ সুখ করে কতজনে ওরে গোপনে গুমরে কাঁদে,
কারেও না বলিতে কিবা না বুঝাতে পারে, চোখে জল নেই বুক ফেটে যায় বিষাদে,
কারো আছে ঢের যেন পূরো এক সের, কারো মোটেও নাই, বড়ই রহস্যময় এক মজার বিষয় ভাই মানুষের এ জীবন ।
বলল না, আমি সবই জানি,
নাইবা জানি বিশ্বাসে ভাগ্যটারে নিতে চাইযে মানি,
অনেক দেখেছি অনেক শিখেছি,
ধনের পাহাড়, বিদ্যা ও রুপের বাহার, কি দিয়েছে কি পেয়েছি,
বড় জাতের বড়াই,
চাওয়া পাওয়ার কোন মোহ নাই,
কোন দাবী নাই, এখন আমি শুধু পেতে চাই,
একটা মাটির মন ও নিরেট খাটি ভাল মানুষ একজন,
আমার বাবারতো রয়েছে কোটি কোটি টাকা ও অনেক বিত্তধন,
সুখ দিতে যদি নাইবা পারে, শুধু হারায় ও হারে, তবে তার কি প্রয়োজন,
কি নেই আমার, বিদ্যা, গুন ও রুপ-বাহার কি মূল্য আছে তার, শুধু হাহাকার ভরা এ জীবন,
কই কি লাভ হলো বরং সব কেড়ে নিল, বিদ্যা রুপ ও ধনতো ছিল যেমন আমার স্বামীরও তেমন,
বিস্তারিত জানা যাবে, ফোনালাপে ও সাক্ষাতে যখন সময় পাবে, যদি সম্মতি কিবা সুযোগ হয় যার যখন ।
অতি নগন্য আমি ভাই,
ধন্য হবো যদিগো আপনার মন পাই,
ভাবছি এখন বাদশাহী ঐ ফুলের মূল্য আমি কেমনে যোগাই,
সবার তরে সাজাতে সুন্দর জীবনের ছক,
শর্ত একটাই পাত্রী তথা তার পরিবার বিত্তশালী ব্যবসায়ী হওয়া আবশ্যক,
জীবনে তারাই জিতে বহুদূর যায় ও বেশী পায়, যারা বেশী সয় ও মেনে লয় একটুখানি কষ্ট ও ঠক,
ধনের চেয়েও বেশী বড় বেশী দামী মন,
ক্ষেত্র বিশেষে যদিরে হয় তাই প্রয়োজন,
পাত্র রয়েছেন মেনে নিতে স্বেচ্ছায় সম্মত,
পাত্রীর জীবনের অনভিপ্রেত ঘটনা কিবা সমস্যা যত,
আগের সংসারের সন্তানাদির অভিভাবকত্ব কিবা পিতৃত্বের সব দায়-দায়িত্বভারও বাধা নেই করিতে গ্রহণ ।  
দেখছি, আর কোন উপায় নাই,
আমি বিব্রত বোধ করি ও চঞ্চল হই এবং কষ্টও পাই,
কি করি এখন, কি করা যায় ভাবছি বসে তাই,
যানজটে আটকা পড়ে ফেরীঘাটেই এগারোটা বেজে গেলো ভাই,
আরও সকালে কেন রওনা হলাম না, নিজের উপরেই রাগটা গিয়ে মোর শেষে পড়লো গড়াই ।


পর্ব - ১১


সামনে এখনও একঘন্টার পথ,
করছে আমাকে নাজেহাল, পেরেশান ও বিফল মনোরথ,
বড়ই হতাশ ও বিব্রত হয়ে উঠে আমার মন,
কারেও কথা দিয়ে কথা রাখতে না পারা আর, যথা সময়ে বিশেষ কাজগুলো আমার ওরে
হয়না করা যখন ।
শকুন্তলাকে ফোন দিলাম - - - - -
হ্যালো, আচ্ছালামু আলাইকুম,
ওয়া আলাইকুমুচ্ছালাম । হ্যালো কুন্তলা – সাফির বলছি – কেমন আছেন ।
জ্বি ভালো আছি ।
কুন্তলা - I’m Sorry, আমি কথা রাখতে পারলাম না ।
কেন কি হয়েছে, এ কি বলছেন এখন, মাঝ দরিয়ায় তরী ডুবাতে চান ।
না, ঠিক তা নয় । আমরা ফেরীঘাটে যানজটে আটকা পড়ে আছি, আরও ঠিত কতক্ষণ লাগবে তা জানিনা ।
It’s OK, No Problem, It’s not a matter of worry, so please cool down. যানজটের কাছেতো আমরা সবাই অসহায়, আর এ ব্যাপারে আমাদের কারোইতো কিছুই করার নেই । তাই আমরা হার মানতে বাধ্য । যে প্রোগ্রামটা হয়েছিল শপিংমলে তা আর এখন হলোনা, এই যা । তা আর এমন বড় সমস্যা কি, কোন অসুবিধা নেই । কি হয়েছে, আপনারা সবাই সরাসরি আমাদের বাড়ী চলে আসবেন । আমি আব্বা-আম্মাকে সব বলে রেখেছি । তাছাড়া হিজলতলা বাজারে আপনাদেরকে রিসিভ করতে ও এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য আমাদের লোকজন অপেক্ষায় থাকবে ।
OK, Thank you very much, আমাকে আপনি বাঁচালেন, কুন্তলা । কুন্তলা – খালাম্মাকে আমার সালাম জানাবেন । আর এইযে, প্রোগ্রামটা ঠিক রাখা গেলোনা, আমাদের অনেক দেরী হয়ে গেলো এবং আপনাদেরকে অনেক বাড়তি ঝামেলায় ফেলে দিলাম এজন্য খালাম্মাকে আমার পক্ষ থেকে বিশেষ Sorry জানাবেন ।
কি এত সরি সরি করছেন সেই কখন থেকে ।
না, আমার খুব Guilty & Shame Feeling হচ্ছেতো তাই বলছিলাম ।
না, সাহেব আমি আপনার খালাম্মাকে Sorry জানাতে বা পৌছাতে পারবোনা তবে সালাম ঠিকই পৌছে দেবো । আপনার Sorry নাহয় আপনি নিজেই উনাকে বলবেন ।  
আরে কি বলেন, এটা কিসের সমস্যা বা কিসের ঝামেলা, আপনি মিছেই ভাবছেন । বরং ভালোইতো হলো, মেহমানদেরকে চারটা ডালভাত খাওয়াবার সুযোগটা পেয়ে গেলাম । এ উছিলায় হয়তোবা একটু বাড়ুতি সময় ধরে গল্প করারও সুযোগ হয়ে যেতে পারে । তাছাড়া মেহমানের জন্য সামাণ্য কিছু করতে পারা সেতো বাড়ীওয়ালার জন্য এক পরম সৌভাগ্য ।    
তাই বুঝি,
হ্যা তাই,
এটা জেনে খুউব খুশী হলাম ।
ধন্যবাদ, এবার তাহলে রাখি,
ঠিক আছে রাখুন,
দুপুরের একটু আগে আমরা পৌছলাম হিজলতলায়, দেখি একখানা গাড়ী ও কয়েকজন মধ্যবয়সী ভদ্রলোক আমাদের অপেক্ষায়, আমাদের গাড়ী বাজারে থামতেই তারা কাছে এগিয়ে এলো, তারপর শুভেচ্ছা বিনিময়, করমর্দন ও জানা পরিচয় হলো । তারপর আমি বললাম, প্লীজ আমাকে একটু হেলপ করা যাবে, আমাদের প্রোগ্রামটাতো হয়েছিল শপিংমলে আর তা এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যেন আমরা বিকেলের আগেই ঢাকা ফিরে যেতে পারি, তাই ঢাকা থেকে আর মিষ্টি আনা হয়নি । এ বাজারে বড় কোন মিষ্টির দোকান আছে কি । নাহলে পথিমধ্যে কোন ভালো মিষ্টির দোকানে একটু দাড়াতে হবে । সরি ভাই, এদিকে কোন ভালো মিষ্টির দোকান নেই, আছে আমাদের বাড়ী ফেলে আরও দুকিলোমিটার দূরে অর্থাৎ এখান থেকে তিনকিলোমিটার দূরে সেই সদরে ।  


পর্ব - ১২


বাড়ীতে পৌছেই দেখলাম তাদের সবকিছুতেই একটা বিশেষ ধনাট্যের ছাপ আর কত ভাড়াটে লোকজন ও তাবেদার । তিনজন মাত্র মেহমানের জন্য তাদের পরিবার ও স্বজন মিলে অন্ততঃ দশজন যেন পেরেশান ও এন্তেজার । সে এক অবিশ্বাস্য এলাহী কারবার । মরহুম খান বাহাদুর আবু রায়হান সাহেবের বাড়ী । উনারই প্রপৌত্র জনাব চৌধুরী আবু কায়সার সাহেবই শকুন্তলার আব্বা, বর্তমান পৌর মেয়র । এ বাড়ীতে রয়েছে অনেক শিল্পপতি, বানিজ্যপতি, ক্রোরপতি ও একাধিক মিনিষ্টার । এখন তারা আর ঐ খান বাহাদুর উপাধি খুব একটা ব্যবহার করেন না ।  
পিচঢালাই করা বাড়ীর নিজস্ব রাস্তা আর এ রাস্তার পাশেই সুদৃশ্য ফটক ও প্রাচীর ঘেরা কুন্তলাদের বিশাল বাড়ী । ফটকের ভিতরে ঢুকতেই সুদৃশ্য বিশাল ফুল বাগান, তারই মাঝেমাঝে বড় বড় নানান ফলের গাছ । কদবেল, সবেদা, জামরুল, আমড়া, লেবু, করমজা, পেয়ারা, কামরাঙা, জাম্বুরা, আমলকি কমলা, আম আরও কতকি । ডানপাশের ফাঁকা জায়গায় দাড়ানো তিনখানা গাড়ী । বিশাল জায়গা জুড়ে দোতলা বৈঠকখানা, নীচতলায় দুপাশে বাথরুম সহ তিনটি করে ছয়টি কামড়া মধ্যখানে একপাশে হলঘর ও অন্যপাশে বিশ চেয়ারের দুখানা ডাইনিং টেবিল ও ৩/৪ সেট দামী সোফা ও গালিচায় মোড়ানো পরিপাটি ও মনোরমভাবে সাজানো ড্রয়িং রোম । উপর তলায়ও আরও বড় একটা হলঘর ও নীচতলার মতই দুপাশে ছখানা অতিথি কামড়া । আস্তানার পূরো কাঠামোর গঠন ও তার আয়োজন এমনই রাজকীয় বা সম্ভ্রান্ত যা দেখে বিস্মিত না হয়ে থাকার কোন উপায়ই নেই ।  
অতি তড়িঘড়ি প্রথমেই ৩/৪ রকমের সুদৃশ্য পরিবেশনে এলো কোল্ড ড্রিংস বা শীতল পানীয় । এত মহা আয়োজন আমার মোটেও ভালো লাগছিলোনা । এমনতো কথা ছিলনা, আমি তাই বেশ কৌতুহল ও রীতিমত অস্বস্তি বোধ করছিলাম । তারপর পরিচিতি পর্ব, শুভেচ্ছা বিনিময় ও আলাপ চারিতার খোসগল্প চলছিল ।
এরমধ্যে আমি ২/৩ বারই কুন্তলাকে ফোন দিয়েছিলাম, তার ফোন বন্ধ । ভীষণভাবে ভাবছিলাম, একটু সুখের ঠাই ও কিছু সাধ পূরণের লোভ করে কোন গোলক ধাঁধার চক্করে পড়ে গেলামনাতো । ইশারায় কুন্তলার সবার ছোট ভাই রিফাতকে কাছে ডাকলাম । ওকে নিয়ে বাইরে চলে গেলাম । রিফাত এবার ঢাকা ইউনিভারসিটি থেকে সদ্য এমবিএ করে বের হয়েছে । তার বড় দুভাইয়ের একজন বিসিএস ক্যাডার এগ্রিকারচারিষ্ট ও আর অন্যজন সিএসই । তাদের দুজনেই এখন খুব ভালো চাকুরী করছেন । বিয়ের বয়স হওয়া সত্ব্যেও তাদের বুবুর কষ্ট দূর না হওয়ায় বা দূর না হওয়া পর্যন্ত কেউই বিয়ে করছেন না ।
কুন্তলা ই সবার বড়, ওর ছোট (১ভাই+১বোন+২ভাই) তিনভাই ও একবোন । কুন্তলাকে ওরা সবাই পরম ভক্তি, শ্রদ্ধা ও বিনয়ের সংগে মান্য করে এবং বুবু বলে সম্বোধন করে । কুন্তলা তার বাবামায়ের অতিব আদরের । পৈত্রিক মেলা ধন-সম্পদ থাকার পরও কুন্তলার জন্মের পর থেকেই নাকি তার বাবার ব্যবসায় অপ্রত্যাশিতভাবে প্রচুর লাভ ও তার ব্যাপক প্রসার হচ্ছিল এবং ধন-সম্পদও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল ।
মেধাবী কুন্তলা লোক প্রশাসন বিষয়ে ঢাকা ইউনিভারসিটি থেকে ২০০০ইং সালে অনার্স সহ মাষ্টরস ডিগ্রী অর্জন করেন । এমএ পাশ করার পর তার বাবা স্থানীয় এক বিত্তশালী সম্ভ্রান্ত পরিবারে তাকে বিয়ে দেন । তার স্বামী ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করা একজন এমবিবিএস ডাক্তার । তবে সে কোনদিনই একজন রোগীরও চিকিৎসা কিবা একজন মানুষেরও কোন সেবা করেননি । বিদ্যা ও বিত্তের বাইরে সে তেমন ভালো মানুষও ছিলেন না ।
স্ত্রী, সন্তান ও সংসার, ভালো কোন কাজ করা কিবা উপার্জন কোন কিছুতেই ছিলনা তার মন । বন্ধু-বান্ধব, মদ্যপানের আসর ও তাস-জুয়া খেলা এসবই ছিল তার জীবন । কোনদিন আমি তাকে কোন নামাজ পড়তে দেখিনি । জুম্মার নামাজ, শব ই মেরাজ, শব ই বরাত, শব ই কদর, তারাবিহ এমনকি কোন জানাজার নামাজ পর্যন্ত আমি তাকে পড়তে দেখিনি । স্বজন কিবা এলাকার কোন মানুষের সংগেও ছিলনা তার তেমন কোন যোগাযোগ । রাত বারোটার আগে কোনদিনই সে ঘরে ফিরতোনা বা ফিরেনি । তারপর ধীরেধীরে রাত ১/২/৩ টায় গিয়ে তা পৌছল ।


পর্ব - ১৩


এক প্রচুর বিত্তশালীর ঘরেও চলছিল কুন্তলার চরম অসুখের সংসার । দিনে দিনে সে তার স্বামীর প্রতি খুবই বিতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে । অতি কষ্টের দিনগুলি পেরিয়ে কোন ফাঁকে জীবনের মূল্যবান ছয়টি বছর চলে যায় । কোলে আসে এক এক করে দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে । মেয়েটির বয়স যখন মাত্র তিন বছর তখন তাদের বাবা আমার স্বামী ডাক্তার সাহেব একটানা একমাস জ্বরে ভোগে এবং শেষে ক্যান্সার ধরা পড়ে মারা যান ।
বিধবা হওয়ার পর আমিও যেন খারাপ মানুষ হয়ে যাই । একজন মা হওয়া সত্বেও আমি যেন ধীরে ধীরে ডাইনী হতে শুরু করি । আমি ক্রমশঃ বদলে যাই এবং আমারই গর্ভে ধারণ করা তিনটি অবুঝ ও নিষ্পাপ শিশুর প্রতি আমার মাতৃসুলভ স্বাভাবিক মায়ামমতাটুকু পর্যন্ত খুউব দ্রুত কমতে থাকে । একসময় শ্বশুর বাড়ীর লোকজন এসে তাদের বংশধরদেরকে নিয়ে যেতে চাইলে আমিও স্বতঃস্ফর্ত ভাবেই তাতে রাজি হয়ে যাই । অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কুন্তলার মনটা একেবারে বিগড়ে যায় । এমনি করেই সব বিদ্যান ও বিত্তশালী মানুষের উপর থেকে তার স্বাভাবিক ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আস্থা যেন তার মন থেকে একেবারে বিলীন হয়ে গিয়েছিল ।    
বিয়ের দশ বছর তথা বিধবা হওয়ার বছর খানেকের মাথায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের পরামর্শ ও বাবার অনুরোধে কুন্তলা স্থানীয় ময়নামতি ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপনার কাজে যোগদান করেছিলেন । এখন সে ঐ কলেজেরই প্রিন্সিপাল এর দায়িত্ব পালন করছেন । কুন্তলার ছেলেমেয়েরাও হয়ত এখন বেশ বড় হয়ে গেছে ।
কুন্তলার বয়স এখন চল্লিশ । তার মানে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, সততা ও সহনশীলতার সহস্র পরীক্ষায় পাশ করা একজন পূর্নাংগ মানুষ । স্বামী ও সন্তানহীন যেন একেবারে নিঃসংগ এক দূর্বিসহ জীবন তার । শুধু বিদ্যা, সম্মানজনক পেশা ও কর্মক্ষেত্র, অর্থ, সামাজিক মর্যাদা ও বিপুল বিত্তধন এসবই জীবন নহে । কুন্তলা হাড়েহাড়ে বুঝতে পেরেছিল যে, মানুষের জীবনের জন্য সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন বিপরীত লিংগের একজন ভালো মানুষ বন্ধু ও সর্বক্ষণ পাশে থাকা একজন সংগী । আপন ভুবনের নিঃসংগতা বা একাকিত্ব সারাক্ষণ যেন তাকে কুড়েকুড়ে খাচ্ছিল ।
বাবামা ও ভাইবোন সহ পরিবারের সবাই দারুণভাবে অনুভব করছিল যে, শুধু চাকুরী নয় কুন্তলার একজন স্বামী, সন্তান ও তার নিজের একটা সংসার দরকার । কুন্তলাও তাই বুঝেছিল ও অনুভব করছিল । অনেক ভালো ভালো বিয়ের প্রস্তাবও তার জন্য এসেছিল, শুধু কুন্তলার পছন্দ হয়নি বলেই তার কোনটিই আর হয়ে উঠেনি । এ বিষয়ে কুন্তলার উপর কোন চাপ বা প্রভাব খাটানোরও কেউ পক্ষপাতি ছিলনা বা এরুপ কোন চেষ্টাও করা হয়নি । তাই আর তার বিয়েও করা হয়নি । এবার যখন সে সম্মত হয়েছে এবং নিজেই পাত্র পছন্দ করেছে তাই সবাই রাজি ।
বুঝতে পারা গিয়েছিল যে, কুন্তলা এখন যে বিয়েটি করতে যাচ্ছে এটি তাদের পরিবারের বিত্তধন, আভিজাত্য ও মান-মর্যাদার সংগে খাপ খায়না । তাই এ বিয়েতে তারা সবাই রাজি হলেও যেন একটা মনমরা ও সব কিছুতেই কিছুটা অনাগ্রহ, নিরানন্দ ও পিছুটান বা আলগা ভাব লক্ষ্য করা গেছে । তাই যদি হয় তবে তাতে এত মহা আয়োজনের ইবা কি দরকার ছিল, তারাতো তাহলে এ বিয়েটা লোকচক্ষু বা এ সমাজ চক্ষুর অন্তরালে ঢাকায়ও সম্পন্ন করতে পারতো । এ বিষয়টি এক সময় সাফির সাহেবেরও দেমাগে বা নজরে আসে । কিন্তু সে তা কাউকে এমনকি কুন্তলাকেও বুঝতে দেয়নি ।


পর্ব - ১৪


কুন্তলার বয়স যখন ৩/৪ কি পাঁচ বছর তখন মেলেরিয়া জ্বরে তার মায়ের মৃত্যু হয় । বড় হয়ে সে একথা শুনেছে তবে কখনোই তা বিশ্বাস করেনি বা এ বিষয়টি তার মনের উপর কোনই প্রভাব বিস্তার করেনি । আসল মায়ের কোন স্মৃতিই তার মনে নেই আর এজন্য তার মনে কোন কষ্টও নেই । কুন্তলার মায়ের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই তার বাবা আবার বিয়ে করেন । তার বাবার এই নতুন বিবির ঘরে ৩/৪ বছর কোন সন্তান হয়নি । অতঃপর কুন্তলার পর পর তিন ভাই ও এক বোনের জন্ম হয় । তাই তারা সবাই তার বেশ ছোট ।
রিফাতকে ফিসফিস করে বললাম, ভাই রিফাত সাহেব, অনেক সময় ধরে আপনার আপুকে পাচ্ছিনা মোবাইলটা বন্ধ বলছে একটু দেখবেন কি । মুখের উপর সে বলে দিল না দেখবো না । কেন, কেন ভাই । কারণ, বুবু আমাদের কাছে এঞ্জেল এর মত শ্রদ্ধার ও পূজনীয় । আপনি বুবুর গেষ্ট, তাছাড়া একজন নতুন মেহমান ও অপরিচিত বিশিষ্ট ভদ্রলোক । তাই আপনিও আমার বা আমাদের সবার কাছে ঠিক ঐ রকম । তাছাড়া আমি বুবুর ছোট ভাই, বয়সে আমি আপনারও অনেক ছোট, বুবু আমাদেরকে তুই করে বলে তাই আপনিও আমাকে তুই করে বলবেন । আচ্ছা ঠিক আছে ভাই, নাহয় এখন থেকে তাই হবে ।  
আমিতো ভাই, দূরের মানুষ বা বাইরের মানুষ তথা একজন আগন্তুক বা মুসাফির আমি কি করে একজন নব পরিচিত বা সদ্য পরিচিত সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোককে তুমি বা তুই করে বলি, হোকনা সে বয়সে ছোট । তাতো আপাততঃ অশোভন । আচ্ছা ঠিক আছে, এ বিষয়ে নাহয় আমাদের মধ্যে একটা চুক্তি হবে, যদি তাই হয় তবে ইনশাল্লাহ তখন আর ঐ চুক্তির কোন বরখেলাপ হবেনা । এখন আমি ঐ চুক্তির সম্ভাবনা ও তার সম্ভাব্য ধারা বা শর্ত সমূহ যাচাই বাছাই করে দেখছি, এই ফাঁকে দয়া করে আপনি নাহয় আমার ঐ ছোট্ট কাজটা একটু জরুরী ভিত্তিতে করে দিননা । বললো, আচ্ছা ঠিক আছে ।
বুবু তোর মোবাইল বন্ধ কেন, সাফির সাহেব তোকে কখন থেকে খুঁজছেন, তুই একটু মোবাইলটা খোল । বেচারা দেখলাম কিছুটা যেন বিচলিত বা অস্থির । তা যাই বলিশ বুবু তোর গেষ্ট ভদ্রলোক রিয়েলি গ্রেট, সুপার জিনিয়াস এন্ড হি ইজ এ পারফেক্ট ফিলোসোফার । বুবু এবার তোর সিলেকশান ও টার্গেট একেবারে সঠিক বলেই মনেহয় । এবার বোধহয় ইনশাল্লাহ আমাদের মিশন সাকসেস । কিরে তুই এত প্রশংসা করছিস ও সার্টিফিকেট দিচ্ছিস কেমন করে বা কি জন্য, ঘুষ খেয়েছিস নাকি । নাকি তুই ফান করছিস । নারে বুবু না, ফান করছি না, তোর সংগেকি ফান করা যায় নাকি তাই করেছি কোনদিন । আর ঘুষ খাওয়ার কথা বলছিস, সে সুযোগইবা আর পেলাম কই বা দিলি কোথায়, তোরা দুজনেইতো সব - - - - - হ্যারে পাজি বলে কুন্তলা রিফাতের কান টেনে ধরলো । এই বুবু, খুব লাগছে কিন্তু । এবার কুন্তলা কান ছেড়ে দিল এবং একটু বিষন্নতার আবেগে ভরা কন্ঠে বললো দোয়া করিস ভাই, এবার যেন আর ঠকতে না হয় বলেই সে দুহাতে রিফাতের গলাটা জড়িয়ে ধরে মাথাটা টেনে এনে তার কপালে একটা চুমু খেয়ে বললো আমার লক্ষি ভাই । কুন্তলার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো । বুবু তুই চিন্তা করিসনা, এবার ইনশাল্লাহ নির্ঘাত বাজিমাত । আমি ওনার একটুখানি সংগ পেয়ে বা উনার সংগে কথাবার্তা বলেই বুঝতে পেরেছি – উনি অত্যন্ত টেলেন্ট ও আসলেই ভালো মানুষ এবং একজন জেনুইন ভদ্রলোক । যা বুবু, তুই একটু ওনার সংগে কথা বল, উনি তোর সাথে কথা বলার জন্য মনেহয় টেনশান করছেন ।
হ্যালো, কুন্তলা মোবাইল বন্ধ কেন, আপনি কোথায়, এমনতো কথা ছিলনা, এত মহা আয়োজন কেন বা এত ধুমধাম কিসের, আমাকেতো এমনটা বলেননি, আমিতো এসবের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না । তাছাড়া যাকে দেখতে বা যার সংগে কথা বলতে আসলাম তারই দেখা নেই, অথচ এদিকে মহোৎসব চলছে । আমার এসব ভাল লাগছেনা ।
দেখুন, ওরা আমাকে ড্রেসিং রোমে আটকে রেখেছে, সাজানোর জন্য । আপনি আমাকে একসংগে এত গুলি প্রশ্ন করলেন, বলুনতো এখন আমি কোনটার উত্তর দিই । তাছাড়া এ মহোৎসব বা আয়োজন যাই বলেননা কেন তা বাবার একান্ত বিষয় । উনি এ বিষয়ে কারো কথাই শোনেন না বা রাখেন না । বাড়ীতে যে কোন মেহমান এলে তার আতিথেয়তা বা মেহমানদারি করার বিষয়টি বাবার একান্ত ব্যক্তিগত টপিক, এ বিষয়ে বাবা কারো সংগেই আপোষ করেন না । আপনাদের শপিংমলের প্রোগ্রাম ঠিক থাকলেও আপনারা বাড়ীতে না এসে বা না খেয়ে কিছুতেই ফিরে যেতে পারতেন না ।    


পর্ব - ১৫


দেখুন, কুন্তলা আমি এত সব বুঝিনা, আপনাকে আর সাজতে হবেনা, আমি কি এই কিছুক্ষণের মধ্যে আপনার সংগে দেখা করতে পারবো নাকি পারবোনা তাই বলুন । আমি এখনই ভিতর বাড়ীতে চলে আসছি, যদি বলেন তবে এ ব্যাপারে আমি খালাম্মার সংগে কথা বলি । আপনার সংগে এখনই কথা না হলে আমি কিন্তু খেতে বসছি না, দশ মিনিটের মধ্যে আপনার সংগে দেখা না হলে শেষে কোন সিন ক্রিয়েট হলে সেজন্য কে দায়ী হবে ।
দেখুন, আমি কোথাও ছোট হয়ে গেলে শেষে ব্যাপারটা আর সামলে নিতে পারিনা । শপিংমলের প্রোগ্রাম ফেল করেছি, মিষ্টি আনা হয়নি ইত্যাদি কারণে আমি কিন্তু এমনিতেই ছোট হয়ে গেছি, প্লীজ আমাকে আর ছোট করবেন না ।
সাফির সাহেব, এসব বিষয় আপনার মাথা থেকে একেবারে ঝেড়ে ফেলুন, আমি আপনাকে একটুও ছোট হতে দেবোনা এ বিষয়ে আপনি নিশ্চিত থাকুন এ নিয়ে আপনি ভাববেন না । আর যেজন্য আপনি আমাকে ফোন দিয়েছের তা নিয়ে আমি মার সংগে কথা বলে এখুনি আপনাকে জানাচ্ছি ।
মা – সাফির সাহেব তোমার সংগে দেখা করতে ভিতর বাড়ীতে আসতে চাইছে, এ বিষয়ে তোমার অনুমতির জন্য তোমার সংগে কথা বলতে চায় । হ্যালো, সাফির সাহেব মার সংগে কথা বলুন । হ্যালো, খালাম্মা - অচ্ছালামু আলাইকুম, খালাম্মা আমি কি কুন্তলার সংগে একটু কথা বলতে পারবো ।
কুন্তলা কে বাবা,
কেন, আপনার বড় মেয়ে, যার দাওয়াতে আপনার বাড়ীতে বেড়াতে আসা,
অ, ওর নামতো বাবা – সায়লা,  
দেখুনতো খালাম্মা, কি পাজী, ও আমাকে বলেছে ওর নাম শকুন্তলা, তাই আমি ওর নামটা একটু ছোট করে দিয়ে এখন ওকে কুন্তলা বলে ডাকি ।
হ্যা বাবা, পারবে, নিশ্চয়ই পারবে । আমি ব্যবস্থা করছি ।
Thank you খালাম্মা ।
আর আরেকটা কথা বাবা, তুমি চাইলে এখন থেকে তোমার দেওয়া ঐ কুন্তলা নামটাই সায়লার জন্য পাকা হলো ।
এটা খালাম্মা সায়লার ইচ্ছে, ওর কোন আপত্তি না থাকলে আপনার কথাটাই চূড়ান্ত হবে । খালাম্মা আপনি রিয়েলি জিনিয়াস এন্ড গ্রেট ।
এই কুন্তলা জলদি এদিকে আয়তো মা,
আসছি মা, এই নাম তুমি কই পেলে মা, অ বুঝেছি সাফির সাহেব তোমাকে সব বলে দিয়েছে ।
আমার মা ভিতরে ভিতরে নতুন নাম ধারণ করেছে ও নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছে আর মা হয়ে আমি এতবড় খুশীর খবরগুলো জানবো না, তা কি করে হয় ।
মা - - - - -
হয়েছে হয়েছে এবার যা, ঝটপট মুহিদ তাসিম ও রিফাতকে ডাক, বাগান বাড়ীতে সাফির এর বসার ব্যবস্থা করতে বল, আর রিফাতকে পাঠা শুধু ছেলেটাকে ডেকে আনতে, অন্য কেউ যেন না আসে । কেউ কিছু জানতে চাইলে বলবে, মা একটু ওনাকে ডেকেছেন বা যেতে বলেছেন । আর মায়শাকেও একটু আমার কাছে পাঠা ।
ঠিক আছে মা,
আর তুই পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোর সাজগোজের কাজটা শেষ কর ।
ওকে মা ওকে,


পর্ব - ১৬


মায়শা – আমাকে ডেকেছ মা,
হ্যা, একটু এদিকে আয়তো মা, তুই একটু খেয়াল রাখিস, তোর জামাই বা অন্য কেউ যেন
এখন বাগান বাড়ীর ওদিকটায় না যায়, সায়লা একটু লজ্জা পেতে পারে তাই, শত হোক তোদের বড় বোনতো তাই বলছি ।  
মায়শা – আচ্ছা ঠিক আছে মা, এ নিয়ে তুমি একটুও ভেবোনা, আমি তা দেখছি ।
সব আয়োজন হলো, কোল্ড ও চা, কফি হরলিকস ইত্যাদি সব রেডি । রিফাত সাফিরকে নিয়ে এলো, তার কিছুক্ষণ পর কুন্তলা এলো । রিফাত চলে যেতে উদ্যত হলে কুন্তলা বললো রিফাত যাসনে বোস ।
রিফাত – না বুবু তোরা গল্প কর, এই ফাঁকে আমি একটু ওদিকটা ঘুরে আসি ।
সাফির – মাশাআল্লাহ, বিউটিফুল ।
কুন্তলা – কি, এই বাগানবাড়ী,
সাফির – না, মিস সায়লা বেগম,
কুন্তলা – রিয়েলি,
সাফির – হ্যা রিয়েলি,
কুন্তলা – সিউর,
সাফির – হ্যা, হান্ড্রেড পারসেন্ট,
কুন্তলা – পাত্রী পছন্দ হয়েছে,
সাফির – হ্যা, খুউব, এত পছন্দ যে, তার খুব কাছে ঘেষে বসতে মন চাইছে, আর - - - -  
কুন্তলা – আর কি,
সাফির – ইচ্ছে করছে, বাগানবাড়ীর আরেকটু গহীনে আড়ালে গিয়ে - - - - -
কুন্তলা – গহীনে আড়ালে গিয়ে কি,
সাফির – ইচ্ছে করছে, সুন্দরীর হাত ধরে একটু হাটি আর - - - - -
কুন্তলা – আর কি,
সাফির – তাকে জড়িয়ে ধরে চুমো খেতে,
কুন্তলা – ইস, দুষ্ট - - - সখ কত - - - বিনা লাইসেন্সে দুঃসাহসী বাসনা ও চিন্তা - - - ঠিক আছে ঠিক আছে,  এ বিষয়টা নাহয় আমার মাথায় রইলো - - - সময় হলে সখ, সাহস ও সামর্থ্যটা নিরুপন করে দেখা হবে ।    
সাফির – ওরে বাবা, এখনতো আমার ভয় ভয় করছে । সে যাই হোক, ওটা যথাযথ মোকাবেলা করা হবে, হয় যুদ্ধ নাহয় সন্ধি, ইনশাল্লাহ এক ব্যবস্থা হয়েই যাবে । ওটা আমার দুশ্চিন্তা নয়, তবে দুশ্চিন্তা হলো - - - - -  
কুন্তলা – আবার কিসের দুশ্চিন্তা,
সাফির – পাত্র আপনার পছন্দ হলো কিনা,
কুন্তলা – সাহেব পাত্র আমার পছন্দ হয়েছে তাই সবারই পছন্দ, আর পাত্র পছন্দ না হলেকি এই এতকিছু ।
সাফির – আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু - - -
কুন্তলা – আবার কিসের কিন্তু,
সাফির – আজ কি আমাদের বিয়ে হবে,
কুন্তলা – জ্বি, তাইতো মনে হচ্ছে,
সাফির – আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু - - -
কুন্তলা – আবার কিন্তু - - - - - এত কিন্তু কিন্তু আমার কিন্তু মোটেও ভালো লাগছে না ।
সাফির – না, আমিতো এত তড়িঘড়ি বা ঠিক এখনই এজন্য প্রস্তুত ছিলাম না বা এমন মানষিক প্রস্তুতি নিয়ে আসিনি, তাই একটু ভাবছি ।
কুন্তলা – না সাহেব, আপনি এ নিয়ে কোন চিন্তা করবেন না । বাবা বিয়ের বাজার তথা আমাদের দুজনের মার্কেটিং করার জন্য সব সমেত পঁচিশ লাখ টাকা ঘরে এনে রেখেছেন, হয়তো আজই তার শপিং এ যাওয়া লাগতে পারে ।
সাফির – সোবহানাল্লাহ - - - । এত জাকজমক ও এত টাকা খরচ না করলে কি ভালো ছিলনা ।
কুন্তলা – কেন
সাফির – না, আমার কেমন যেন সংকোচ লাগছে ।
কুন্তলা – কেন, তাতে কি হয়েছে, এটা একটি মেয়ের বিয়ের খরচ, স্বেচ্ছায় তার বাবায় করছে ।
সাফির – চলুননা কুন্তলা একটু ওদিক থেকে ঘুরে আসি ।
তাতে কুন্তলা সম্মত হয়ে কয়েক পা সামনে এগুতেই সাফির বললো কুন্তলা আপনার হাতটা একটু ধরি, কুন্তলা একটু পিছনে তাকিয়ে শেষে বললো ধরুন । আরেকটু সামনে এগুতেই সাফির তার ধরে রাখা কুন্তলার হাতে ছোট্ট একটা চিমটি কেটে বললো কুন্তলা দুষ্টুমির ঐ খেয়ালটা আমাকে খুব জ্বালাতন করছে, লোভ সামলাতে পারছি না ।


পর্ব - ১৭


কুন্তলা – না বুঝার ভাণ করে বললো, কি
সাফির – ঐ একই কথা
কুন্তলা – কি
সাফির – সুন্দর মানুষটাকে একটু ভালোবাসতে ও আদর করতে ইচ্ছে করছে । কি শোনতে কেমন লাগছে, রাগ করছেন নাতো ।  
কুন্তলা – হ্যা, খুব ভালো লাগছে এবং খুব ইচ্ছেও করছে । দূর্লভ এক সুধা হাতে পেতে যাচ্ছি, রাগ করবো কেন, তার সুযোগ বা সাহসইবা আমার কই ।
সাফির – কি ইচ্ছে করছে
কুন্তলা – আমার পাশের এ মানুষটার একটু মাতাল ভালোবাসা ও তার ‍উঞ্চ আদর পেতে ।
সাফির – সিউর
কুন্তলা – জানিনা
সাফির – জানিনা কেন
কুন্তলা – জানলেইবা আর লাভ কি এখন, তাই জানিনা । চলুন, চা খাবেন ।
এর মধ্যেই পিছন থেকে কাদের যেন আগমনের সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল । তাই ধরে রাখা হাতখানা নিমেষেই ছেড়ে দিয়ে ও ছাড়িয়ে নিয়ে তারা দুজনেই বচনে ও আচরণে খুব সচেতন ও সংযত হয়ে গেলো । সামনে তাকাতেই দেখা গেল একজন মেহমানের খেদমত করতে ব্যস্ত বেশ কয়েকজন তাবেদারের আনাগোনা চলছিল । নির্জনে নিবিড় সান্নিধ্যে পাওয়ার নেশায় দুজনেই ছিল তখন আকুল । চায়ের টেবিলের দিকে ধীরপদে তারা এগিয়ে গেলো । চায়ের টেবিলে সাজানো হরেক রকম খাবার, ফল-ফলাদি ও পানিয়ের সমাহার ।
সাফির – কুন্তলা দুজন মানুষের জন্য এতকিছু আর এই মহাআয়োজন । এগুলোতো দিব্যি দশজনে খেতে পারবে ।
কুন্তলা - না দুজন নয়, মাত্র একজন আর সে সাধারণ কেউ নয় সে এ বাড়ীর কর্তা অর্থাৎ আমার আব্বাহুজুরের বিশেষ মেহমান । আমিতো ঘরের মানুষই, বাড়ীওয়ালা সাহেবের বড় মেয়ে । মেহমানের আপ্যায়নের উছিলায় হয়তো আমার খাবারও এখানে দেওয়া বা রাখা আছে এই যা । তাই আপনার কাছে হয়তো তা একটু বেশী মনে হচ্ছে । আর এ মেহমানতো যেনতেন মেহমান নয় । বাবামার ভাষ্য অনুযায়ী এ মেহমান এ বাড়ীর কর্তা রায়হান চৌধুরীর জেষ্ঠ্য কন্যার আমন্ত্রিত খাস মেহমান, তাই তিনি বিশেষ মেহমান তথা অতি উঁচূ মানের মেহমান যেন একেবারে স্বর্গীয় মেহমান ।
সাফির - সোবহানাল্লাহ । সব শুনে ও দেখে খুউব খুশী হলাম, তবে আপনাকে ছাড়া আমি এ বাড়ীর একমুহুর্তের মেহমানও হতে চাইনা ।  
কুন্তলা বললো - মায়ের রান্নাবান্না ও ভিতর বাড়ীর সবকাজে সহযোগিতার জন্য ছোটবড় চারজন, বাহির বাড়ীতে তিনজন, ড্রাইভার দুইজন, এ বাড়ীতে যেমন কাজের লোক তেমনি খাবারের লোকের অভাব নেই । প্রতিদিন প্রতি বেলায় গড়ে কমপক্ষে প্রায় ২৫/৩০ জন লোক খাচ্ছে । তাই কোন খাবারই নষ্ট হবার কোন সুযোগ বা সম্ভাবনা এ বাড়ীতে নেই । ভয় নেই আমারও হাতে কোন কাজ নেই, তাই আমি আপনার সারাক্ষণের গল্পের সংগী হয়ে থাকবো । শুধু্ই গল্প আর কিছু নয় । না সাহেব একেবারে সবকিছু ফ্রি, কোন বাধা মানা কিবা নিষেধ নেই, আপনার মন যখন যেমন যা চায় কিবা চাইবে ঠিক তখনই তাই হবে বা তাই পাবেন । শুধু একখানা লাইসেন্সের অপেক্ষা মাত্র । ওসব কোনকিছু নিয়েই আপনাকে ভাবতে হবেনা, নিন এবার শুরু করুন ।
খাবো নাকি বসে বসে রুপসীর রুপ দেখবো । আপনার ঊরুতে একটা হাত রাখতে কিবা ঐ দুষ্ট হাতটা ঊরুর নীচে কিছুক্ষণ লুকিয়ে থেকে সুখ পেতে চাইছে । একটু সবর সাহেব, লোকে দেখে ফেলবে, আমি সরম পাবো আর আপনিও বিব্রত হবেন । আর শুধু ঊরু কেন পা থেকে মাথা পর্যন্ত মোর এ পূরো শরীরটাই যখন আপনাকে দিয়ে দেওয়া হবে তখন দেখবো সাহেবের কত রস ও কত বল ।
সাফির - কি খাবো কোনটা খাবো, কোনটিইবা বাদ রাখবো বুঝতে পারছিনা । আমার ইচ্ছে করছে সবকিছু থেকেই একটু একটু করে খাই, কিন্তু তা’ও কি সম্ভব । কুন্তলা, তাই আমি ভাবছি এখানেও একটা লটারী হয়ে যাক । কুন্তলা - সেটা কি । সাফির - এখন আমি ঠিক করেছি একটি সোলিড ও একটি লিকুইড মাএ দুটি আইটেম খাবো আর তা সিলেক্ট করবেন আপনি অর্থাৎ আপনার পছন্দ মতোই খাবো তা’ও আবার একটা শর্ত আছে । কুন্তলা - আবার কিসের শর্ত, আপনার কোন শর্তের কথা শোনলেই আমি চিন্তায় পড়ে যাই । সাফির - না কুন্তলা, আপনার চিন্তার কোন কারণ নেই, বিষয়টা আপনার জন্য সহজই হবে আশা করি । আর তা হলো, আমার জন্য আপনার সিলেক্ট করা দুটো আইটেমই আপনাকেও খেতে হবে । কুন্তলা - ঠিক আছে আমি রাজি ।
শুরু হলো চা-চক্রের ঐ সুন্দর পর্ব । কুন্তলা আমার জন্য সন্দেশ ও স্প্রাইট পছন্দ করলো । আমি খুউব খুশী হলাম, কারণ এ দুটি জিনিসই আমার পছন্দ । এখন আমি মনেমনে ভাবছি তা সে জানলো কি করে । কুন্তলা প্লেটে তুলে দিলো, একটা সন্দেশেই হাফপ্লেটটা
যেন ভরে গেলো । ব্যাপারটা অবাক হওয়ার মতই, এতবড় রাজভোগ, সন্দেশ ও লালমোহন আমার জীবনে আমি খাইনি, যার মাত্র ৩/৪টিতেেই হয়তো এক কেজি হয়ে যাবে ।
মনেপড়ে এখন থেকে প্রায় ৪০/৫০ বছর আগে ছোটবেলায়, আমাদের গ্রামের বড় মাদ্রাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল এ পৌষ মাসে তিনদিন তিনরাতের বিশাল জমায়েত হতো ও এ উপলক্ষ্যে আশপাশের ধানক্ষেত গুলিতে অস্থায়ী বাজার বসতো । ছোটছোট ছেলেমেয়েদের তা যেন ছিল এক আনন্দময় মেলা । সেখানে সব ধরণের পণ্যের দোকান বসতো । এত বড় আকারের মিষ্টির পসরা আমার জীবনে সেই প্রথম দেখা । তখন লুকিয়ে লুকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম, খেতেও খুব ইচ্ছে করতো কিন্তু তা আর খাওয়া হয়ে উঠেনি ।


তখন মনে মনে ভাবতাম ও এমন ধারণা হয়েছিল যে, ছোট মিষ্টি বড় মিষ্টি স্বাদে হয়তো তা একই রকম হবে, শুধু দেখার সুখেই যেটুকু তফাৎ । এতবড় মিষ্টি সচরাচর দেখা বা পাওয়া যায়না । তাই নিশ্চয় অগুলো হয়তো কুন্তলার বাবাকে অর্ডার দিয়ে বানিয়ে আনতে হয়েছে । সে যাই হোক, কুন্তলাকে বললাম কুন্তলা আমারনা এখন মিষ্টি না খেয়ে যে মানুষটির দাওয়াতে এখানে আসা ও এতবড় মেহমান হয়ে যাওয়া এবং যার উছিলায় এত বড় মিষ্টি খাওয়ার সুযোগ পাওয়া তাকে একটা চুমো খেতে খুব ইচ্ছে করছে । কুন্তলা আহলাদের কন্ঠে বললো - দুষ্ট, ঠিক আছে আপনার বায়নাটা সাদরে আমলে নিয়ে যত্ন করে তুলে রাখলাম । তবে মনে রাখবেন, কথা অনুযায়ী আমি আপনার কাছে পাওনা আর আপনি আমার কাছে দেনা রইলেন । বললাম, ঠিক আছে মেডাম সময় এলে আমরা দুজনে মিলেই নাহয় আমাদের এই দেনা-পানার হিসাবটা করবো ।
কুন্তলাকে বললাম কুন্তলা একটা বিষয় অতিশয় বিম্ময়ে লক্ষ্য করলাম, পঞ্চাশ বছর আগে আমার অবচেতন মনের গোপনে জাগ্রত হওয়া ঐ মস্তবড় সাইজের মিষ্টি খাওয়ার অব্যক্ত সেই তীব্র আকাঙ্খাটি যা কোনদিন কাউকেই বলা হয়নি বা পূরণও হয়নি এবং পরবর্তীতে একসময় ঐ বাসনাটি ভুলে যাওয়ার পঞ্চাশ বছর পরে এসে আবার তা আমাকে দেখানো, স্বরণ করিয়ে দেওয়া ও খাওয়ানোর খোদার কি কুদরতি খেলা - - - সোবহানাল্লাহ ।
কুন্তলাকে বললাম, কুন্তলা আপনার জীবনে কি এমন কোন চমকপ্রদ ঘটনা আছে । ও বললো হ্যা আছে । আমি বললাম সেটা কি । ও আমার দিকে ইশারা করে মৃদু হেসে বলল, সেটা হলো এই আপনাকে, আমার সামনে বসে থাকা এই ভদ্রলোক সাহেবটাকে খুঁজে পাওয়া । বললাম তা একটু খুলে বলবেন কি । ও বললো, বলবো তবে এখন নয়, পরে কখনও । এজন্য একটা ভাল মুড এর প্রয়োজন হয় । এখন মনের ভিতর ঠিকমত মেহমানদারি সম্পন্ন করার নানান পেরেশানি, দায় ও উৎকন্ঠা । তাছাড়া একজন দীর্ঘ পথ হেটে আসা ক্ষুধার্ত, তৃঞ্চার্ত ও ক্লান্ত পথিকের কাছে রাস্তায় দাড়িয়ে থেকে তার ভ্রমণের গল্প শোনতে চাওয়াটা কি ঠিক হবে । প্রফুল্ল চিত্তে ও প্রসন্ন বদনে মধুর পরিবেশে আপনার গা ঘেষে বসে গল্প করার সৌভাগ্য যখন আমার হবে তখন জীবনের সুখ-দুখের গল্পগুলি বলবো ও শুনবো । বললাম আচ্ছা ঠিক আছে, তাই হবে ।
হঠাৎ একটু বিষন্নতা এসে যেন সহসা কুন্তলাকে কিছুটা আবেগপ্রবণ করে তুললো । তাই ভারি হয়ে যাওয়া অপ্রিয় পরিবেশটাকে একটু স্বাভাবিক করার উদ্দেশ্যে মৃদু হাসিতে তাকে অনুনয় করে বললাম যদি সংক্ষেপে একটু - - - । কুন্তলা তাতে রাজি হলো এবং বলতে শুরু করলো - কি নেই বা কি ছিলনা আমার - রুপ, গুণ ও বিদ্যা । কি নেই আমার বাবার অর্থ-বিত্ত, বিলাস-বৈভব, সুনাম ও প্রাচুর্য্য । বিয়ে করলাম, অনেক ধুমধাম হলো । বাপের বাড়ীর মত আমার শ্বশুর বাড়ীতেও সবই ছিল, সবই পেলাম । সুদর্শন ও সুশিক্ষিত স্বামী পেলাম, সন্তানের মা হলাম, সবইতো পেলাম কিন্তু আমার আকুল চাওয়ার ঐ সামাণ্য একটুখানি সুখই শুধু পেলামনা । মনের মত একজন মানুষ পেলামনা, জীবনে যা সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন - একজন প্রিয়বন্ধু ও অন্তরংগ জীবনসংগী তা’ই পাওয়া হলোনা । তখন বুঝতে পারিনি রুপ, বিদ্যা ও ধন-সম্পদের চাইতে একটুখানি সুখ কতবেশী মূল্যবান ও কত বেশী তার দাম । পেলামনা একজন মনের মত মানুষ, পেলামনা প্রিয় বন্ধু । আমার স্বামীর কাছে আমাকে হাত পেতে সুখ আর ভালবাসা চাইতে হতো । প্রথমদিকে আত্ম মর্জাদা বোধ ও শেষের দিকে হতাশা ও বিষন্নতা যেন আমাকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলেছিল । একই কক্ষে ভিন্ন বিছানায় শুয়ে কষ্টের অভিমানে ছটফট করে ও চুখের জল ফেলে কেটেছে আমার নিদহীন কত রাত । তারপর দরজা খুলে রেখে পাশের কামড়ায় শুয়ে কেটেছে আমার বাকী দিনগুলি । অবশেষে একসময় আপন স্বামীকে প্রেম নিবেদন করার মত সুযোগ, পরিবেশ, আগ্রহ ও ইচ্ছা বা মানষিকতা সবই যেন আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম ।    
এত সুন্দর সংসারটাকে ধীরে ধীরে মনে হতে লাগলো যেন জেলখানা । সংসারের টুকিটাকি কাজগুলিকেও মনে হতো অনেক ভারী ও পীড়াদায়ক । নিজ গর্ভজাত সন্তানগুলিকে মনে হতে লাগলো এমন অসহনীয় বোঝা যেন সতীনের সন্তান । এভাবে কেটে গেল জীবনের বারোটি বছর । দেহ কিবা মন কিছুই আমার ভরলোনা । বরং বিষাদ আর শূন্যতার হাহাকারে বুকটা যেন আমার ক্রমশঃই ভারী হয়ে উঠতে লাগলো । বিলাস, ধন ও ভোগ-বিনোদনের সমারোহ আমাকে বাঁধতে চাইলো । কিন্তু আমার মন বলছিল না - ধন দিয়ে আমি কি করবো, আর এত ধনেরইবা আমার কি প্রয়োজন । নামাজ পড়ে পড়ে গোপনে আল্লাহর দরবারে মুক্তি এবং একজন সুজন জীবন সংগী ও ভাল মানুষ বন্ধু চাইতে লাগলাম । এক পর্য্যায়ে আমার স্বামী বেচারা দারুণভাবে অসুস্থ্য হয়ে পড়লো । অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম, আমি যেন আমার স্বামীর প্রতি সামাণ্য ভক্তি, শ্রদ্ধা, দরদ ও ভালবাসাটুকু হারিয়ে ফেলেছিলাম । আজ মনে হচ্ছে, সেদিনই বুঝি আল্লাহর দরবারে আমার দরখাস্ত কবুল হয়েছিল ।
এবার আমি বললাম, কুন্তলা আপনার জীবনে এটুকু কষ্ট এসেছে বলে আর তা সইতে ও বইতে পেরেছেন বলেইতো আজ আমার আপনাকে পাওয়ার এ পরম সৌভাগ্যটা হলো । নাহলে কি এজীবনে কখনো আমি এই সুন্দরী বিবিসাবের দেখা পেতাম, নাকি তার ধারেকাছে কভু ঘেষতে পারতাম । কায়ঃমনে কামনা করছি আজ থেকে শেষ হয়ে যাক আপনার ঐ কষ্টগুলি আর আপনার অদুটি চুখে কভু জল না দেখে আমি যেন আজীবন দেখতে পাই ভালবাসার রঙ মাখানো খুশীর ঝিলিক । সাতরঙের সমারোহভরা, শোভা আর সৌরভে মাতোয়ারা ও রসে টলমল করা ফুলে-ফলে সেজে উঠুক আপনার এ জীবন, বারোমাসই যেন তার হয়ে রয় ভরা বসন্ত । কুন্তলা খুশী হলো ও মৃদু হেসে বললো - আমীন । এভাবেই পরিবেশটা কিছুটা প্রাণবন্ত হয়ে উঠলো ও আমাদের চা পানের পর্বটি পূরোদমে শুরু হলো ।  
এবার কুন্তলাকে বললাম কুন্তলা, আমিনা আপনার জন্য একটা আংটি এনেছি । কিন্তু এখন আমার সত্যিই খুব লজ্বা করছে । মনেহয় রিংটা খুউব ছোট হয়ে গেছে, তা হয়তো আপনার পছন্দ হবেনা । আর আপনার পছন্দ হলেও তা অন্য সকলের পছন্দ হবে কিনা তা নিয়ে এখন আমি ভাবনায় পড়ে গেলাম । কুন্তলা খুশীতে অধির হয়ে বললো, কই দেখি দেখি । সাফির তার পকেট থেকে আংটির পেকেটটা বের করে কুন্তলার হাতে তুলে দিতে চাইলো । কুন্তলা বললো এভাবে কেন, হাতে পরিয়ে দিন ।
সাফির বললো পরিয়েতো দেবোই তবে একটা শর্ত আছে, যদি মনেহয় আমি ছোট হয়ে যাবো তবে এটি কে দিয়েছে কাউকেই তা বলবেন না বা বলা যাবেনা । সাফির আংটিটা কুন্তলার হাতে পরিয়ে দিলো । কুন্তলা কয়েক মূহুর্ত চুপকরে ওটির দিকে তাকিয়ে থেকে খুশীর আবেগে আংটিটাতে একটা চুমো খেলো আর বললো খু্উব সুন্দর, আমার নতুন জীবন এবং নিমেষেই দৌড়ে বাড়ীর ভিতরে ছুটে গেলো । কুন্তলা ওটি শুধু মাকে দেখিয়ে ও কদমবুছি করে তার দোয়া নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার চায়ের টেবিলে ফিরে এলো । ব্যাপারটি আমাকে খুবই মুগ্ধ করেছিল ও আমি সীমাহীন খুশী হয়েছিলাম ।  
সন্ধায় কুন্তলা ও তার এক ভাইকে নিয়ে আমরা শপিং এ যাবার কথা । ড্রাইভার ও গাড়ী দন্ডায়মান । বিকালে কুন্তলার ভাই এসে আমার হাতে একটা নতুন এক্সিকিউটিভ ব্যাগ দিয়ে বললো এটা আপনার জন্য, আম্মাজান আমাকে দিয়ে পাঠালেন । তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় করে কুন্তলাকে ফোন করলাম । জানতে চাইলাম এই ব্যাগটা কি এবং কেন । ও বললো ব্যাগটা খুলে দেখুন, মা আপনাকে দিয়েছেন । সম্ভবতঃ ওখানে দশ লাখ টাকা আছে, ওটা বাবামার পক্ষ থেকে আমাদের দুজনের বিয়ের গিফট বা দোয়া । কুন্তলা আপনার সংগেতো আমার এ ব্যাপারে কিছু পরামর্শ করার ছিল । কুন্তলা - ঠিক আছে, গাড়ীতে বসেই নাহয় সে আলাপ করা যাবে । শপিংএ যেতে হবে তাই আপনি দয়া করে একটু ঝটপট তৈরী হয়ে নিন, আমি এখুনি আসছি ।  
গাড়ীতে বসে অনেক কথা হলো । টাকার বেগটা কুন্তলার হাতে গছিয়ে দিতে চাইলাম ও নিলোনা । বললাম এর অর্ধেকটাতো আপনার । ও বললো ওটাও এখন আপনার । আর এ টাকাতো রেখে দেবার জন্য নয়, খরচ করার জন্য । তাছাড়া আজকের এই শপিং টিমের আপনি হলেন একমাত্র লিডার । আপনি পছন্দ করবেন ও পেমেন্ট দেবেন এটাই শোভন । আর আমি ও আমার ভাই এই দুজন কেবল আপনার সফর সংগী মাত্র ।
পাশে বসে থাকা কুন্তলার গায়ের মৌ মৌ সৌরভ আমাকে মাতাল করে দিচ্ছিলো । আমি তার কানের কাছে মোখ নিয়ে চুপিচুপি বললাম – সুন্দরী আপনার জন্য দশলাখ টাকার দেনমোহর ও দশভরির একসেট স্বর্নালংকার পেশ করছি, আপনি রাজি । মুচকি হেসে বললো জি সাহেব আমি রাজি । আপনার যেমন মর্জি হয় ইচ্ছে করলে সামাণ্য কিছু উসুলও দেখিয়ে দিতে পারবেন । সুটকেস বোঝাই করে শাড়ী, প্রসাধন, পায়ের নূপুর থেকে মাথার টিকলি, নাকফুল ও নোলক, কানের ঝুমকা সব । রেশমী চুড়ি, আলতা ও নাইলনের ফিতা ও বডি-স্প্রে সহ আমার পছন্দের ইত্যাদি সব হলো । মন ও চোখ ভরে কেনাকাটা করলাম । মাছের তেলেই যেন একেবারে মচমচে মাছ ভাজা ।
সবকিছু গাড়ীতে ভরে বাড়ী ফিরছিলাম । কুন্তলার পাশে বসে তার সংগে কথা হচ্ছিল । তার কাছে জানতে চাইলাম আপনার সবকিছু পছন্দ হয়েছেতো । বললো হ্যা, অনেক পছন্দ হয়েছে । অনেক চেষ্টা করেও আমি শেষে আর ছাড়া পেলামনা । আমার জন্যও আংটি, ঘড়ি, টাই, সুটের কাপড়, সেন্ট, জুতো ও আড়ং থেকে অতিশয় সৌখীন একটা ঘিয়ে রঙের মডকা বা গরদের পাঞ্জাবি, সাদা পায়জামা, নাগরা ও কাশ্মিরি শাল কেনা হলো ।
কুন্তলা জানতে চাইলো আমার সবকিছু পছন্দ হয়েছে কিনা । বললাম হ্যা, সবকিছুই আমার খুউব পছন্দ হয়েছে, তবে - - - । তবে কি, কুন্তলা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লো । আমি একটু মজা করছিলাম । বললাম তার মধ্যে তিনটে জিনিস - - - তার ভাবটা ছিল এমন যেন তিনটি জিনিস আমার পছন্দ হয়নি তাই এখুনি গাড়ী ঘুরিয়ে আবার মার্কেটে যাবে । বললাম আরে এত অধীর হচ্ছেন কেন, সবকিছুর মধ্যে মাত্র তিনটি জিনিস আমার সেরা পছন্দ । এবার কুন্তলার মুখটা যেন একটু প্রসন্ন হলো । তার কানেকানে বললাম, এক-লটারীতে পাওয়া আমার মিস কুন্তলা, দুই-তার বিয়ের প্রথম শাড়ীটা ও তিন-আমার জন্য কেনা তার পছন্দের পাঞ্জাবিটা । কুন্তলা খুব খুশী হয়ে গেল এবং আমার গায়ে একটা আদরের চিমটি কেটে বললো তিন নাম্বারটা কিন্তু ঠিক বলেননি । ৩-৭ হাজার টাকা পর্যন্ত দামের অনেক সুন্দর সুন্দর পাঞ্জাবি ছিল কিন্তু আপনি পছন্দ করলেন তিন হাজার সাতশ টাকারটা তাই আমিও সায় দিলাম । কুন্তলাকে বললাম, দেখুন কুন্তলা টাকার মূল্যের চেয়ে পছন্দ তথা মনের মূল্য অনেক বেশী তা স্বীকার করবেন কি । দেখুন ঐ ৫/৭ হাজার টাকা দামের পাঞ্জাবি কিনলে হয়তো সেটি আজীবন স্মৃতি হয়ে ঘরে আলমিরাতে পড়ে থাকতো আর এটাকে আমি পরম শ্রদ্ধাভরে সযতনে ও মনভরে সাদরে ব্যবহার করবো । এবার বলুন কোনটা দামী ও কোনটা ভাল । কথার ফাঁকে কখন পথ ফুরিয়ে গেলো, আমরা বাড়ী চলে এলাম ।  
বাড়ী ফিরে আমার কক্ষে ঢুকেই দেখি টেবিলের উপরে রাখা বাদশাহী পাগড়ী ও শেরওয়ানী । অনেক দামী কিবা এত চটকদার ও বাহারি পোষাক আমার ভাল লাগেনা । আমার পছন্দ একেবারে সিম্পল বা সাদাসিধে । কুন্তলাকে ফোন করলাম, বললাম কুন্তলা দেখুননা এ বয়সে এসব পোষাক আমার কাছে বেমানান লাগছে । সে রাজি হলো, বললো ঠিক আছে পরতে হবেনা । আমি খুশী হলাম । মোল্লা সাহেব, কাজী সাহেব ও উভয় পক্ষের স্বাক্ষীগণ সবাই উপস্থিত । কেউ একজন আমায় মাথায় একটা টুপি পরিয়ে দিলো । বিবাহ কার্য্য সম্পন্ন হলো, প্রায় দুশত মেহমানের ভোজন পর্বও শেষ ।
আমি আমার দোতলা অতিথি ঘরে বসে আছি একা । বিশাল বড় ও সুন্দর অতিথি কামড়া, সুদৃশ্য বিদেশী ফিটিংস এর বাথরুম, দামী মার্বেল টাইলসের মেঝে তার উপর দামী কার্পেট, ডাইনিং টেবিল ও সোফায় সাজানো । উজ্জল মার্কারী বাতির আলো, দেওয়ালের ডিসটেম্পার এর সংগে রঙ মিলানো দরজা জানালায় দামী পর্দা । সুদৃশ্য পাখা ও এসি, পাশাপাশি দুখানা মাঝারি সাইজের দামী খাটের উপর সুদৃশ্য পরিপাটি লোভনীয় বিছানা । বিশাল কক্ষে মস্তবড় রঙীন টিভি ও ফ্রিজ, ইন্টারকম, দৈনিক পত্রিকা ও ম্যাগাজিন কতকি কিন্তু কোন কিছুতেই তখন আমার মন নেই । তার কিছুইযে আর আমার ভাল লাগছিল না । টিভি দেখতে কিবা পত্রিকা পড়তেও আমার ইচ্ছা করছিল না ।
রাত দশটা বাজে । তীর্থের কাকের মতই একাকি আমি খাটের উপর পা ঝুলিয়ে বসে রয়েছি যেন কার আসার অধির অপেক্ষায় । এখুনি আসবে মোর মক্ষীরাণী ও মহামান্য অতিথি আমার, যার সংগে হবে আজ ভালবাসার প্রথম রংগ করা উঞ্চ নোনতা মধুর রসে ভরা রঙীন অভিসার । উজার করে দিতে উপচে পড়া আদরের সমারোহ লয়ে আবেগে ভরা মনটা আমার যেন একেবারে হয়ে রয়েছে তৈয়ার । এই সেই মায়াঘর যেথা দুটি মানুষ হয়ে যায় চির বন্ধু ও আপন হয়েও একেবারে অচেনা ও পর । আমার কল্পনার ঐ স্বপ্ন বাসর নিঝুম নিরিবিলি পরিচ্ছন্ন ও শান্ত পরিবেশের এমন একখানা কুটির যেথা নেই কোন লোকজন লাজ ব্যাঘাত জড়তা জ্বালাতন ও সংকোচ কিবা ভয়-ডর ।
কিছুক্ষণ পর আমার প্রতীক্ষার প্রহর ফুরলো । অবশেষে নতুন বৌ এর সুন্দর পোষাকে মৌ মৌ কাছে টানা মাতাল সুবাসে ঘর ভরে দিয়ে দারুণ লোভনীয় কুন্তলা এলো । তার সংগে দুজন সহাস্য ও সুবেশি কিশোরী পরিচারিকা সুদৃশ্য বড় বড় ডালাভরে নিয়ে এলো দুটি তাজা ফুলের মালা, হরেক রকম মিষ্টি, দধি ও টক-ঝাল খাবার, মিনারেল ওয়াটার, রকমারি ফল, উঞ্চ ও শীতল পানীয় সহ আরও কতকি । সবকিছু টেবিলে সাজিয়ে রেখে ওরা চলে গেলো । অটোলক দরজাটা বন্ধ হবার শব্দ পেলাম । সেই সাহসেই কুন্তলা আমাকে কিছু না বলে চলে যেতে উদ্যত হতেই আমি চটকরে তার একটা হাত ধরে ফেললাম । তাতে সে ঠায় দাড়িয়ে গিয়ে মিষ্টি হেসে পিছন ফিরে তাকালো । আমি কেন জানি সংগে সংগে সরি বলে তার হাতটা ছেড়ে দিলাম ও বললাম, একটু বসবেন না ।
সে আগে ও পিছে প্রসারিত তার হাত-পাগুলি অনেকটা কাঠের মূর্তির মতই কঠিন ও অসাড় করে রেখেই দাড়িয়ে রইলো এবং মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো - কেন সরি কেন । কেনইবা হাত ধরলেন আবার কেনইবা ছেড়ে দিলেন । সাহস নেই বুঝি, এবার সে মায়াবী ও সোহাগী হুকুমের সুরে বলল ধরুন হাতটা আবার ধরুন । আমি এবার তার হাতটা আবার ধরলাম এবং আলতোভাবে তাকে আমার দিকে টানতেই সে একেবারে মোমের পুতুলের মতই যেন একেবারে গলে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে এসে আমার কোলের উপরে এলিয়ে পড়লো । তুলতুলে নরম তার সুবাসিত দহটা, আমি যেন এক স্বর্গীয় সুধা হাতে পেলাম । অজানা এক মধুর শিহরণ ও সুড়সুড়িতে কুন্তলা যেন একেবারে জড়সড় ও হেসে কুটিকুটি আর এভাবেই আমরা দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে ধরে গড়িয়ে খাটের উপরে শুয়ে পড়লাম ।
আরকি সে মধুর লগ্ন হাতছাড়া করা যায় । তাই আমরা দুজনেই নিমেষে চলে গেলাম মধুর পরশ, হর্ষ-পুলক আর বিনোদনের এক অন্য জগতে । আমার এত প্রিয় খাবার মিষ্টি ও দধির দিকে ফিরে তাকাবার সময়ই পেলাম না । নতুন বন্ধুকে তাজা ফুলের মালা পড়াবার কথা ভুলে গিয়ে দুজনে দুজনকে বাহুর মালায় বরণ করে নিলাম । কিভাবেইবা তখন আর আমি নিজেকে সামলে রাখি । কুন্তলা প্রথমে একটু কাঁচুমাচু করলেও পরক্ষণেই সে নিজেকে আমার কাছে সমর্পন করে দিলো । তারপর ধীরে ধীরে সে স্বতঃস্ফর্ত ও প্রাণবন্তও হয়ে উঠলো । তার গায়ের সব সুন্দর বসনগুলি যেন গা থেকে উড়ে যেতে অস্থীর হয়ে পড়লো । আমিও তাই আর কালবিলম্ব না করে - - - - -  
এরমধ্যে হঠাৎ গলির তিন রাস্তার মোড়ের ঐ ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ, লক্ষ লোকের সুখের স্বপ্নভরা মজার ঘুমটাকে নিমেষে করে দিলো হারাম । ঐ বিকট শব্দে আচমকা লাফিয়ে জেগে উঠে বসলাম, দেখি আমি আমার সাদামাটা বিছানায় একা আর সারাটা ঘর অন্ধকার, টিপবাতি জাললাম ও দেখলাম কেউ নেই মোর রংগ করার সংগী সাম । অযথা অকারণ মম মধুর সুখের ঐ স্বপ্ন ভংগের কারণে প্রচন্ড রাগ হলো ও আমি কষ্ট পেলাম ।


রচয়িতা/লেখক/কবি


আবু হক মুসাফির
(আবু সাইয়িদ মোহাম্মদ মাহমুদুল হক)
সেল ফোন-০১৬২৭৮ ৯৪৭৯৭/০১৩০১৭ ১৯৫৫৩
Email-abuhaawk@ymail.com   &  dactarkhana24@gmail.com