পর্ব - ০১


তা নিয়ে কে ভাবে আর,
সে তৃতীয় নয়নইবা আছে কয়জনার,
এ যূগে এ দুনিয়ায় বলো হায়, কে কার খবর রাখে লয় ॥
দেখেছি প্রায় সব শিক্ষিত ঘরে,
শিশুদের হাতে বড় মোবাইল যারা পড়েছে মাত্র ৪/৫ বছরে,
দেখেছি এক প্রতিবেশীর পঞ্চম শ্রেনীর বালিকা ইউটিউব বিচরে স্বচ্ছন্দে বেড়ায় ঘুরে,
ছেলে হয়েও আমরা যা দেখিনি বুঝিনি ২০/২৫ বছর বয়সের আগে ঘুরেও খোলা দশ দিকে বাহিরে,
কি জানি কি হয়, তা হবে হয়ত মহাভয়ংকর নিশ্চয়, শত বছর পরে ভাবতে লাগে মোর ভয় ॥
পাশের কামড়ায় বা ঘরে,
খিড়কি-দুয়ার এঁটে ছেলেমেয়েরা কি করে,
যারা হয়েছে বড়, স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে,
তারাই দেখি বেশী বেহিসেবী, বেশী অবিবেচক আধুনিকতার চক্করে,
কেউ দেখি শৈশবেই যেন পাকা, আবার কেউ হয়নি আসলেই বুঝের পঁচিশ/ত্রিশ বছরে,
তারা আসলে কি পড়ে,
এই কি লেখাপড়া, এভাবেই কি জীবন গড়ে,
অনেক সময় নাকি আছে পড়ে, তা্ই এখন করছে চাট হবে পাঠ নাহয় পরে,
দেখো মা আমি হবো কিছু একটা বিরাট, যদিও বাবায় দূর্ভাবনায় মায়ের তাতে যায় বুক ভরে,
নাকি রস বিনোদন খোশগল্প করে ও মজার আড্ডা হয়, করছে নষ্ট জীবন গড়ার মূল্যবান ও আসল সময় ॥
দেখেছি তারাও মোবাইল লেপটপ চুরি করে,
বিভোর হয়ে থাকে পড়ে ডুবে নেশার ঘোরে,
যারা হবে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার আর মাত্র কয়দিন পরে,
দেখেছি বস্তীবাসী,
আর অসৎ রোজগার ও অসম ভোগবিলাসী,
ঐ সকল পরিবারে রয়েছে যত কুলাংগার সন্তান এমন ঘরে ঘরে,
আহা সৌভাগ্যবান নাকি হতভাগা ঐ বাবামায়,
দেখেছি মাটি নাহি লাগে যেন তাদের ঐ কোমল রাঙা দুটি পায়,
অনেক লম্বা হাত তাই বুঝি তারা আকাশটা ছুতে চায়, আসলে নয় তবুও ভাবটা এমন যেন তারা ভুবন করেছে জয় ॥
শৈশবে ও কৈশোরে,
এ যুগের ছেলেমেয়েরা থেকে ঘরে,
হয়ে গেছে বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড সবকিছু চেনাজানা,
যে বয়সে আমরা সবাই ছিলাম সে যুগের অবুঝ বলদ ও কানা,
অদৃশ্যমান অচেনা অজানা যা গুরুজনের মানা, বয়সের সনে যা বেমানান খাপ খায়না,
বলো তবে কেমনে হয়ে গেলো তাদের সনে কোন্ কুক্ষণে নিষিদ্ধ ঐ জগতের এত পরিচয় ॥


পর্ব - ০২


এ যুগের শিক্ষিত যুব সমাজ,
তাদের মাথায় নেই কাল ঘুরে শুধু আজ,
করছে লেখাপড়া ও কোন চাকরী বা কাজ,
নেই তাদের সে ভাবনা, কি হলো এ সমাজ,
একি দেখি নেই কারো সংকোচ কোন ভয় লাজ,
হয় তারা সাধারনতঃ মুখরা স্ফূর্তিবাজ ও আড্ডাবাজ,  
জীবনটা এলোমেলো, তবে কেন শুধু চুল ও পোষাকের বাহারি সাজ,
পাঁচ’শ টাকার সার্টপেন্ট ব্র্যান্ডের দোকান থেকে কেন তিনহাজার টাকায় কিনে,
কিছু বললে বলে, তারা নাকি সব বুঝে সব জানে ও ভালোমন্দটা খুব ভাল করে চিনে,
কোনকিছুর তোয়াক্কা কিবা আর, কাউকে পরোয়া না করার বুঝি এটাই মোক্ষম সময় ॥
সারাক্ষণ শুধু গান আর বাজনা,
রঙ মাখা ছবি আঁকা যেন এক আল্পনা,
বাসে বসেও কানে ঢিপলা ভিন্ন তার জগতখানা,
কেউ কিছু বললেও কানে যায়না তারা তা শুনতেও পায়না,
কে কি বললো হায়, তাতে তাদের কি আসে যায় তা নহে ভাবনা,
দেখে দেখে মন্দ শেখে, তাও দেখে যা দেখতে সবাই করে মানা,
যাই শিখাতে চাই ভাবটা এমন যেন এ সবই তাদের জানা,
ঘরের গুরুজন সবাই তাদের কি কোন দায় নাই, এ সমাজ যেন হয়েছে কানা,
কাকে কি বলবো হায়,
কে শুনিবে সে কথা কে লবে তার দায়,
এ দেশী কিবা ভিনদেশী সব নাটক ও সিনেমায়,
নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা ও সন্ত্রাসী সব কৌশল ও তৎপরতা শিখায়,
কি তার কারণ, কেন হয় এমন, দয়া মহত্ব ও উদারতার গল্পকি তারা খুঁজে নাহি পায়,  
কে শোনে কার কথা বাণী ও বারতা, এই বুঝি আধুনিকতা ও ডিজিটাল শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিজয় ॥
ঘুম ও খানার চেয়ে পছন্দ খুউব,
এই ইন্টারনেট, ফেসবুক ও ইউটিউব,
কেউ বেশী আর হতে পারে কেউবা তার একটু কম,
অফিসের কাজ আর চোখ ও মেধার ক্ষতি করে চলছে হরদম,
লেখাপড়া স্নান আহার ও ঘুম, কোনকিছুরই যেন আর নাই কোন নিয়ম,
হয় কি আট ঘন্টার ঘুম নাকি তারচেয়ে কম, তবে কি কল্যাণের চেয়ে হচ্ছে বেশী তার যম,
এই মোবাইলে ওরে,
কমকরে হলেও তারা অপচয় বা নষ্ট করে,
সে কোন বদনেশার ঘের,
ঐ সবে বুঝিবে আর কবে তার জের,
আহা নিত্য দিনের তিনের এক জীবনের কত মূল্যবান ঐ আটঘন্টা সময়, নিজে না বুঝিলে তা বুঝাবার মত নয় ॥


পর্ব - ০৩


আবু হকে বলে,
যদি ঘুম আর এই মোবাইলে,
কিছু অপচয় রয়েছে যানজটের দখলে,
যদি হায় এমনি করে ষোলঘন্টা বিনা কাজে নিত্য যায় চলে,
তবে তাহলে তা ভেবে দেখা দরকার,
দিনের বাকী আটঘন্টায় আর দেশ জাতি ও এ সমাজটার,
কে হলো কতটুকু লাভবান, কে পেলো কোন কল্যাণ বা কোন সেবা উপকার,
ভেবে বলো মেপে সবদিক,
অ মোবাইলের ব্যবহারকারী ও মালিক,
কতখানি তা মিথ্যে কিবা আর কতটুকু সত্য সঠিক,
কোন সে রঙ মাখানো জটপাঁকানো হিড়িক,
জোছনার আলোয় করছে বালুচর চিকচিক,
সে নিজে আর, তার পরিবার ও ঘরসংসার সে খতিয়ান রয়ে গেলো অজানায় ভুলেভরা শত সংসয় ॥
রেললাইনের পাশ ধরে,
গড়ে উঠা ঐ বস্তিসমুহের চত্বরে,
দেখি সারাদিন দলবেধে বিনাকাজে ঘুরেফিরে,
জবাব খুঁজে নাহি পাই, কত প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায় তাদেরে ঘিরে
এত দামী মোবাইল কই পায় তারা,
জানিনা কেমন করে ভেবে ভেবে আমি হই দিশাহারা,
আমারে বিদ্ধ করে নানা প্রশ্ন বাণ,
বড় জানতে ইচ্ছে করে তারা কোন বাবামায়ের সন্তান,
হাতে কত বড় এনরয়েড মোবাইল,
নাই লেখাপড়া নাওয়া খাওয়া ও ঘুম, কোন কাজ কিবা ভয়লাজ, খায় ইয়াবা নাহয় ডাইল,
এ সমাজ ও সরকার বুঝিনা কেমনে আমি প্রশংসা করিব কার ও গাহিব ঐ বিজয় ॥
সবে জেনে বুঝে ও দেখে,
না বুঝার না দেখার ভান করে যেন রাখে ঢেকে,
জানিনা কি তার লাভক্ষতি,
নিশ্চয় মন্দ কাজের হবেই মন্দ পরিনতি,
শেষে কি লাভ হবে, দোষ দিলেই কি বদলে যাবে ঐ নিয়তি,
কেজানে সহসা পড়বে কোন বেহালে, কপালের হয় কিবা কোন দশা রে কোন গতি,
ওরে কবে তাদের হবে তাদের চেতনা কি সুমতি, ঐ বাবামার গায়ে বুঝিনা তা কেমনে সয় ॥


পর্ব - ০৪


বীজ গুনে জন্মে চারা,
আর তাতেই ফল বিশ্বাস করেনা যারা,
কে আর তবে, ওগো বলো হবে বিফল ঐ হতভাগাদের ছাড়া,
বাবামা দুইজন,
উভয়ে সুশিক্ষিত ও বিচক্ষণ,
যুবক-যুবতী মোবাইল টিপে সারাক্ষণ,
ঐ ঔরসে ও গর্ভে আসিছে যেই নতুন মানব জীবন,
মাবাবার স্বভাব বদঅভ্যাস ও সব মন্দ আচরণ কেমনে সে করিবে বর্জন,
শুনি আশেপাশে ও ভাবি তার কি কারণ,
২/৩ বছরের শিশুর কি বিকট চিৎকার ও অস্বাভাবিক ও দুঃসহ সে জ্বালাতন,
বলো কি দোষ ঐ শিশুটার, দশ মাস দশ দিন তার শিক্ষার দায় না নিলে বাবামায় কে তা করিবে গ্রহন,
ডিজিটাল যুগের দায়ভার ঐ ডিজিটাল শিশুটি কি তার বাবামার দোষত্রুটি ও গুনগুলি থেকে কভু আলাদা হয় ॥
ছুটা বাসায় যারা ঝি এর কাজ করে,
দেখেছি রাস্তায় দাড়িয়ে গার্মেন্টস এর বালিকা শ্রমিকদের ছুটির পরে,
এই মোবাইল কেন আমি পারিনি ওরে,
দেশে-বিদেশে ঘুরেঘুরে চাকরী করেও জুটাতে একখান তা দীর্ঘ আটত্রিশ বছরে,
কলেজের সব ছেলেমেয়েদের হাতেও দেখি তাই,
বুঝি ভাই তাদের কারো বাবামার সংসারেই কোন অভাব অনটন নাই,
দেখি রেখেছে আদরে,
সবাই মুঠো করে তাই ধরে,
এতবড় মোবাইল তার ‍বুঝিনা কি প্রয়োজন,
অবাক হয়ে দেখি লম্বা কোর্তা ও দাড়ি-টুপির ঐ নামাজীগন,
ষাটোর্ধ বয়সে যারা নিত্য পাঁচবার করিছেন মসজিদে গমন,
জানেনা যারা তার ব্যবহার,
জানিনা তাদের কি দরকার,
আধহাত লম্বা ঐ এনরয়েড মোবাইলটার,
চার রাকাত নামাজে যদি তার রিং বাজে তা একাধিকবার,
সে কি তবে নামাজের ক্ষতি নয়,
এতে জামাতে শরীক মুসল্লীগন স্বভাবতঃই বিরক্ত ও ক্ষিপ্ত হয়,
যখন নামাজের খেয়াল ও মনোযোগ যায় টুটে হায় ছুটে কিছুতেই আর অক্ষত নাহি রয় ॥


পর্ব - ০৫


হয়তো ফেলতে পারেনি তাদের ঐ আবদার,
ভালো রোজগেরে কোন ছেলে কিবা মেয়ে তারে দিয়েছে উপহার,
সাইলেন্ট করা, বন্ধকরা ও ওপেনকরা, কল কেটে দেওয়া বা রিসিভকরা জানা নেই তার,  
কেন একই ভুল করা প্রতিদিন আবার,
মসজিদের দেয়ালে লেখা আছে তা করিতে প্রচার,
ইমামসাহেব প্রতি ওয়াক্তে বলে দিচ্ছেন একই কথা বারবার,
মোবাইল ফোন বন্ধ করুন কিবা বন্ধ রাখুন ঐ ঘোষনায় তার,
কেন তবু তা বন্ধ বা সাইলেন্ট করেনা তারা যখন সময় হয় মসজিদে ঢোকার,
কেন তাদের হয়না তাছির, এটাতো তারই দায়ভার,
ঐ মোবাইলখানা যার, কিবা যেজন সেটি করছেন ব্যবহার,
ওরে ভাই শিখতে হয় ও শেখাতে হয়, কভু শেষ নাই জীবনে শেখার,
দিলে তাতে কিছুটা ছাড় কিবা করলে মসজিদের আদবের ঠিকঠাক ব্যবহার কি এমন ক্ষতিটা হয় ॥
যেজন বিনয়ে জড়সড়,
ছোট নয় বরং সে ইতো সবার বড়,
নহে কোন নেশায় বিভোর,
কিবা নহে কেহ কভু বিবেকের চোর,
মহান আল্লাহর এই ঘর,
নিঁখুত নির্দোষ হবার শ্রেষ্ঠ মজলিস ও আসর,
চলন ও বলন সবকিছু সবার হয় যেন অতি মনোরম ও মনোহর,
কজনের আছে জানা তাহা, নবীজীর আখলাক আহা ছিল কতযে উদার, মহান ও সুন্দর,
আগে দোষগুলিরে সব করে জয়,
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ হবার রয়েছে মানুষের যে সম্মান সেতো মিছে নয়,
এমন একজন ভালো মানুষ হলেই তবে মুসলমান হওয়া যায় ও এভাবেই ওরে তা হতে হয়,
সেইতো উপায় সেইতো পথ বিধাতার খাস গোলাম হবার, নামাজীর লক্ষ্য ও পরিচয় ॥
নামাজের শেষে,
মসজিদের দুয়ারে এসে,
খাড়া হয়ে সবে দাড়িয়ে দরজায়,
চটিগুলি সবে ছুড়ে ফেলে মাটিতে যা ধূলা উড়ায়,
প্রতি সেকেন্ডে কিছুক্ষণ ব্যপী তা একটা চটাশ চটাশ বিশ্রী ধ্বনিও ছড়ায়,
এ বোধটা যদি সবার মাথায় হয় অতি সহজেই ঐ ধ্বনি ও ধূলির উড়াল রোধ করাটা তেমন কঠিন কিছুই নয় ॥  
কেউবা আবার ঘরে,
ধড়ফড়িয়ে ও আক্ষেপ করে মরে,
কেনরে হলোনা চার বিয়ের বিধান নারীদের তরে,
বিধাতার বিধান লংঘন, সে এক অভিশপ্ত জীবন ছলনা ও কলংকময়,
ওরে অ অবুঝ বোঁকা,
সে কি নাহিরে ভাবনার এক মস্ত ধোকা,
প্রতারণা ও ফাঁকি, ছোট্ট জীবনের কদিন আর রয়েছে বাকী, সেকি নয় এক পরাজয় ও মহাঅবক্ষয় ॥