সাহিত্যের আসর বসেছে
শান্তি নিকেতনী ঢঙের ক্যাম্পাসে
কত রকম শব্দে বানানো শৈল্পিক স্বরে
অলংকৃত অভিব্যক্তি চলছে কবিতা পাঠ।


অদূরেই ভগ্ন অন্তরে বসে তানভীর
স্বপ্নবাজ তানভীর নির্লিপ্ত; চাহনী উদাস
যুগের কবিরা প্রেমের বিভিন্ন অধ্যায় মেলে ধরে
শুকনো মানবতাও থাকে সে শব্দগাঁথায়।


এবার আসছে অরুন্ধতী বোস;
সুললিত কন্ঠে পরম মমতায় পঠিত হচ্ছে—
'আমি গভীর অন্ধকারে দেখি বসন্তের অবয়ব
বেলা পড়ে আসা বিকেলের কৃশ রোদ
নানা পুষ্পের বিতান, একটা শ্যামলী নদী
আমোদিত হিয়া মিলিয়ে যায় স্বপ্নসদনে।'


তানভীর দেখে নেয় আবছা চেনা মুখটা
অরুন্ধতী তাল-লয় ঠিক রেখে পাঠ করে—
'তারপর সৌরজগতের নিয়মে রাত আসে
মনের অন্তরীক্ষে ভাসে হাজারো সোনালী স্বপ্ন
সাদা মেঘ ঘন নীলে যেন আমার সৌখিন কল্পনা
জহুরীর মূল্যবান পাথরে আমি স্বপ্ন আঁকি
তারপর সিঁদুরের টিকার মতো সূর্যের লোভে
আর একটা নির্মল সকালের আশায়
আমি বুকে জড়িয়ে নিই প্রিয় নিদ্রাকে।'


অরুন্ধতী থেমেছে; কয়েকটা পদক্ষেপ
মাইক্রোফোন গর্জে উঠেছে অচেনা কন্ঠে—
'আমরা প্রতীক্ষা করি ঘোর অন্ধকারের
অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর; তবুও আমরা মরি না
আমরা মৃত্যুর খুব নিকটে বাস করি
আগ্নেয়গিরির লাভা আমাদের ভিতরে-বাইরে
পিপাসার্ত হলে দেখতে পাই মৃত সাগর।'


পিনপতন নীরবতায় সাহিত্যের আসর
অরুন্ধতী চেনার চেষ্টা করে ঘৃণাক্লান্ত মুখকে
প্রকৃতির কন্ঠে বেরিয়ে আসে সমকাল; বলে—
'আমাদের মনের গভীরেও আর একটা মন আছে
সেটা বড়ো বিবর্ণ: সেখানে মায়ের ভেজা চোখ
ভাইয়ের কাছে বোনের নিরাপত্তার আকুতি
ভেঙে পড়া মসজিদের মিনার আর হিংস্র দৃষ্টি।
সূর্যোদয় সেখানে আনন্দমুখর নয়
আমাদের মনের গহীনে প্রবহমান রক্তের নদী
আর ন-মাসের শিশুর দগ্ধ শরীর।'


আসরের চোখ ভিজেছে কিনা বোঝা যায়নি
অরুন্ধতী আর পদক্ষেপ করেনি; পাঠ চলছে—
'নিয়মের রাত এলে আমরা মনের আকাশ পাড়ি
কোন জ্যোৎস্না নয় কালো মেঘের আস্ফালন
সে আকাশে স্বপ্নের কোন রেখা নেই
আছে কেবল মৃত্যুর পদধ্বনি আর অসীম শূন্যতা।
ক্ষমা করবেন, আমি আজ কবিতা লিখিনি
শুধু একটা কথা বলতে চাই—
সকলের স্বপ্ন দেখা বোধহয় ঠিক নয়
আমাদের আকাশের ক্যানভাসে এই লেখা ।


অরুন্ধতী চোখ মুছতে মুছতে বলল—
তুই কি আমাদের তানভীর?
শুধুচোখে চোখ রাখল, কিছু বলল না
অরুন্ধতী বুঝে নেয় দুফোঁটা অশ্রুর কাহিনী।


০৪০৩২০২০
চাপড়া, নদিয়া