=======<><><>=======


পঞ্চনদের পাড়ে আজো খুঁজি মায়াবতী!
শতদ্রু, বিপাশা, বিতস্তা, চন্দ্রভাগা, ইরাবতী
পঞ্চবিধ আবরক ভুলেছি পঞ্চশীল বিস্ময়,
অন্নময় প্রাণময় মনোময় জ্ঞান, আনন্দময়।


পঞ্চনদীর দুই ধারে কোথায় অমরাবতী,
কিরণা, ধূতপাপা,গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী
পঞ্চনীবরণ ধরেছি হৃদয়ে ভুলে প্রক্ষোভ,
আলস্য, আকাঙ্ক্ষা, ঔদ্ধত্য, দ্বিধা, লোভ।


পঞ্চগঙ্গার কাবেরী তীরে থাকো কুহকিনী!
ভাগীরথী,গৌতমী,কৃষ্ণবেণী না পিনাকিনী?
পঞ্চগৌড়ে কোন অন্তঃপুরে হৃদয় চঞ্চল!
প্রদেশ, কণৌজ, গৌড়, মিথিলা না উৎকল!


পঞ্চরূপী পঞ্চকন্যা জাগো পঞ্চমী বিভাবরী,
অহল্যা, দ্রৌপদী, তারা, কুন্তী বা মলোন্দরী
পঞ্চবল সাধনা আরতি কোরোনা অবজ্ঞা!
মূরতিতে শ্রদ্ধা, বীর্য, স্মৃতি, সমাধি, প্রজ্ঞা।


পঞ্চভূতের ধরাতলে কত খুঁজবো অসার!
পঞ্চস্কন্ধ, রূপ দেনা চৈতন্য সংজ্ঞা সংস্কার;
পঞ্চপাণ্ডব হবো কি তবে পুরাণের তুল!
যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন,সহদেব বা নকুল।
========<><>========


এই কবিতার কিছু কথাঃ [ হোক কিছু নতুন জানা ]
____________________________________________
        ★ পঞ্চশীল বা পঞ্চনীতি হলো অযথা প্রাণী হত্যা না করা, চুরি না করা, মিথ্যা না বলা, ব্যভিচার না করা ও নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ না করা। পঞ্চশীল বা পঞ্চনীতিতে জীবনাচরণে লিপ্ত থাকলেই সৎ জীবন গঠন সম্ভব।
    ★ অনিত্য এই পৃথিবী হচ্ছে পঞ্চভূতের আধার। অর্থাৎ মাটি, পানি, আলো, বায়ূ ও শূন্যতা দিয়ে তৈরি মানুষ তথা পঞ্চভূতের আধার আবার এক একটি পঞ্চস্কন্ধ।
     ★ পঞ্চস্কন্ধ হলো রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার ও বিজ্ঞান। রূপ হলো দৈহিক আকার-আকৃতি। বেদনা হলো আবেগ বা অনুভূতি। সংজ্ঞা হলো উপলব্ধি বা বোধ। সংস্কার হলো মানসিক নির্মিতি এবং বিজ্ঞান হলো চৈতন্য। তাই পঞ্চস্কন্ধ হলো জড় ও চেতনের সমন্বয়ে গঠিত একটি জীবন প্রবাহ।
      ★ পঞ্চনীতির চর্চাকারী পঞ্চস্কন্ধের পঞ্চভূতে তৈরি মানুষ পাঁচটি বাধা বা পঞ্চনীবরণের কারণে কুশল কর্ম করতে পারে না। পঞ্চনীবরণ হলো চিত্ত বা মনের পাঁচ প্রকার বন্ধন যার দ্বারা অনুৎপন্ন কুশল বা সৎ কর্ম উৎপন্ন হতে পারে না বা সংঘটিত হতে পারে না এবং উৎপন্ন কুশল বা সৎ কর্ম বৃদ্ধি পেতে পারে না। চিত্তের এই পাঁচ প্রকার বন্ধন বা পঞ্চনীবরণ হলো লোভ, খারাপ আকাঙ্ক্ষা, দৈহিক দুর্বলতা বা আলস্য, ঔদ্ধত্য ও দ্বিধা।
      ★ পঞ্চনীবরণকে অতিক্রম করতে হলে দরকার পঞ্চবল। পঞ্চবল হলো শ্রদ্ধা, বীর্য, স্মৃতি, সমাধি ও প্রজ্ঞা। শ্রদ্ধা হলো আগ্রহ, বীর্য হলো উদ্যোগ, স্মৃতি হলো পূর্বকৃত ও ভাবিত কুশলকর্ম বা সৎকর্মের স্মরণ ও ভাবনা, সমাধি হলো মনের একাগ্রতা আর প্রজ্ঞা হলো অন্তর্ছদৃষ্টির গভীরতা। পঞ্চবল দ্বারা পঞ্চমার তথা পাঁচ প্রকার শত্রুকে পরাভূত করে নির্বাণ বা মোক্ষ লাভ হয়। এই পঞ্চমার হলো বিদর্শনে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী পাঁচ-বিঘ্ন বা বাধা।
      ★ পুরাণের কাহিনীতে আছে পঞ্চকন্যা। পাঁচজন খ্যাতিমান পৌরাণিক নারী অহল্যা, দ্রৌপদী, তারা, কুন্তী ও মন্দোদরী। এরা প্রত্যেকেই মহাকাব্যের মহীয়সী চরিত্র। কল্পনায় পাঞ্চালী রূপী খোঁজ চলছে আজো নিত্য।
     ★  মানবাত্মার পঞ্চবিধ কোষ বা আবরক আছে বলে ধরে নেয়া হয়। বেদান্ত মতে আত্মার পঞ্চবিধ কোষ হলো অন্নময়, প্রাণময়, মনোময় জ্ঞানময় ও আনন্দময় কোষ।
      ★   ভারতবর্ষেই আছে পঞ্চগৌড়। পঞ্চগৌড় হলো সরস্বতী নদীর তীরবর্তী প্রদেশ, কনৌজ, উৎকল, মিথিলা ও গৌড়। আরো আছে পঞ্চতীর্থ। পঞ্চতীর্থ হলো কাশীতে অবস্থিত পাঁচটি পুণ্যস্থান। মানুষ পঞ্চতীর্থে পঞ্চত্বপ্রাপ্ত হলে পুণ্যবান মনে করে। পঞ্চত্বপ্রাপ্তি মানেই ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম এই পঞ্চভূতে মিলিত হওয়া তথা মৃত্যু।
      ★  পঞ্চতীর্থ যেমন আছে তেমন আছে পঞ্চনদ, শতদ্রু, বিপাশা, ইরাবতী, চন্দ্রভাগা ও বিতস্তা, এই পাঁচটি নদীবিধৌত হলো পাঞ্জাব। পঞ্চনদ যেমন আছে তেমনি আছে পঞ্চনদী, কিরণা, ধূতপাপা, সরস্বতী, গঙ্গা, যমুনা। এই হলো পাঁচ নদী।
      ★ এছাড়া আছে পঞ্চগঙ্গা। ভাগীরথী, গৌতমী, কৃষ্ণবেণী, পিনাকিনী ও কাবেরী, এই পাঁচটি নদীকে বলে পঞ্চগঙ্গা। পঞ্চগঙ্গা কাশীস্থ একটা তীর্থস্থানও বটে।
     ★  মহাভারতে আছে পঞ্চপাণ্ডব। পঞ্চপাণ্ডব হলো পাণ্ডুরাজের পাঁচ পুত্র। ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির, বলশালী ভীম, শ্রেষ্ঠ তীরন্দাজ অর্জুন, প্রাণীর ভাষাবিদ নকুল এবং কনিষ্ঠ সহদেব। এই পাঁচজনই হলো পঞ্চপাণ্ডব। ঘটনাক্রমে এদের স্ত্রীই হলো পাঞ্চালি বা দ্রৌপদী।