আমি সারা আল-বানিয়া ৷
আল-বেনিয়ার পাহাড়ি উপত্যকার স্মৃতিবাহী যুবতী
জীবনের শৈশব অনুচ্চ পাহাড়ের পাদদেশে সমাধিস্ত ৷
উপত্যকার চারণভূমি আর সবুজ ঘাসের গালিচা আমাকে চেনে,
আমিও চিনেছিলাম অপহরণ পূর্বকালে ৷


তারপর,
বাদামি রঙের ঘোড়া আর তার সওয়ারি আমাকে আমাকে মোহাবিষ্ট করেছিল;
একদিন চিরচেনা আলবেনিয়া
আর আমার একমাত্র পার্থিব আপনজন দাদিকে ভুলে গেলাম ৷
শুভ্র লোভনীয় বর্ণের ঘোড়সওয়ারির স্বল্প ভাষ্য—
তুমি কি এই উপত্যকার?
সমস্ত নারীত্ব লজ্জায় ঢেকে বলেছিলাম—
হ্যা আগন্তক ৷
সে আমাকে দিয়েছিল প্রাণ কেড়ে নেওয়া হাসি,
অথচ আমি পেয়েছিলাম একরাশ কৌতূহল ৷


তার পর,
দাদি আমাকে ঘুম পাড়াতে পারেনি
দাদি-নাতনির সংসারে স্বপ্নের প্রবেশ
দাদির কাছে সে স্বপ্নের রঙ ছিল বিবর্ণ, আমার কাছে রঙিন;
দ্বৈত ভাবনার বৈপরীত্বে বিজয়ী ঘোড়সওয়ারী


ভালোবাসার প্রতিটা অধ্যায়ের পাঠ দিয়ে আমাকে ফলবতী করে হারিয়ে গেল ঘোড় সওয়ারি,
শুধু রেখে গিয়েছিল তার সওয়ার ৷
দাদি কেঁদেছিল আমার জন্যে, আমি তার জন্যে ৷
আমার গর্ভে জন্ম নিলো ইবনু আল-বানিয়া৷


দূর্ভীক্ষ দারিদ্র আর কিছু কালের মধ্যে দাদির মৃত্যু
আমাকে ফিরিয়ে দিলো মৃত স্বপ্নের সমাধি ৷
একমাত্র পুত্রকে নিয়ে দীর্ঘ ষোল বছরের পথ হাঁটা ৷
আলবেনিয়া ছেড়ে দীর্ঘ সফরে আমরা ক্লান্ত৷
পুত্র বলল— মা, এবার শস্য-শ্যামলিমার এক ভূমিতে খুব শিঘ্রই পৌছে যাবো৷


আমরা ফিলিস্তিনের এক দিগন্তে
তখন দুপুর ও সন্ধ্যার মধ্য সময়,
পথিকদের যোগ্য আশ্রয়স্থল এক বৃক্ষ,
পুত্র বলল— মা আমরা এখানে বিশ্রাম করব ৷
বৃক্ষের নিচে শুয়ে মধ্যবয়সী এক উদ্ভ্রান্ত পথিক
সমগ্র শরীর জুড়ে দারিদ্রের প্রান্তিক নিদর্শন ৷


প্রবল জ্বরে প্রলাপের আওয়াজ  শুনছিলাম,
যখন তার অস্পষ্ট প্রলাপ স্পষ্ট বুঝলাম, অবাক হলাম
আমার কান্না লুকিয়ে রয়েছে তার জ্বরাক্রান্ত ভাষ্যে
তিনি বলছেন
—সারা আল-বানিয়া জীবনে তোমাকে আর পাবো না ?
স্বগতোক্তির সাথে চোখের কোণ থেকে নেমে এক ফোঁটা স্বচ্ছ অশ্রু,
হারানোর ব্যথা আর ফিরে পাওয়ার আকুতি
বললাম— হে পথিক, হ্যা তুমি পাবে ৷
পাগলের মতো ওঠার চেষ্টা করলো, পারলো না
আমি তুলে ধরলাম, বললাম—
— আমি সারা আল-বানিয়া ৷


যখন আঁখিযুগলে অবিরল বারিধারা
আমার পুত্র হয়তো বুঝে গিয়েছে এ অশ্রুর অর্থ
পিড়িতকে বাহুডোরে নিয়ে হাহুতাস করে বলল—
— বাবা তুমি কোথায় ছিলে ৷