মরার জন্য
     অচিন্ত্য সরকার


রাতের পরে দিন,দিনের পর আবার রাত,
দিন কাটে,মাস কাটে,বছর কাটে একে একে
আহ্নিক বার্ষিক গতির একঘেঁয়েমিপনায়।
দূষণ জ্বরা রোগ শোকের কুটকচালিতে
সময় বয়ে যায় মরণের অভিমুখে.....
প্রেমহীন মানিয়ে চলার ব্যবস্থাপনায়।


ছাদের টবে ফুল ফোটে,বাড়ির দেওয়ালে রঙ ওঠে,  
বাজারের থলে সার্থক করে কালেভদ্রে
তার ভেতর বাংলার রুপোলি ইলিশ ওঠে,
পুজোর কেনাকাটা হয়,ঘুরে আসাও হয়
এক দু'বার হৈ হৈ করে দীঘা কিংবা পুরি...
লাটাই বাঁধা ঘুড়ির সীমাবদ্ধ মত্ততায়।


জন্ম মৃত্যু জুড়ে সাদে শ্রাদ্ধে উৎসব আছে,
বসন্তের শুরুতে কচি সজনে ডাটা চিবিয়ে
ইমিউনিটি বাড়ানোর চেষ্টা আছে,
শীতে পিকনিক আছে,দেশ সেবার হিড়িক আছে,
মুখ বেজার করে নিমপাতা চিবোনোর মত....
বিরক্তিকর প্রয়োজনীয় দায়বন্ধতায়।


সুখের জন্য ছোটা আছে,অধরা শান্তি আছে,
ভোট আছে,নোট আছে,জোট আছে,ঘোট আছে,
ঘুষ আছে,সুপারিশ আছে,তোষণ-শোষণ আছে,
চোখ বাধা বলদের একই পথে ঘুরে চলা আছে,  
সমাজ খাঁচার অলঙ্ঘ্য গরাদগুলো....
অক্ষত রাখার দায়িত্ব কর্তব্যের সীমাবদ্ধতায়।


এরই মাঝে দু'একটা উল্কা হঠাৎ দলছুট হয়ে,
বাতাসের নরম বুকে পরম সুখে মাথা রাখে,
বিশুদ্ধ আবেগে গুনগুন করে প্রেমের গান গায়,
হৃদয়ের নিলয় থেকে ওঠা পরিশুদ্ধ সুরে,
লোকনিন্দা,জয়-পরাজয়,পিছুটান,মৃত্যুভয়.....
সবকিছুকেই তুচ্ছ করে এক লহমায়।


লোকে এদের বলে অশনি,অসামাজিক,উৎশৃঙ্খল,
দু'পায়ে লোহার শিখল বাঁধতে করা নানা ছল।
তবু যুগে যুগে মরার জন্য উতলা হয় দেবদাস,
আর পারু.. ঘরের সাজানো সুখ পায়ে ঠেলে,
মুমূর্ষু দেবদার গায় মাথায় হাত বুলিয়ে....
অশ্রুর ছন্দে তাকে প্রেমের গান শোনায়।