সুমন চট্টোপাধ্যায় বা এখন যিনি কবীর সুমন নামে বেশি পরিচিত, আত্মপ্রকাশ করেন যখন আমার সবে বোধ হওয়া শুরু হয়েছে। তার আগের অবস্থা আমার কাছে ইতিহাসবিদের কাছে ঐতিহাসিক কালের মত। মূলত ৯০ দশকের গোড়ার দিকে সুমনের আত্মপ্রকাশ। তারপর একে একে অঞ্জন-নচিকেতা-শিলাজিত এর হাত ধরে একের পর এক আলবামের আবির্ভাবের সাথে সাথে এক নতুন ধারা প্রতিষ্ঠা পায়। সেই ধারার নাম জীবনমুখী। বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পরবর্তি সময়ের হওয়ায় সেই গানে সাম্প্রদায়িক সমস্যা ধরা দেয়। তেমনই ধরা দেয় অন্যান্য দৈনন্দিন ও রাজনৈতিক সমস্যার কথাগুলোও।
বিশেষত শহর কলকাতার অবক্ষয় থেকে পালটে যাওয়া মুল্যবোধ, অথবা কিছু কিছু রিপু না পাল্টানোর গল্প, বিস্তৃত মানে নিয়ে প্রেম, অথবা ঘরের দুরবস্থা এরকমই বিচিত্র বিষয় নিয়ে সুমনের গান।
সুধীর চক্রবর্তীর কথায়, 'এই খিন্ন বেদনা, শূন্য পরিব্যাপ্তির মধ্যে হঠাৎ শোনা গেল সুমনের গান।...অলক্ষ্য প্রিয়াকে নিয়ে গান বানানোর দেশে তিনি গান লিখলেন বনস্পতি হয়ে যাওয়া বাবাকে নিয়ে, দশ ফুট বাই দশ ফূট ঘরের বিকল্পহীন যাপনে আবদ্ধ অসহায় মানুষেরত্রস্ত দিনরাত তাঁর গানে গুমরে উঠলো। ঘুড়ি ওড়াবার স্বাভাবিক আনন্দ থেকে বঞ্চিত কিশোর__রিক্সাচালকের দৈনন্দিন শ্রমের নৈমিত্তিক তাঁর গান চুইয়ে আমাদের সভ্য বিবেকে ঘা দেয়।'
কিম্বা আমরা কি ভুলতে পারবো 'গানওয়ালা'কে? অথবা, 'বিধাতার সাথে লুডো খেলা পাগল' আর 'বাঁশুরিয়া'কে? 'আমাদের জন্য' কত কিছুই না হয় তা বুঝতে পারি তাঁর গানে, 'প্রথম দেখা' ঘটনাগুলো কি রকম যেন আমাদেরই।
আজকের এই অনুপম রায়ের উত্থান কিম্বা আগের দশকের ব্যান্ড গানের রমরমা তার জমি কিন্তু সুমনেরই করে দেওয়া। তিনিই তৈরি করেছিলেন শ্রোতা। না হলে সেই গানগুলিও 'মহীনের ঘোড়াগুলি'র গানের মতই ব্যর্থ হত। শ্রোতামনের এই জায়গা খুলে দেওয়ার কৃতিত্ব কিন্তু তাঁরই। সে জন্যেই তিনি বাংলা গানের কলম্বাস।
মানছি তাঁর সব রাজনৈতিক অবস্থানে একমত নই, তাঁর পারিবারিক জীবন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু সেটাই কি এক শিল্পীর একমাত্র পরিচয়?