পর্ব - ০১


না বলে হায়, গোপনে অজানায় সময়যে কত দ্রুত বয়ে চলে যায় ॥
শেষে কি করিবে সে,
কি হবে আর থেকে পারঘাটায় বসে,
ঋনের বোঝাটা মাথায় নিয়ে ক্লান্ত এক দিনের শেষে,
দেখো যদি, ঘাটে তরী মাঝি কিছু নাই,
কে করিবে পার যতই করো আর ভাবনা ও হতাশায় হাহাকার ভাই,
পথহারার আবার কিসের হর্ষ বড়াই, দীনভিখারীর বেশে এক অচিন দেশে সন্ধাবেলায় ॥
সে এক রঙের মেলা,
খেলা আর শুধু নানান মজার খেলা,
সারাদিন সারাবেলা, তাই হয়ে গেছে বড়বেশী অবহেলা,
এখনও সময় আছে শুধু নিজেরই লাগি,
কিছু গবেষণা কিছু দরশন অল্প কিছু রজনী জাগি,
প্রয়োজন জীবনটারে ভালো করে দেখা ও চেনাজানা,
বিনাদামে সামাণ্য কামে কিছু যাদুর পরশ পাথর কেনা এ চুখে যা দেখা যায়না,
না যেন কেহ লোকসানে পড়ে যায়, ক্ষেতি ও বানিজ্য বসতির অদেখা এক লাভক্ষতির বেঁচাকেনায় ॥
দুদিনের এ জীবন,
বড় আয়েশী বিলাসী ও উদাসী মন,
এত বিত্তবেসাত ধন বলো তার লাগি কি প্রয়োজন,
কেমন মানুষজন মত্তবিভোর সারাক্ষণ, পেতে আরও অনেক বেশী ধন,
কেউ জেতে কেউ হেরে যায় তার ভোগবিনোদন বাহার ও না পাওয়ার পেরেশানি হাহাকার তাড়নায় ॥
দলে দলে,
সবে একই কথা বলে,
চলে ধরে হাতে হাত ধরে গলে,
সখা সখীরা তাহলে সবে একসাথে মিলে,
নেঁচে গেয়ে কি পেয়ে কি হারিয়ে যদি হিসাব না মিলে,
ওরে কানা হলোকি জানা মানুষ হয়েছ কিনা, ভর্তী হয়ে দুদিনের এই মাটির পাঠশালায় ॥
জীবনটারে করে দেখি ভাগ,
ক্রোধ আবেগ মোহ উচ্ছাস অভিমান রাগ,
বিজন বালুচর নিঝুম শ্বশানবাড়ী খেয়াঘাট ও কুসুমবাগ,
কত তার মোহ ভুল কোনপথে আছে কূল বিধাতার করুনা ও সোহাগ,
এসো হই মহৎ উদার মহান বহন সহন মেনে লওয়া হার, রই সচেতন ও সজাগ,
কি করছো এখন তুমি তারপর কি কাজ কি দায়, লোকে ও বিধাতায় কে কি চায় ও পায় যেতে হবে তোমারে কোথায় ॥


পর্ব - ০২


শৈশব কৈশোর,
এখন যেন সোনালী ভোর,
এলো নব ফূর্তীর তারুণ্য,
সে এক অন্যজীবন যেন কিছুটা বন্য,
ভরপুর যৌবন,
উরুউরু চঞ্চল এই মন,
এখন নাঁচন ভর দুপুর,
চারিদিকে মধুর গান আর সুর,
অচেনা সে এক মাতাল রঙীন বাসন্তিপুর,
আকাশের পরী রুপসী কুমারী মেঘ বালিকারা যেন চারিধারে ঘুরঘুর,
নদীটার উজানের টান অধীর আহবান ছলছল জল চরগুলি করিতে তল খেলাটা মধুর ॥
আকাশের ঐ চাঁদটারে টেনে ধরে যেন দিতে চায় চুম,
সারাক্ষন চাওয়া পাওয়া আর ভোগবিলাসের তোলপাড় আলোড়ন ধূম,
দেখি এসে প্রান্তে কেমনে অজান্তে জীবনের তিনের এক নিয়েছে কেড়ে হায় অচেতন ঘুম,
কেন তা হলোনা জানা,
ভাবছি এখন তবে কি আমি ছিলেম কানা,
ছিলনা বাঁধন কোন সীমানা, মেঘের ভেলায় শুধু উড়ে ভেসে চলা,
কোন্ ফাঁকে হায় কেটে যায় আশা ভরপূর সবটা দুপুরবেলা লম্ফজম্ফ দৌড়ছুট বন্ধুদের মেলায় ॥
না হলেও একেবারে অঁচল অসার,
এখন সময় যেন শুধু দূর্বলতা আর অক্ষমতার,
প্রৌঢ়ত্ব এসে ঢুকে বাড়ীতে আমারে যেন সবকিছুতে মানাতে চায় হার,
বার্ধক্য এ দেহে বেধে বাসা আর গায় করে ভর প্রাণপণ চেষ্টা তার আমার চলনটা করিতে ভার,
দিনের শেষ পড়ন্ত বিকেল বেলা,
নেই আর সেই দীপ্ত তেজ, গুটিয়ে লেজ নূয়ে পড়া মাটির ঢেলা,
বিরান গোঁধূলী ধূসর ধূ ধূ প্রান্তর যেন বালুচর যা ছিল সবুজ শ্যামল ও সুজলা সুফলা,
একটু পরে ঘন আঁধারে এ জগত ভরে আলোটারে গলা টিপে ধরে করবে মজার খেলা ॥
জীবনের ভাগ করা ছয়,
কেজানে কার কখন এ জীবন সমাপ্ত হয়,
মিথ্যা মন্দ মোহ ভূল না যেন আর পিছু লেগে রয়,
এ মরনের চিঠি বাঁচার উপায়, তা নহে কোন ভয়ের বিষয়,
শুধু বিনোদণ ভোগ চোখ ও মনেরই রোগ সেতো ওরে কাম্য জীবন নয়,
কি আছে সম্বল কার, হতে হবে হিসাব করে তা গুছিয়ে তৈয়ার, কে যাবে আর কি তার সংগে লয়,
হতে হলে পার না হতে আঁধার খুঁজে নিতে সব পথঘাট তার আলোয় ভরা দিনের বেলা ॥


পর্ব - ০৩


বাকী আছে আর শুধু এক,
মনকে বলি দেখনা ঝোলাটা খুলি ভালো করে জেনে বুঝে চেয়ে খুঁজে দেখ,
থাকলে কথা মনের ব্যথা এখনই রাজার সনে দেখা করে কথা বল, নাহলে আমার সংগে চল তার কাছে চিঠি লেখ,
করে নিজেরে শাসন,
হয়ে শুদ্ধ শোধন হোক সাধন,
নহে এ জীবন শুধু ভোগবিনোদন, গান নাঁচ মরার আগে তা করে গঠন ওরে ভোলা মন বাঁচার মত বাঁচ ॥
বিবেকের চোর,
চোখে মাতাল নেশার ঘোর,
বেড়েছে ঋন ঘুমহীন কত রাত হয়েছে ভোর,
হয়েছে সাদা দাড়ি চুল,
স্মৃতিতে ভাসে আর কত অপরাধ ত্রুটি ভুল,
এই বয়সে এসে দিচ্ছি নাতো শেষে তারই মাসুল,
যৌবনের কিছু কাজ দেখে শিহরি আজ পার করে চার কূল,
কিছুই বুঝি এখন আর আমার এই বয়স মন ও দেহটার নহে অনুকূল,
আজ কপালে ভাজ চোখে চশমা,
বকেয়া কত কাজ, কতকিছু রয়েছে বাকী কত কথা জমা,
আর নয় দম্ভ ও দন্দ বিরোধ, মানবতা ও করুনা বোধ, নহে আর প্রতিশোধ শুধুই ক্ষমা ॥
কই নানা ফল দই মিষ্টি ও গরম দুধের সোনার বাটি,
কে কেড়ে নিলো সংসয়ে মন ভরালো, বলে মাছ ডিম দুধ মধু কিছুই আর নহে খাঁটি,
বাতাস ও জল কিছুই আর নহে নির্মল, সোনালী সবুজ এ ধরণী তল আজ কেমনে হলো গরল এ মাটি,
নরম বিছানা নয় চাই শক্ত সমতল পাটি,
মাথায় টুপি লম্বা জামা পকেটে তছবিহ্ হাতে একখানা লাঠি,
ধীরে চলা কম আহার করা ও কম কথা বলা, শিশুর মতন যখন তখন গুটিগুটি পায়ে হাটি ॥
ধীরে ধীরে তারপর,
ছোট হয়ে আসা আপন ভুবন মসজিদ আর ঘর,
এ দেহমন হচ্ছে তৈয়ার হতে অচেতন ও অঁচল নিথর,
কেউ যেন আর নয় আপন, হয়ে যাওয়া এমনই সকলের পর,
না হলেও দেখাশেখা ও চেনাজানা সব শেষ, বিধাতার ঐ সহস্র সুন্দর,
বাজিয়ে ঘন্টা ডাকছে বিদায়ের ক্ষনটা, যাত্রা শুরুর ভিনদেশে এক নতুন সফর ॥


পর্ব - ০৪


হয়েছে একেবারে কোণঠাসা,
সব মোহ আর ভালোবাসা ও স্বপ্ন আশা,
মহাজনের দাদন কত দান নেয়ামত অফুরান সেইতো মাথাভারী ঋন,
জীবন মানে কিছু কাজ ও দায় লয়ে মাথায় মাটির এ দুনিয়ায় অবস্থান কিছুদিন,
কিছু দম কিছু সময় কিছু মন্দ ও কিছু ভালো কাজ,
কিছু লাভক্ষতি কিছু দায়ঋন প্রতিদান বিনিময় পুরস্কার ও তার হিসাবটা শুদ্ধ করা আজ,
আসা যাওয়ার দেশেদেশে ভ্রমণ,
জীবন মানে এই নিয়ে কিছু ভাবনা ও দরশন,
রাখিও স্বরণ অ বোঁকা মানুষগণ জীবনের কভু নাই হয়না মরণ ॥
জীবনের শুরু আছে শেষ নাই,
মেঘের মতন জানিনা কোথায় কখন, অসীম ঐ আকাশে ঘুরে বেড়াই,
অবিরাম সারাক্ষণ কখনও সুখ-বিনোদন কখনও দহন জ্বালাতন ভাই,
সাত সাগর তের নদীর, আকুল অধীর জোয়ার-ভাটার টানে ভাটিতে উজানে ভাসিভাসি শুধু আসি আর যাই,
কখনো পেয়ে কখনো হারিয়ে এক যাযাবর মুসাফির চন্দ্র-তারকার দেশেদেশে হয় সফর যখন যেখানে যেমন ভিসা পাই,
তোমরা যে বলো যাই, যে যেমন বুঝেছ তাই, জীবন ও মরণ উচিৎ শাস্তি-পুরস্কার মহারাজার দান ও হরণ ॥
আসা নিস্পাপ মুসাফির হয়ে,
যাওয়া চক্ষু বুজে অসার অচেতন নশ্বর এ দেহটা লয়ে,
দুনিয়ার বিজয়ী বীর অপরাধী আসামীর পাপ আর কলংকের বিশাল বোঝাটা বয়ে,
পাপগুলি পুড়িয়ে ধূয়েমুছে সাফ করে সব জঞ্জাল,
অবসান হলে নরকের জেল ও সাজা শেষে এক নতুন সকাল,
দানিবে এক নবজীবন আবার সে আসাযাওয়ার এ ধারা চলবে অনাদিকাল,
রাজার কুটুম হয়ে লভে নিমন্ত্রণ যারা করিবে গমন,
রঙ রস আলো ও ভালোয় ভরা সুখ বিনোদন অনন্ত জীবন,
রাজ হুকুমে এক পলকের দমে, রাজার দেশে নিমেষে হয় সে ভ্রমণ,
ইচ্ছে নেই তবুও ছাড়ি ঘরবাড়ী সব ধনজন, করে জনমের তরে ত্যাগ দিয়ে বিসর্জন মরণেরে মানুষ করে আলিংগন ॥