দোহাই পরমা
             অচিন্ত্য সরকার


সত্যি বলছি পরমা, আজ বড্ড মনে হচ্ছে,
তোমার কথাই ঠিক ছিলো-
আসলে,আমি আপন অহংকারে,তোমার বেল ফুলের আবদার, আসমানি আঁচলের বাতাস, জলাভূমির পানকৌড়ি চপলতা এসবের পছন্দ কে গোঁয়ো বালখিল্য ভেবে উড়িয়ে দিয়েছি। তোমার পলাশ রাঙা ঠোঁটের সতর্কবার্তা কে আমার প্রযুক্তির অহংকারে তাচ্ছিল্য করেছি বার বার।


সেবার যখন তোমার শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা হলো, তুমি বার বার বলেছিলে শিশিরের প্রলেপ দিতে, আমি তুড়ি মেরে তোমাকে অ্যন্টিবায়োটিক গিলিয়েছিলাম। গ্রীষ্মের রাতে যখন তুমি বার বার বলেছো, দক্ষিণ জানালার সব পর্দা তুলে দিতে, আমি এসিটা চালিয়েছিলাম আরও জোরে। ভীষণ গলাব্যথা নিয়ে যখন উঠেছিলে পরদিন ভোরে, আমি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে আবার অ্যন্টিবায়োটিক ভরেছিলাম তোমার শরীরে।


গতবছর বাড়িটা যখন এক্সটেনশন করলাম, ইঞ্জিনিয়ার বললো, উঠোনের জামরুল আর রক্তকরবী গাছ দু'টো কাটতে হবে। তুমি একেবারে আড় হয়ে পড়েছিলে। আমি তোমার রাগ অভিমান কিছুরই বিশেষ তোয়াক্কা করিনি। তোমার নীম তুলশীর পুরিয়া, শিউলি পাতার রস, চুন হলুদের টোটকা সব তো বহুদিন আগেই কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দিয়েছি।ভুল করেছি, জানো পরমা,বড় ভুল করেছি।


আসলে পশ্চিমি বিজ্ঞাপনের জৌলুসে তোমার আটপৌরে সবুজ শাড়ির দিকে ঠিক ঠাক নজরই পড়েনি। আকাশ, পাতাল,চাঁদ,সমুদ্র,পাহাড় জয় করে আমার লক্ষ্য তো তখন মঙ্গলের টুকটুকে শরীরে আটকে আছে। কে জানতো বলো, আমার সব অ্যন্টিবায়োটিক ব্যর্থ  হবে, আমার সব প্রযুক্তি দিশেহারা হবে, তোমার পুঞ্জিভূত অদৃশ্য বিষাদে।


দোহাই তোমার পরমা। আর রাগ করো না। এই নাও সিন্দুকে রাখা আমার কেনা সমস্ত নিরাপত্তা-সোনা, নিয়ে যাও আমার সব হাতিয়ার,সব অ্যন্টিবায়োটিক, আধুনিক বিজ্ঞানের সব অহংকার। শুধু আমাদের সন্তান কে বাঁচাও। রাগ করো না। বিশ্বাস করো,একবার শুধু চলে যাক করোনা। আমি তোমায় ফিরিয়ে দেবো সুনীল আকাশ। ফুলের সুগন্ধে ভরে দেবো বাতাস, বিশুদ্ধ নদীর তীরে আবার,খোলা হাসি হাসবে শরতের কাশ।