সবে তো মাত্র ১৬ তে স্কুল ছেড়েছিলাম ।
বাবার কাছে জোড় করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছিলাম।
বাবা আমি বড় হয়েছি ।  কলেজে পড়ছি ।
বাবা বলেছিল, ঠিক আছে ।  তবে, আর কি ?  
আমি বলেছিলাম,  কিছুনা বাবা ।  এমনি !  
বাবা বলেছিল, কি ভ্রু কুঁচকাচ্ছো কেন ?  
আকাশসম শির কি তবে নুইয়ে গেল !  
বিরক্তিভাজন চিন্হ মুখে ছাপিয়ে বাবাকে বলেছিলাম,
বাবা ছি !  তুমি এইসব কি কথা বলো ।
উনি মুখ চেপে গাল বাঁকিয়ে মুচকি হাঁসলেন
আর বললেন,  আব্বু আপনি কি আর কিছু বলবেন ?
আমি বললাম,  বাবা তোমায় অনেক ভালবাসি ।  
উনি দাঁতে দাঁত চেপে ক্ষীণ গলায় বললেন,
আব্বু তুমি না অনেক বড় হয়ে গেছো !
আমি উচ্চস্বরে হাঁসতে হাঁসতে দাঁড়িয়ে গিয়ে
ক্ষনিকের মত তাকে দৃষ্টিগোচর করলাম।
সেদিনের মত সাতকাহন এখানেই শেষ হলো।


এরই মাঝে কেটে গেল সময়বাঁধা কয়েকটি বছর।
কলেজের সীমানা পেরিয়ে এসে দাঁড়ালাম ভার্সিটির চত্বরে ।  
সেদিন বাবা কাঁদছিল। সেইসাথে আমিও কাঁদছিলাম ।  
ফোটা ফোটা জল লুকোচুরি খেলছিল বাবার পরনের চাদরে ।
আজ বহুদূরে চলে যাচ্ছি,  অনেক দূরে।
ষাটোর্ধ বাবা আজ একলা হয়ে যাবে ।  
হাজারো ভাবনা উঁকি দিচ্ছিল সেইদিন পিঞ্জরের ভিতরে ।
শেষের কথাগুলো বলতে বলতে বাবা থমকে যাচ্ছিল ।  
আব্বু তুমি কোথায় যাচ্ছো জানো ?  
কোথায় আবার !  তোমার স্বপ্নের সেই দুর্গম দ্বারগোড়ায় ।  
না আব্বু   তুমি যাচ্ছো আকাশ ছুঁতে,  
আমার কল্পনায় আঁকা সাগর ডিঙ্গাতে।  
সেখানে নিঃসঙ্গ তুমি ।  একমাত্র ঈশ্বর সহায় ।
আমি হতভম্ব হয়ে কিছুই বলতে পারিনি ।
শুধু দূর থেকে হাত নেড়ে জানিয়েছিলাম বিদায় ।


আজ অলস ব্যক্তিত্বের ব্যস্ত জীবনের সন্ধিক্ষণে
নিজের পরিচয়টুকু বলতে বারবার গা শিহরে যায় ।  
কি ছিলাম,  কি হলাম আর কতটুকুই বাকি !  
তবে, যতটুকু এগিয়েছি সবটুকুই ঈশ্বর আর বাবার দয়ায়।  
সেইতো আড়াই দশক আগে বাবা হারিয়েছে
বছর দশেক আগে ঘরে গিন্নীও এসেছে ।  চল্লিশের সীমান্তে দাঁড়িয়ে আজ আমিও একজন বাবা ।  
আমার ছেলেমেয়েরাও আমাকে আব্বু বলে ডাকে ।  
এসবের মাঝে ডুবে আজ আমার সহস্রবার
পরলোকগত স্বর্গবাসী বুড়ো বাপটার কথা মনে পড়ে ।  
তবুও কিছু করার নেই,  সবই ঈশ্বরের হাতে ।  
আসলে মিথ্যে মায়ার এই ভবে জীবনের সাতকাহন
মৃত্যুর পরেও পরম্পরায় পরম্পরায় চলতেই থাকে।


→→→রাত : ১১.৫০ মিনিট
→→→২৫/০৯/২০১৫