বার বার ট্রেন আসার ঘোষণা হয়
একটা নয়,তিন তিনটে ভাষায়;
প্রতিবারই কান পেতে থাকে বুড়িমা।
ট্রেনের হুইসেল বাজে,হাজার লোকের
হুড়োহুড়ি,চেঁচামেঁচি,হাজার পায়ের
এগিয়ে আসার শব্দ,তবু তাঁর চেনা
পায়ের শব্দ,তাঁর চেনা সেই কণ্ঠ-
যার জন্যে তাঁর আকুল কানপাতা
অনুক্ষণ,প্রতিক্ষণ-সে তো নয় অন্য
কোনো জন,সে তো তাঁর একান্ত আপন
তাঁর নাড়ী ছেড়া ধন,তাঁর এক মাত্র খোকা!

পড়শিরা তাঁকে বলেছে অনেকবার,’’খুড়িমা,
তোমার বউমা বইতে চায়না তোমার ভার’’
এবয়সে সে কথা,সে নিজেও কী বুঝিনি আর!
কিন্তু মানেনি মন,এখনও যে মানে না-তাঁর খোকা
তাঁর এক মাত্র নয়নের মনি,তাঁকে দিল এমন ধোকা!
তীর্থে নিয়ে যাবে বলে নিয়ে এল ,মনটা ভরেছিল
খুসিতে;তারপর হাওড়ার সাবওয়ে তে বসিয়ে বলল,
‘’একটু বস,কোথাও যেও না,আমি এক্ষুণি আসছি।‘’


সেই আসার পথচেয়ে দিন,রাত্রি,সপ্তাহ মাস,
কৈলাস থেকে মা এসেছে,নদীর তীরে কাশ
তবু খোকার আসার আজও হয়নি অবকাশ।
শীত এসেছে সাব-ওয়ের মার্বেল মেঝেটা বড্ড ঠান্ডা;
মনে পড়ে,সামান্য ঠান্ডাতেই সর্দি লেগে যেত খোকার
গরম কাপড়ে পা থেকে মাথা মুড়ে দিলেও থাকত না,
কেঁদে কেঁদে তাঁর বুকের উষ্ণতা চাইত প্রতিবার;দিতেও
সে কসুর করেনি কোন দিন;এত উষ্ণতা দিয়ে তিলে
তিলে গড়া খোকার হৃদয় কী করে এত শীতল হলো!
এই শীতলতা কি দূষণ-উষ্ণ পৃথিবীর বাই-প্রোডাক্ট,
না কি, তা নিতান্ত অপরিহার্য্য আলট্রা মর্ডান কনডাক্ট?