আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি, প্রাবন্ধিক, ছড়াকার, গীতিকবি ও কথাশিল্পী আবিদ আনোয়ার সম্প্রতি আমাদের ওয়েবসাইটের খ্যাতিমান কবিদের তালিকায় সংযুক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশের ৭০-এর দশকের প্রধানতম কবি হিসেবে তাঁকে বিবেচনা করা হয়। বাংলা কবিতায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার; কৃষি ও পুষ্টিবিজ্ঞানের জনহিতকর তথ্য-সংক্রান্ত গবেষণা ও প্রকাশনা এবং এসব তথ্যকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন পল্লীগীতির সুরে-সুরে মাঠে-ময়দানে প্রচার করার স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি পদক; সার্বিক সাহিত্যকর্মের জন্য ১৯৯৬ সালে রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর পদক ও সংবর্ধনা; ১৯৯৭ সালে স্বাধীনতার রজত জয়ন্তি পুরস্কার: সৈয়দ নজরুল ইসলাম পদক; বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির সংবর্ধনা; ২০০৬ সালে ছড়া সাহিত্যে অবদানের জন্য সুকুমার রায় সাহিত্য পদক; ২০১৫ সালে কবিতার জন্য শ্রীপুর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার পেয়েছেন; ‌‌‌‌‌‌১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল জার্নালিজম স্কলারশিপ সোসাইটির সম্মানসূচক সদস্যপদ লাভ করেন। তাঁর ইংরেজি স্ক্রিপ্টনির্ভর প্রোগ্রামের জন্য বাংলাদেশ বেতার দুই-দুইবার (২০০৫ ও ২০০৮ সালে) কমনওয়েলথ ব্রডকাস্টিং অ্যাসোসিয়েশন ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বিটিভি'র তালিকাভুক্ত 'বিশেষ' (সর্বোচ্চ) শ্রেণির গীতিকবি।


দুই বাংলার বিশিষ্টজনের মূল্যায়নে আবিদ আনোয়ারের কবিতা ও কবিতাবিষয়ক রচনাকর্মের উৎকর্ষ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় :


"কিছুদিন আগে একটি আকষ্মিকতা আমাকে বুঁদ করে রেখেছিলো বেশ কিছুক্ষণ। আবিদ আনোয়ার নিজে কবিতার স্রষ্টা এবং নিজ সৃষ্টির সমালোচক... এমন একটি গ্রন্থের আবির্ভাব (হ্যাঁ, আবির্ভাবই বলবো) সত্যিই অভাবনীয় বৈ কি!....বইটি পড়তে পড়তে একটি প্রাচীন ঋষিবাক্য মনের ভেতরে গুঞ্জর তুললো...'বিশ্বাসে মিলায় হরি'র দেশ থেকে লেখক  বহুদূর অগ্রসর..."
- শওকত ওসমান, জনকণ্ঠ সাময়িকী, ৪ এপ্রিল ১৯৯৭


"কবির কৌশল এখানেই সুস্পষ্ট যে, তিনি তাঁর বক্তব্যকে বিবিধ রূপকল্পের মাধ্যমে শানিতভাবে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছেন যা পাঠকের চৈতন্যকে নাড়া দেয় এবং পাঠককে নতুনভাবে আকর্ষণ করে... অনেকগুলো কবিতা চিত্রকল্পের ব্যঞ্জনার ওপর দাঁড়িয়ে আছে... যেন ক্যানভাসের আয়তনের মধ্যে সুসম্পন্ন কম্পোজিশন..."
সৈয়দ আলী আহসান, ইত্তেফাক সাময়িকী, ১০ মে ১৯৮৫


"আবিদ আনোয়ারের প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাব্যরসিকদের নজর কাড়ে। চিত্রকল্পকে প্রাধান্য দেন বলে তাঁর কবিতা মনোগ্রাহী হয়ে ওঠে। একেকটি সার্থক চিত্রকল্প শত পৃষ্ঠার বর্ণনার চেয়েও বাঙময় এবং বেশি মূল্যবান... বিনয়ী, নিষ্ঠাবান এই মেধাবী শিল্পী মানুষটি নিজের বিষয়ে খুব কম কথা খরচ করেন... যে কবি লিখতে পারেন "আমার চোখের মতো অন্য কোনো জাদুকর নেই" তাঁর পক্ষেই লেখা সম্ভব 'মরা জোছনায় মধুচন্দ্রিমার' মতো কবিতার বই..."
শামসুর রাহমান, অন্যের মানসে বসবাস, আবিদ আনোয়ার: তাঁর কবিতা, ভোরের কাগজ, ৩ ডিসেম্বর ১৯৯৩


"কিছুদিন আগে সুনীলের টেবিলে আমি আবিদ আনোয়ার-এর একটি কবিতার বই পড়লাম। পড়ে খুবই মুগ্ধ হলাম।"
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, মানবজমিন, ২০ মার্চ ১৯৯৮


"মানস-চেতনার দিক থেকে যেমন, তেমনি কবিতায় ভাষা ব্যবহার, উপমা-চিত্রকল্প রচনা, আঙ্গিক ও রূপরীতির বিন্যাসে তিনি স্বাতন্ত্র্যের সাধক... আবিদ আনোয়ার সমাজ ও শিল্প-সচেতন-- ভাব, ভাষা, ছন্দ, আঙ্গিক ও রূপরীতির সুষ্ঠু সমন্বয়ে শিল্পরূপ গড়ে তোলার ব্যাপারে যত্নবান এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষায় প্রবলভাবেই উৎসাহী..."
মোহাম্মদ মাহফুজউল্লাহ, দৈনিক বাংলা সাময়িকী, ১৭ মে ১৯৮৫


"আবিদ কবিতার শুদ্ধতায় বিশ্বাসী যেমন বিশ্বাসী প্রতীকী কবিরা। তাঁর কবিতার দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার জন্যে দরকার অভিনিবেশী পাঠক সম্প্রদায় যারা চিন্তার সূত্র অনুসরণে সক্ষম, চিত্রকল্পের শোভা ও ব্যঞ্জনা অনুধাবনে সমর্থ... ব্যাপক জীবন এসেছে কিছু কবিতার আধেয় হিসেবে; এগুলো যে রচিত হতে পেরেছে লোক-কবিতার বর্তমান কালে সেজন্যই উল্লেখযোগ্য" "...বাংলা কবিতার আধুনিকায়ন-এ... আবিদ চমৎকারভাবে আমাদের কবিতার বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেছেন..."
ড. হুমায়ুন আজাদ, কালাকাল, ১৯৮৮ ও সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ২১ মার্চ ১৯৯৭  


"বড় কবিদের কবিতা পড়লে আমরা তাঁদের একটি নিজস্ব জগতে প্রবেশ করি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা জীবনানন্দ দাশ প্রত্যেকের রয়েছে নিজ নিজ কাব্যজগত। আবিদ আনোয়ার-এর কবিতা বিষয়ে সবচেয়ে বড় কথা তিনি তাঁর কবিতার মাধ্যমে আমাদেরকে একটি নতুন জগত উপহার দিতে পেরেছেন..."
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, কবিতাবিষয়ক সেমিনারে সভাপতির ভাষণ, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭


"আবিদের কবি-চৈতন্যের শিকড় আবহমান বাঙলা ও বাঙালির কাব্য-ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েও নতুন, নিজস্ব ও আধুনিক... এই নিজস্বতা এসেছে তাঁর বাক-প্রতিমায় অসাধারণ উপমা-উৎপেক্ষা-রূপক-প্রতীক ও চিত্রকল্প নির্মাণের মৌলিকত্বে ও নিপুণতায়... আমরা সবিস্ময়ে উপস্থিত হই এমন এক রহস্যময় চিত্রবিশ্বে যেখানে ভাস্কর্যের মতো সংহত হয়ে থাকে অপূর্ব সব চিত্রকল্প..."
ড. মাহবুব সাদিক, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, ৩০ এপ্রিল ১৯৯৩


[আবিদের কবিতা ] "স্বদেশ-সমাজের একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রা স্পর্শ করতে পেরেছে তার শক্তিশালী কাঠামোগত বিন্যাসে যেমন, তেমনি উপস্থাপনার অভিনবত্বেও... সাহসী চিত্রকল্প রচনার মধ্য দিয়ে সমকালীন জীবনকে এমন গভীরতর প্রেক্ষিতে তুলে ধরার ক্ষমতা আমাদের ক'জন কবির আছে?..."
অসীম সাহা, মানবজমিন, ২২ মে ১৯৯৯  


"আবেগ ও মননের সমন্বিত পরিচর্যায় তিনি [আবিদ আনোয়ার] তাঁর কবিতার শরীরকে পরিণত করেন ভাস্কর্যসুলভ নিপুণ শিল্পকর্মে। কবির সমকাল-সচেতনতা জীবনের গভীর মূলস্পর্শী..."
ড. রফিকউল্লাহ খান, সাপ্তাহিক স্বদেশ, ১৬ মে ১৯৮৫


"কবিতার প্রাণশক্তির জন্যে চাই মননের যে অক্সিজেন, তা এক বৃক্ষের নয়, অতীত থেকে বর্তমানে বিস্তৃত অসংখ্য কাব্যবৃক্ষ থেকেই নিঃসৃত... বিহারীলাল যেমন দিয়েছেন পরোক্ষে, দিয়েছেন মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দও। শামসুর রাহমান থেকে আবিদ আনোয়ার পর্যন্ত সমকালীন কবিদের ঋণও অস্বীকার করা যাবে না..."
নাসির আহমেদ, নিজের কাব্যসংগ্রহ-এর ভূমিকা, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯  


"শামসুর রাহমান ও আল মাহমুদ, এ-দু'জনকে যোগ দিয়ে দুই দিয়ে ভাগ করলে যা দাঁড়ায়, এদের দু'জনের গড় সে-ধারার সফলতম কবির নাম আবিদ আনোয়ার-- সফলতম ও সুদক্ষতম... ছন্দ ও শব্দায়নে তাঁর নিপুণতা তুঙ্গস্পর্শী... আবিদ আনোয়ারকে তিরিশি ধারার শেষতম ও শ্রেষ্ঠ কবি মানতে আমার অসুবিধা নেই..."
আনিসুল হক, প্রথম আলো সাময়িকী, ১১ মে ২০০১


"কবি আবিদ আনোয়ার কবিতার ধ্রুপদী ভাস্কর... বাংলা কবিতার সকল প্রকার অলঙ্কার সৃষ্টির প্রতিভা তাঁর করায়ত্ত... আবিদ আনোয়ার স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা কবিতার প্রেক্ষাপটে শ্রেষ্ঠতম নাম... যথাশব্দের যথাপ্রয়োগে যদি কবিতা হয়, তাহলে তাঁর ক্ষমতা ঈর্ষণীয়..."
ড. তপন বাগচী, কালি ও কলম, অষ্টম সংখ্যা, আশ্বিন ১৪১৪; অমিত্রাক্ষর, বর্ষ ৫ সংখ্যা ৩, ডিসেন্বর ২০০৬


---


আবিদ আনোয়ারের সুগঠিত ও নিগুঢ় অর্থবাহি কবিতাসমূহ পাঠ শেষে কবিতাপ্রেমী যে-কেউ তার ভক্তে পরিণত হতে বাধ্য। আমি নিজেও তাঁর তেমনই এক ভক্ত। তাঁর লেখায় স্বকীয় এক আবহ বিদ্যমান, যা আমার বিশ্বাস বর্তমান সময়ের কাব্যসাহিত্যের এক শুদ্ধতর ধারা হিসেবে উল্লেখ্য হয়ে থাকবে আগামীর সাহিত্যিক ও গবেষকদের কাছে। এ-যুগের উঠতি কবিদের অনেক কিছু শেখার আছে তাঁর লেখনী থেকে। এই আসরে তাঁর উপস্থিতি তাই যথেষ্ট গুরুত্বের দাবীদার। যতো দ্রুত তাঁর যতো বেশি কবিতা সম্ভব এখানে সংকলনের চেষ্টা করা হবে। পাশাপাশি তিনি সক্রিয়ভাবে এই আসরে থেকে আমাদের ভুলভ্রান্তিগুলো ধরিয়ে দিবেন, আমাদের কাব্যচর্চার সঠিক পথ দেখাবেন, এটাই সর্বান্তকরণে কামনা করছি।