আমি আলোচনা সভায় কবিতা ও কবি সম্পর্কিত কোন বিষয় বাদ দিয়ে কোন রচনা প্রকাশের বিরোধিতাকে সমর্থন দিয়ে এসেছি। তবুও আজ এমন একজনকে নিয়ে লিখলাম যিনি আদৌ কবি হিসেবে তেমন পরিচিত নন। তাঁর মূল পরিচয় তিনি রম্যরচয়িতা। সৈয়দ মুজতবা আলিকে রম্যরচনার লেখক বলাটা অন্ধের হস্তীদর্শনের তুল্য। আমিও অন্ধ সিতু মিয়াও হস্তী তুল্য বৃহৎ, এতে সন্দেহ নেই।
তবুও এখানে লেখার কারণ, সৈয়দ মুজতবা আলী মার্জার নিধন কাব্য নামে এক মহান কাব্য রচনা করেছিলেন। আগেও একবার হুমায়ুন আহমেদ থেকে উদ্ধৃত করে বলতে চেয়েছিলাম, একটি মাত্র কবিতা রচনা করে কেউ কেউ কবি হয়ে যান। সকলেরই সব রচনা আলিশান হয়ে যায় না। হুমায়ুন আহমেদের সব উপন্যাস 'জোছনা ও জননী'র গল্প নয়। সব রবীন্দ্রসংগীতই সমান মহান নয়। নজরুলের সব কবিতাই বিদ্রোহী কিম্বা খালেদ হয়ে ওঠেনি। আল্লাহ তায়ালাও গণ্ডায় গণ্ডায় মহাসৃষ্টি করেন নি। করলে আলাদা করে মানব জাতিকে 'আশ্রাফুল মখলুকাত' বলতেন না।
যাক গে বড় বেতালা হয়ে যাচ্ছে। যাঁরা এখনো 'মার্জার নিধন কাব্য' পড়েন নি, অনুরোধ রইল একবার পড়ে নেওয়ার। তাহলেই বুঝবেন, কেন "গুরবে কুশ তন শব-ই আওয়াল"।
আরো একটা কথা বলে দেওয়া ভালো এই কাব্যটি কাশীরাম দাসের মহাভারত রচনার ঢঙে লেখা। যেথায় কবি কাশিরাম বলেন,
"মহাভারতের কথা অমৃতসমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পূণ্যবান।।"
যা থেকে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন লিখেছিলেন,
"মহাভারতের কথা! অমৃতসমান,
কাশী, কবীশ দলে তুমি পূণ্যবান!"
আর, মুজতবা লিখলেন,
"দীন সিতু মিয়াঁ ভনে শুনে পূণ্যবান।"
শুধু এই কবিতা লেখার জন্যই নয়, আরো এক কারণে সিতু মিয়াকে নিয়ে বলতে চাইছি তা হল কবিতার উদ্ধৃতি প্রয়োগ। রচনার বিভিন্ন স্থলে যেথায় যের'ম সেথায় সের'ম বসিয়ে নিয়েছেন। কোথায় এতটুকু ব্যত্যয় ঘটেনি। কোথাও বেমানানও লাগেনি।