সবাই যখন ঘাটে অঘাটে এ ভবের হাটে
করে খেলা লাগিয়ে রঙের মেলা ।
আমার চোখ দুটি তখনও খুঁজতেই ব‍্যস্ত
আমার সেই হারানো ছেলেবেলা ।
চৈতালী এই দিনে মনে মনে খুঁজে ফিরি
ঝাঁ চকচকে সোনালী সেই দিনগুলি ।
খরা চৈত্রে ফাটা চৌচির মাঠে নগ্ন পায়ে
মহোৎসবে যখন খেলি সবে ডাঙ্গুলি ।
বুনোভাট লেবু জাম্বুরা শিরীষের সুগন্ধময়
মৌমিতার কি চৈতালী চাঁদোয়া রাত !
যেমন প্রেম জাগাতো তেমনি মন উতালা
করতো সুপারী ফুলের সুবাসিত প্রভাত ।
গাছে গাছে কঁচিপাতা নয়া তরুলতা আর
মন মাতানো সোনালু-আম্রমুকুল ।
ছেলেবেলার অবুঝ মন সবুজ প্রকৃতিতে
সর্বক্ষণ মিতালী পাতাতে ছিল ব‍্যকুল ।
আমগাছের শাখে শাল সেগুনের খোড়লে
যখন বাচ্চা দিতো শালিক টিয়ে ।
ছেলেবেলার দূরন্তপনার দিনগুলোয় তা
দেখেই মহানন্দে যেতো কাটিয়ে ।
কচি আমের ঐ মো মো ঘ্রাণে মম প্রাণে
জাগাত যেন অমৃত সুধার সাধ ।
সন্ধ‍্যা বেলার মায়ের কড়া শাসনটা ভুলে
দিনমান ছুটাছুটিটা ছিল অবাধ ।
স্কুল ছুটির পর আমাদের কে রাখে খবর
খেয়ে দেয়ে বাবামা যখন দিত ভাতঘুম ।
পাড়ার ছেলেরা সবাই মিলে মেঠো পথে
পেতেছিলাম মার্বেল খেলার ধুম ।
রোদ্রের তীব্রতা না কমতে প্রকাণ্ডাকারের
ঘুড়ি নিয়ে তখন করতাম উড়োউড়ি ।
সাইকেলের হ‍াতলে পোষা টিয়ে মিঠুকে
বসিয়ে পুরো গাঁ জুড়ে ছিল ঘুড়োঘুড়ি ।
দিনান্তে এলে গোধূলি বেলা, রাখালদের
বাঁশিতে গান ধরতো আহা কি সুরেলা !
স্বর্গটা মরণের পরে নয় যেন জীবদ্দশায়
দেখেছিল আমারই সেই ছেলেবেলা ।
ষড় ঋতুর এ দেশে বেড়ে উঠাটা আমার
তাই প্রকৃতিকে নিবিড় ভালোবেসে ।
এই চৈতালী দিনে সেই স্মৃতি-স্বাদ-ঘ্রাণ-
কলরব আসে আজো ভেসে ভেসে ।


রচনাকালঃ- রাত ১০.৫৬টা, শুক্রবার, ২৫ চৈত্র ১৪২৮, ৬ রমজান ১৪৪২, ৮ এপ্রিল  ২০২২, মিরপুর, ঢাকা ।