(আমি এতো বড় লেখা লিখিনা সাধারণত, কিন্তু পুরো বিষয়টা বোঝানর জন্য আজ প্রয়োজন হয়ে পড়ল, এই প্রশান্ত বাবু কোন গল্প নন, আমার অতি পরিচিত এক ব্যক্তি, আর তার এই জীবন সংগ্রাম টাও আমার নিজের চোখে দেখা)


প্রশান্ত বাবু নিয়ম করেই
প্রতিটা দিন  জলদি ওঠেন
খুব তাড়াতাড়ি, ঠিক পাঁচ টায়।
কোনক্রমে দু ঢোঁক চা গলায়
কখনো থাকে দুটো বিস্কুট
স্নান খানি সেরে, টেনে এক ছুট
কোন কোন দিন কামান দাড়ি,
ধরতেই হবে প্রথম ফেরী
সকাল ছটায়,
চাকরি টা তার বড় দরকারি।


ঘরেতে রয়েছে দুই ছেলে মেয়ে
মিষ্টি ভারী!
অসুস্থ স্ত্রীর হাঁপের টান,
মাঝে মধ্যেই খুব বাড়াবাড়ি।
ডাক্তার ওষুধ লেগেই থাকে
রোজগেরে  বলতে একাই তিনি
চাকরি টা তার বড় দরকারি।


কি যেন এক কাজ করেন;
কি এক কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি।
সারাদিন বসে ফার্নেসে কাজ,
ঝলসায় বুক, ঝলসায় নাড়ী
প্রোডাক্ট টা কাজে লাগায় যতো ট্যানারি,
ডবল শিফট এ তবু খেটে যান
চাকরি টা তার বড় দরকারি।


একদিন শেষে দূষণ দোষে
বন্ধ হয়ে যায় যতো ট্যানারি,
চাকরি হারান প্রশান্ত বাবু
যা ছিল তার বড় দরকারি।


কাগজে কাগজে খুঁজে ফেরেন কর্মখালি,
বানিজ্য নিয়ে পড়াশোনা তার,
অভ্যাস অভাবে সেখানেও দাঁড়ি!
অবশেষে পান কোনও কুরিয়ের সার্ভিস এ
একটি চাকরি।
সারাদিন ঘুরে ঘুরে চিঠির ফেরী
উপরি বলতে একটি সাইকেল,
দুপুরে ডাল ভাত তরকারি,
তাই বেছে নেন।
চাকরি টা তার বড় দরকারি।


ছেলে মেয়ে একটা স্কুল ফাইনাল,
আরেকটা হায়ার সেকেন্ডারি,
সঙ্গে আছে বৌ এর ওষুধ,
আরও সব নানা সব ঝকমারি
উদায়স্ত খেটে চলেন;
চাকরি টা তার বড় দরকারি।


ছেলে মেয়ে দুটো ক্রমে বড় হয়,
বুক বাঁধে বাবা সুখের আশায়।
দুজনেই কিছু ছাত্র পড়ায়
হাত খরচ টা তবু জুটে যায়
বিলি করে বাবা চিঠির বোঝা কাড়িকাড়ি
চাকরি টা তার বড় দরকারি।


মেয়েটি এখন উনিশ সবে
দেখতে হয়েছে মিষ্টি ভারী!
ছটফটে প্রেমে পাগল হয়ে
একদিন হঠাৎই ভেগে প্রেমিকের বাড়ী
চোখের জলে বুক ভাসিয়েও,
বাবা করে যান চিঠির ফেরী
চাকরি টা তার বড় দরকারি।


ছেলের চাকরি হয়না এখনো
বেকার ছেলেই তবু বাঁচার আশা যেন,
এখন পঞ্চাশোর্ধ প্রশান্ত বাবুর
পাকে চুল, পাকে দাড়ি।
ঘরের চাহিদা ক্রমেই বাড়ে,
বউয়ের হাঁপের ওষুধ, পরনের সুতির ছাপা শাড়ী
দৌড়ে বেড়ান বয়স ভুলেই,
করে যান তিনি চিঠির ফেরী
রোজগেরে মানুষ একাই আজও
চাকরি টা তার বড় দরকারি।