পর্ব - ০১


আহারে কে ভুলিতে পারে, খা খা বলা ও করা মার ঐ জ্বালাতন ॥
মনে পড়ে আজিকে এখন,
মায়ের এত সোহাগ আদর ও যতন,
শৈশব ছেড়ে কৈশোরে আমি পা রাখিতে চাইছি যখন,
কত বাধা কত সে বারণ, কে আছে বলো এ জগতে আহা মায়ের মতন ॥
খারে যাদু খা,
তাড়াতাড়ি তুই বড় হয়ে যা,
আমার খোকা বড় হবে তবেইতো দূর হবে মার দুঃক্ষটা,
শুধু খা খা সারাদিন বারবার,
ঐ একই কথা বেশী ছিল মোখেেতে তার,
মায়ের সে স্বপ্ন আশার, আমিইতো ছিলেম তার, সাত রাজার ধন মানিক রতন ॥
কায়ঃমনে চায়,
এক অভাগীনি মায়,
এ পাড়ার সবার সেরা হয়ে যায়,
হয় নাদুসনুদুস মোটাতাজা,
সব শিশুদের মাঝে যেন হয় সে একটাই রাজা,
মায়ের নয়নের মনি কলিজার টুকরা, ঐ কালো ছেলেটা তার আদরের বাছাধন ॥
উঠানে খেলার সময়,
সন্ধা না হতেই মার ছিল কত ভয়,
বলে ওরে বাবা ঘরে আয়,
সবাই সজাগ শুধু আমারেই কেন মায়,
জানিনা কেন বলে ওরে বাবা ঘুমাতে যা বিছানায়,
সব ভাই-বোনেরা আমায়,
আসে তেড়ে চুল টানে ও কান ধরে, মারিতে চায়,
কেজানে সে কি সবার ছোট ছিলাম বলে, দেখেছি সবাই শুধু ধমকায়,
শুধু মার মন ও তার অদুটি নয়ন, মোর পিছে পিছে লেগে থাকে নিত্য সারাদিন সারাক্ষণ ॥
কেমন সন্তান আমি,
আসলে কি হতে পেরেছিলেম দামী,  
পড়ে গিয়ে একটু ব্যথা পেলে কিবা গরমে গেলেও ঘামী,
যাদু সোনা বলে, টেনে ধরে মুছে দিতো আঁচলে তাও করতাম কতযে ঘারামি,
আজ মন জানিতে চায়, জানিনা হয়েছিল কিনা হায়, আমার মায়ের সে স্বপ্ন আশার পূরণ ॥


পর্ব - ০২


ঐ মায়ার চোখে চোখে,
ওরে কেন সে ধরে যেন বেধে রাখে,
ক্ষনিক না দেখিলে নাম ধরে চিৎকার করে ডাকে,
হয়ত জবাব নাহয় ছুটে গিয়ে কাছে, দেখা করার অপেক্ষায় থাকে,
মা নেই, তবে ঐ দিনগুলি আজও রয়েছে মোর বিভোর ব্যথাতুর স্মৃতিতে স্বরণ ॥
বদলে গেছে সময় নেই আর সেই আগের দিন,
অনেক ধনে হয়েছি ধনী, তবু কেন জানি দেখি বেড়েছে আমার বহু ঋন,
মা আমার হায় থাকে বাড়ীতে,
কেজানে হায় কি খায় কি আছে তার হাড়িতে,
আমিতো চাইনি তবু কেনযে হয়েছে আমায় তাদেরে এসে ছাড়িতে,
মন দিয়ে যার পেয়েছি মন,
তারে লয়ে ঐ আমরা দুজন, পেয়েছি কত সুখের জীবন, বড় শহরে থাকি এখন ॥
বড়তো আমি হয়েছি,
কি দায় তবে কাঁধে তুলে লয়েছি,
কি লাভ হয়েছে মার, কবে কোন সেবা উপকার তাদের আমি করেছি,
প্রায়ই ফোন করে কেমন আছি,
শুধু জানতে চায়, খাবার খেয়েছি কি না খেয়েছি,
আমি কি ওরে চেয়েছি কভু,
জানিনা কেনযে হায় পেয়েছি এমন তবু,
কই তুমি মাগো মা - মোর আদরিণী সোহাগিনী মায়াবতী মা,
তোমার ছেলে আজ কেমন আছে আর কেমনে তার দিন যায় একবার এসে দেখে যা,
সীমাহীন ব্যস্ততা আর, বেশী ধন বেশী সুখ ও বেশী টাকার এ জীবনটা করেছি বরণ ॥
একা হয়ে গেছে মোর বুড়ো বাবামা,
কত কথা কত কাজ দায়, রয়েছে হায় অনাদায় জমা,
ছিল মোর কত দোষত্রুটি ভুল কেজানে হয়েছিল কিনা তার কোন ক্ষমা,
মায়ার পাহাড় ও বিশাল বটগাছটা নিবিড় ছায়ার, কে হবে আর সম তাদের যেমন ছিল তারা দুইজন ॥
সেই পূরনো দিন,
ভেবে মনটা হয়ে যায়যে মলিন,
আমি কেন ওরে এমন ভাগ্যাহত,
পেলামনা দিন সময়গুলো মোর মনের মত,
নাবলা মনের লুকানো সাধ ও কষ্টের আহত বাসনাগুলি যত,
আক্ষেপ করে বিষাদে ভরে, গলাগলি ধরে বসে অন্ধকারে নিরবে আজ করিছে ক্রন্দন ॥


পর্ব - ০৩


যদি হতো সাধগুলি মোর,
ভেংগে বন্দিশালার লৌহ কপাট দ্বোর,
পেতো সন্ধান পেতো নব প্রাণ সোনালী আলোর ভোর,
হয়তো আমাকে আজ হতে হতোনা বিবেকের কাছে এক অপরাধী ও চোর,
মাবাবাতো আজ আর নেই, এটাওটা খাবার কিবা কোন উপহার কেমনে দেই, যদিও কেটেছে মনের সব ঘোর,
আমার আবেগে আকুল কষ্টভরা মন,
আহত চাওয়া আর, অনুভব ও চেতনার ঐ ধিক দেওয়া বারবার এমন কত সাধ না হওয়া সাধন ॥
সবকিছু আধাটা অনটনে করা গ্রাস,
গাদাগাদি করে এক ঘরে ছিলযে বসবাস,
তবু হেথা ছিল কত ভালবাসা নির্ভরতা ও বিশ্বাস,
কত কাড়াকাড়ি ও হৈ চৈ হতো ঠান্ডা লড়াই নিয়ে ছাইপাশ,
তীর্যক কথার বাণ কিবা উপহাস,
কেউ অভিমানে কথা না বলা কেউবা রহে উপবাস,
এই যেন বন্ধু হঠাৎ আবার শেষে জানিনা কেন হতো শুরু দুষমনি ত্রাস,
আজ কেমনে তা হলো বিনাশ,
ঐ সে দিনগুলি মরমের ঢাকনা খুলি আমারে যেন করে শুধু উপহাস,
সব কিছুতে শুধু অভিনয়, ব্যস্ত এক বিভোর বলয় আপন আপন যত সব স্বপ্ন বিলাস,
হলেও অনেক বিদ্যা ও ধন, কত ছোট হয়ে গেছে যেন মন, কত কাজে এখনও হইনিতো পাশ,
বসবাস যার হোকনা যেই পুর,
মনের জগতে যেন সবে আজ তারা বহুদূর,
সবকিছু একেবারে আলাদা ভিন, অন্তরের আসন মলিন এখন,
কে কোথায় আজ তারা সবাই আছে কেমন, ঐ এক ঘরের ভাইবোন মোরা ছিলেম যে নয়জন ॥
যখন মাঝেমাঝে মনে পড়ে,
বিচ্ছেদের নিরব প্রহরে আমারে কাতর করে,
আজ আর কেনরে তা নাই,
বলোনা কোথা গেলে পাবো তাই,
আর কি নতুন কিবা ঐ পূরাতন এই ভবে,
জ্বালাতন করে বায়না ধরে ফায়দা নেবার কলরবে,
হেথা ফিরে যাওয়া কিবা তা কোনদিন পাওয়া কিরে কারো হবে,  
মাবাবা ভাইবোন সবার সনে, দারুণ মজার ঐ ছোট্টবেলার রঙীন মধুর ক্ষণে আমার প্রিয় সেই সোনালী ভুবন ॥


পর্ব - ০৪


হ্যালো হ্যালো হ্যালো,
আচমকা একদিন হায় কি খবর এলো,
বুঝি হায় তেল ফুরিয়ে একটা ঘর আঁধারে দিয়ে ভরে উজ্জল দীপখানা নিভে গেলো,
মা আমার আর নেই, হয়ত কষ্টের বিষাদেই, নাজানি কোন অভিমানে দূর বিজনে নিরবে সে চীরতরে করেছে পলায়ন ॥
একদা ছিল আহা কত অনটন,
আজ কত টাকা কত সুখ কত ধন বিনোদন,
কি দিয়েছি তাদের, যাদের মাঝে এসে এ দুনিয়া দরশন,
যাদের উছিলায় ধন্য আজিকে এ জীবন,
বুঝি সব আছে শুধু নেই তারা, নেই মোর সেই আগের মতন সবুজ সরল মন,
এইতো জীবন ভাই,
দেখি এই আছে আর এই নাই,
ছিল যার সে অফুরান নেয়ামত দান,
একবার দেয় আবার কেড়ে নেয়, এই বুঝিরে বিধির বিধান,
শুনেছি দিয়ে ধন চায় মন, যাচাই করা হলে সমাপন, তা আবার করে হরণ দাদনের ঐ মহাজন ॥
সেইযে ডানা গজালো দিলাম উড়াল,
দেশে দেশে বনে বনে গাছে গাছে এডাল থেকে ওডাল,
পেলাম অন্যরকম এক জগত বিশাল,
মিষ্টি ও দধি, নানা ফল, ঘি ও পোলার চাল,
তবু এক জায়গায়,
গোপনে গহীনে যেন কুড়েকুড়ে খায়,
গভীর নির্জনতা, একাকিত্ব, শূন্যতা, বিষন্নতা ও দীনতায়,
কত সাগর নদী, নাও ভাসালাম উড়িয়ে রাঙা পাল,
ভেবোনা মাগো, এখন আমারে তোমার বউয়ে করে ষোলআনা ঠিকঠাক দেখভাল,
তব বৌরানী মোর সজনী,আলগা হয়েছে মন ছিলযে সদা মায়ের সোহাগ কাঙাল,
তবু তোমার ঐ চরণ ধূলি,
শিরে তব হাতের পরশ নামাজে বসে করা দোয়াগুলি,
আজ বুঝেতেছি মা, তুমি করে দিও মোর দোষগুলি ক্ষমা, পুণ্য আর দোয়ার ঝোলাটা খুলি,
আর কপালে তোমার সোহাগ চুম্বন, কেমনে কবে মাগো আর কি হবে এ জীবনে তার পূরণ ॥
চোখে জল নেই আহারে মন কাঁদে,
সব থেকেও ঢের যেন আমি পড়ে আছিরে বিষম ফাঁদে,
বিভোর যাদুর নেশার ঘের, তাওতো যেন পূরো একসের তা আমোদে নাকি বিষাদে,
পাওয়া না পাওয়ার,
পেয়েও আবার সব হারাবার,
কেউ আগে কেউবা পরে আসা যাওয়ার,
মালিক সে, শুধু একজন এ মহাবিশ্বটার,
সে এক মজার খেলা, নিশীদিন সারাবেলা মহান বিধাতার,
চলছে চলবে, সৃজন নিধন দাদনের মহাজন, লালন পালন ও ভাংগাগড়ার,
ওরে বিনা গবেষণ যার ভেদ বুঝা ভার, এইতো জীবন,
যখন ইচ্ছে হয় যেমন তার, সবর আর কোরবানীর ইমতেহান লন দিনেরাতে সহস্রবার সারাক্ষণ আজীবন ॥