সুস্বচ্ছল এক শান্তি সুখের গৃহস্ত পরিবার ॥
এক হাজী সাহেবের,
নাম যশ সবকিছু ছিল তার ঢের,
কানায়কানা ষোলআনা যেন তা পূরো একসের,
ছিল দুই কন্যা আর তিন পূত্রের সাজানো সুন্দর সংসার ॥
তারা সবাই নামাজী অতিশয় সম্ভান্ত,
নীতি ও আদর্শে ছুতে চায় অদেখায় বিজয়ের শেষ প্রান্ত,
কত বাধা কত পিছুটান এই বুঝি যায় প্রাণ যায় মান তেড়ে আসে দূষমন করে দিতে ক্ষান্ত,
কেউ আছে পারেনা তবু কভূ হারেনা আশা আর চেষ্টাটা ছাড়েনা মিথ্যা ও মন্দের হাতে হয়না মরন অঁচল কিবা শান্ত,
তাই যদি সফল হতো কারো কি কভূ ভাগ্যে জুটিতো অচেনা অসীম পথে জান্নাতে যাবার ॥
ছোটমেয়ে রুপসী বলে সবার নজর কাড়ে,
বালিকা বয়সে হলো তার বিয়ে পাশের গ্রামের ধনাট্য পরিবারে,
ভালো ঘরেই হয়েছিল বিয়ে হাজী সাহেবের দুই কন্যার ॥
তবুও তারপর,
ঐ ঘরে কেউ ছিলনা কারো পর,
সংসারে থাকে এমন কত অজানা খবর,
এক সুন্দরী বালিকা কন্যার কালো পূর্ণপূরুষ বর,
খুশীতে নয় অন্তরে বয় অশান্তির নিরব তুমুল অদেখা ঝড়,
মৃত্যুর পরে নাকি বুঝেছিল সবে তাই হয়েছিল তার কালব্যাধি কালাজ্বর,
আজও বলাবলি করে লোকে বুঝিবা শুধু এই শোকে জীবন প্রদীপখানা নিভে গিয়েছিল তার মা’র ॥
কি লিখন বিধাতার,
ঘটেছিল হয়েছিল তাই, যা ছিল ইচ্ছে তার,
স্ত্রী বিয়োগ হলো হাজী সাহেবের কে লবে এখন এ সংসারের ভার,
তাই আবার বিয়ে করা জরুরী হয়ে পড়ে তার যা ছিল হয়তোবা সময়ের নির্মম শিকার ॥
সৎ মা সৎ বাবা ভালোনা,
সন্তানের মনে গড়ে উঠা এই ধারনা,
তারা দূষমন পর আপনতো কেউনা,  
সে থেকে শুরু হলো নব এক বিড়ম্বনা,
সবকিছুতে শুধু বাধা আর নিষেধ ও মানা,
মনেহয় হেন দুটি পক্ষ তারা যেন কেউ কারোনা,
এ বিষে ভরে যায় ঘর, হয় গোধূলীময় আপন ভূবনখানা,
অযথা কেন এ বিরোধ,
কে যেন পথ করিতে চাহে রোধ,
তারা কি সকলেই তবে ছিল এমনই নির্বোধ,
হিংসা নিন্দা ক্ষোভ অপবাদ একোন ক্রোধময় অর্থহীন প্রতিশোধ,
কত পিছুটান,
কেউ আড় চোখে চান,
নেই বিনিময় আদর ও সম্মান,
তেতো কথা বলে বাঁকা করে মোখখান,
কেউ যদি কিছু চায়,
মনে হয় পড়ল মাথায় মস্তবড় বোঝা দায়,
পাওনাটা কই বাঁচিবে কেন তারা তোদের কিবা অন্যলোকের করুনায়,
তার নেই পক্ষপাত মহান ঐ মহা পাকজাত যার দয়ায় এ বিশ্বটা চীরকাল বাঁচে ও চলে খায়,
মোখ কালো হয়ে যায়, কিছু দিলেও ভাবটা এমন দেখায় যেন রচিল ইতিহাস করিল সে এক মহৎ ও মহাদান,
জনেজনে মনেমনে কত চাপা সাধ অভিযোগ অভিলাশ ও অভিমান,
তবু বাবামায় অনেক আশায় আছে বসে রশিটা ধরে কষে করে টান,
কারো বদন মলিন নাই যেন বড়র কোন দায় ঋন তাই হাসিটা হয়ে যেতে চায় ম্লান,
রয়েছে আকাশে তার স্বাক্ষী প্রমান কত ঠকানো অদৃশ্যমান শত শুক্ষ্ন অন্যায় অবিচার অত্যাচার কিবা দূর্ব্যাবহার ॥
দুনিয়ায় কোন তার স্বাক্ষী প্রমান নেই,
ইচ্ছে নেই কারো কাছে তার চাই বিচার কিবা কোন নালিশ দেই,
কষ্টের গল্পের কেউ করবেনা দোষ স্বীকার হবেনা ফরিয়াদির সান্তনা কিবা ক্ষতির পূরণ এ জগতে কিছুতেই,
কেউ চায় বা না চায়,
তা বিশ্বপ্রভূ হক্কের হাকিমের মহত্ব ও দায়,
রোজ হাশরে হবেন বিচারক আর তিনি করিবেন সবার সব কথা ও কাজের সত্য সঠিক ন্যায় বিচার ॥
কেউ নাহয় বললো মোখে ক্ষমা,
কি হবে তার যা বালামে হয়েছে লেখা বিধাতার আরশে পড়েছে জমা,
লোকের অন্তরে যে কষ্ট অদৃশ্য ও অস্পষ্ট ঢেকে রাখে তা হাসি দিয়ে মনোরমা,  
দেনা ও পানার তাদেরও হবে বিচার যে দুজনা পরম বন্ধু আপন প্রিয়তম প্রিয়তমা,  
কি হবে তার গড়েছে তারা যে ব্যাবধান আর বেদনাময় যা ভোলার নয় এমনই এক স্মৃতির পাহাড় ॥
ঐ সে মহান আদালতে,
কে আছে এমন আপন ইচ্ছা কিবা কৌশলে জেতে,
মহা করুনাময় লাশরীক পাকজাত,
নেই যার কারচুপি অন্যায় কিবা কোন পক্ষপাত,
এ জগতে কত ছল কৌশল,
বিদ্যা মেধা ধন ও লম্বাহাত ক্ষমতার বল,
অন্যায় যূলূম অহংকার যেন ছুয়েছে পাহাড়, ঐ নষ্ট মানুষের দল,
লোভ মোহ ও ভোগের নেশা অন্যায় আর প্রতারণা যেন হয়েছে পেশা করেছে আকন্ঠ তল,
যতই করুক ক্রন্দন মিনতি ও হাহাকার,
কে দেবে তাদেরে ছাড়, না শোধে লোকের বকেয়া পাওনা ঋন তারা কি সেদিন পাবে পার ॥    
সৎ মায়ের নতুন সংসার,
হয়েছিলো তার পাঁচ পূত্র ও তিন কন্যার,
নিস্পেষনের ভাগার যেন গোলাকার চারিদিকে এক ঘের দেওয়া কাঁটাতার,
খেতে পারেনা যদিও গাছে,
নানান রকম পাকা ফলগুলো ঝুলে আছে,
আগের সংসারের কন্যা-জামাতা ও পূত্র-পূত্রবধূদের কাছে,
সব কুঠুরির সবগুলি চাবী, পরের ঘরের তারা সবে যেন জিম্মি জড়সড় কিবা অপরাধী আসামী সম ছোট হয়ে আছে,
হয়েছিল বুড়ো বাবা সৎমা ও তার,
গর্ভের সব সন্তানদের সকলের এমনই পরাজয় হার,
নাহলে হয়তো জীবন হতো আরও সুন্দর এ ভূবন পসর তাদের সবার ॥
তাদের ভাগে সবকিছু কমকম,
তবে চাপ ও প্রভাব জবাবদিহিতা চরম,
নালিশ অভিযোগ ও বিচার শোনতে ভালো লাগেনা আর হরদম,
সবকিছু হয় ঘটে বড়দের চাপে পড়ে,
মেঝো পূত্রের কাছে একটা সরস জমি বিক্রয় করে,
তারপরে হজ্ব করে বাবা ফিরে এলেন তার আপনার কারাগার ঘরে,
আমার নিজের চোখে দেখা,
দেখেদেখেও অনেক শেখা আর তাইতো এ নিয়ে দুকলম লেখা,
একই পিতার গড়া পরিবার, তবু সব থেকেও তারা ছিল বড় কোনঠাসা অসহায় ও একা,  
বড়রা কেউ দেয়নি ছাড়,
কোন সুযোগ কিবা পাওনা সব অধিকার,
ছিল শুধু অবহেলা নিত্য সারাবেলা আর ভর্ৎসনা ও তিরস্কার,
চৈত্রের কাঠফাটা রোদ পৌষের শীত বোশেখের তান্ডব ঝড় কিবা অমাবশ্যার অন্ধকার,
সবকিছুতে শুধু নাই নাই এমনি করেই তারা সবাই সাঁতরে সাঁতরে হয়েছিল ঐ বিশাল নদীটা পার ॥
সৎ মা ও তার এক মেয়ে,
পাশের গাঁয়ের ধনাট্য ঐ জামাতার ঘরে যেয়ে,
প্রায়ই ডাকিত যখন ঠিক তখনই তারা যেতো সেখানে ছুটে ধেয়ে,
কিসের লেখাপড়া কামাইশোধ ছেলের মেজাজ কড়া চুপসে যেতো সবে তার বকুনি খেয়ে,
বাঁদীর মত সারাদিন খেটে সন্ধাবেলায় তারা হেটেহেটে আসতো বাড়ী যেন গায়ের ঘামেতে নেয়ে,
করে দিয়ে ঐ ঘরের সব কাজ,
গুটিয়ে লেজ গলা টিপে ধরে সব তেজ দ্বিধা ভয় ও লাজ,
চিড়া কূটা উঠান ঝাড়– মসলা বাটা ডেকচিহাড়ি ও বস্ত্রাদি ধোয়াধায়ি কুটাবাটা রান্না ও আলনা বিছানা ভাজ,
হলে সমাপন বিষন্ন মন হামেশাই হতো এমন ফিরতো ঘরে যখন সামান্য নগন্য ফেলনা খাবার খেয়ে কিবা না খেয়ে,
ভয়ে মামেয়ের মোখ বন্ধ,
সবারই ভোতা বিবেক চক্ষু দুটিও অন্ধ,
কেজানে কোন দোষে তাদের কপাল হয়েছিল হেন মন্দ,
নাই জানা বিধাতার ঐ আরশে গিয়া লেগেছিল কিনা কিশোরীর অস্ফুট গোপন কষ্ট বিষাদ ভরা আর্তনাদ ও হাহাকার ॥
কেন এত কৃপনতা,
বলা যায় মূর্খের র্নিলজ্জ স্বার্থপরতা,
নাহলে কেন বিনামূল্যে আপন জনেরে এমন অযথা,
আবু হকে কহে, খাটানো সেকি তবে নহে এক নির্মমতা কিবা নিষ্ঠুরতা,
বাবামার প্রতি ক্রোধ আর সৎ ভাইবোনের প্রতি হিংসার অপশোধ ছিল কিনা এই দীনতা,
নির্বুদ্ধিতা নহে তা ছিল প্রদর্শন, দেখো আমার কত হীন মন, লম্বা হাত ও রয়েছে কত বড় ক্ষমতা,  
থেকেও এত ধন কেন এত ছোট মন হেন দীনতা, তারা কি পায়নি তবে সে বাণী ও বারতা কি হবে আখেরাতে তার বিনিময় ও উপহার ॥
অ আমার বড়লোক বোন,
কি বলি কানপেতে মন দিয়ে শোন,
একই ঠিকানা ধাম,
সৎমার ঘরে কেনযে এলাম,
এই দোষে কি হারালাম সবটুকু দাম,
মূল্যহীন সারাদিনের পরিশ্রমের শতফোটা ঘাম,
যখন তখন যদি চাহে মন কত ফরমায়েস যেন শেষ হয়না কাম,
বিধাতারে স্বাক্ষী রেখে তার চরনে কপাল থুই,
একই পিতার সন্তান ছিলাম বোনগো আমি আর তুই,
তুই পালংকে আর হোগলার বিছানা পেতে আমি মাটিতে শুই,
অন্যায় আর অবিচার দুনিয়ার মাটিতে রেখে গেলি কেন চারা রুই,
ছিল ছিন্ন বসন একটু খুশবো তেল কত চাহিত মন বাংলাসাবানে মাথা ধুই,
হতভাগ্য মোরা,
পান্তা ভাতে মরিচ পোড়া,
তোর সনে কি হয়গো মোদের জোড়া,
বুবু ঐ কঠিন সময়টুকু প্রভু করেছেন পার,
অপার দয়া তার আর মারাতে হয়নি কভূ আমার,
বিধাতার করুনায় দিন বদলায় তোমাদের ঐ সোনার দেউরী সোনালী চৌকাঠ ও দুয়ার,
জোয়ার ভাটায় সুখে দুঃখে এ ধরনীর বুকে এইতো জীবন কখনো আলো কখনো আঁধার কারো জিত কারোবা হার ॥  
লোকেরে খাটিয়ে,
কিবা কারেও এমন ঠকিয়ে,
নায্য তার পাওনাটুকু নাহি দিয়ে,
হলোকি আসলে জিত নাকি তার বিপরীত,
যখন মাটিতে শোয়াবে সটান অসার রবে হয়ে চিৎ,
বুঝিবে সকলে তার আপনার ঠক ফিরে পেলে ফের সম্বিত,
কি হবে উপায় যদিরে ঐ দায় শোধিতে হয় শুধু পূণ্যের বিনিময়ে,
দুদিনের দুনিয়ায় এসে যদি হিসাবে শেষে বেশী হয় দেনা প্রাপ্তির চেয়ে,
গলদ বুঝের মূলে, আহারে নিজের ভূলে কি হারালাম বিনিময়ে তার কি পেয়ে,  
লাগি স্বার্থ বিজয় ও লাভ আপনার,
ভালোবাসা নয় জেনেবুঝে শুধু আঘাত করেছ বারবার,
নেতা মানে গুনেগানে নতশিরে রহে সদা ঘিরে সালাম ঠুকে মানে সরদার,
যারা ছিল দুনিয়ায় তোমার বিবেচনা কিবা গননার বার, একেবারে অপদার্থ আর হতচ্ছাড়,
তারা কি হবে কভূ হেন মহৎ উদার যেথা শুধু নিদান আর হাহাকার তোমারে দিবে কি আখেরাতে তার পাওনার সামান্য ছাড় ॥
হায় তারা কে কোথায় আজ,
মুছে যায়নি দপ্তরে দলিল হয়ে আছে সবার সব কাজ,
গেলো কোথায় তাদের ঐ অহংকার ও বাহাদুরী আর হিংস্র বন্য রণসাজ,
র্নিবিচারে নিরীহ প্রাণ বধ ময়ূর সিংহাসন মসনদ ঝলমল শাহী মহল মনিমুক্তার সোনার তাজ,
কেমনে হায় তা এত অল্পদিনে,
মজিল ডুবিল করিল গ্রাস কোন সে রাক্ষুসে ঋনে,
বহু যূগ ধরে তিলতিল করে যা গড়ে তুলেছিল তারা নানা রণে প্রাণপনে,
এমন একটা সোনার সংসার, এত ধনজন ভোগবিলাস বিনোদন ছিল যার, হয়ে গেলো কেন কবে বিলীন ও ছাড়খাড় ॥