ধর ধর করে ছুটে গিয়ে ধরে আনা হোত , ধরা পড়লেই চলত মুখে জোর চিৎকার  ধুসুম ঢাসুম , আর পাকটির তৈরি বন্দুকের গুলি ছোড়ে টিসস.......ধুম ধুম ....
  কেন মারবো না ওরা যে চোর সেজেছে আর ,আমি পুলিশ ।
    খুব বেশিদিন নয় , এইতো কিছুদিন আগের কথা আমার বয়স তখন আট নয় , ছোট থেকেই আমি একটু অন্য রকম , পড়তে মন বসত না একদিনও ।
অসীম বাবুর ইংরেজি আর দুলাল বাবুর অঙ্ক ও ভূগোল হলেই হল ।
আর আনন্দ মাষ্টার মশাই এর বাংলা  ,ইতিহাস তো গল্প করে করেই  পড়িয়ে দিতেন তাই আর পড়তে ও হত না আলাদা করে ।
বাবার ভয়ে আর দিদির পড়তে বসা দেখে লুন্ঠনের আলোয় কিংবা কেরোসিন বাতির আলোয় জোর পূর্বক পড়তে বসেই ঘুমিয়ে পরা ছিল আমার দৈনিক অভ্যাস ।
গোটা গ্রামে বিদ্যুৎ ছিল না তাই গরম কালে খুব কষ্ট হত ওই পাঁচটা মিনিট কাটানো ।
    এই জমানায় বিদ্যুৎ ছিল না কথাটা বড্ড বেমানান হলেও এটাই সত্যি আমার ছাত্র জীবনে বিদ্যুৎ পৌঁছায় নি আমার গ্রামে তথা পন্ডিত  হরিনারায়ান ও হরিমাখন এর জন্মভূমি ,মুর্শিদাবাদ জেলার সাটুই স্থিত পোড়াডাঙ্গা গ্রামের ধাওরা পাড়ায়।
     খুব চঞ্চল আর অস্থির হওয়ায় আমার খেলাধুলায় সময় বেশি কাটত তাও সেই সময়ের খেলা ..হা ডু ডু , জমায় বাবু এসেছে  , চিক , মাংস চুরি, দড়ি , লাফদরি, ঘানি , ভ্যাট , গুলি , ডাংগুলি, ষোলগুটি  , তিন গুটি ,পা তা পাতা  ,এইসব।
   মজার ব্যাপার আমার সাথে কেও তিনগুটি আর ষোল গুটি খেলতে চাইতো না ভয়ে , কারণ কেও পারত না আমাকে হারাতে ।
কেবল মাত্র আমার মায়ের কাকত আমার এক মাসি আমায় একদিন হারিয়ে দিয়েছিল তাও ভুগিয়ে ।
সারাদিন খেলে বাড়ানো আর সন্ধ্যায় আঁখ কেটে চিবানো ছিল প্রতিদিনের কার্যসূচি ।
আর ঠিক এক সাঁঝ বাওড়িয়ে  বাবার ভয়ে দিদিকে নকল করে ভায়ের পাশে গুটি মেরে বসে ঢুলে পরাতে আমার জুরিভার ছিল না ।তবে হ্যাঁ , ভোর বেলায় উঠে ডুব দিয়ে ঠাকুর পুজো করে পড়তে বসা ছিল আমার মনের ভাঁজ ।
আমার ঠাকুর পুজো পড়া শেষ হলে বাড়ির বাকি লোকেদের ঘুম ভাঙত আর আমি ঘুমিয়ে পড়তাম বিছানায় আবারও ।
ভাই দিদির পড়া শেষ হলেই মা আমাকে উঠিয়ে দিয়ে খেতে দিত  , মাছ ভাঁজা তরকারি ভাত কিংবা ,ঘি  দিয়ে সিদ্ধ ভাত খেয়ে মারতাম দোর প্লাস্টিকের চটের ব্যাগ নিয়ে স্কুলে । আমার ভর্তির সময় রোল ছিল কুড়ি সেটাই ছিল পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পোড়াডাঙ্গা নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে ।
     এর পর সাটুই রাজেন্দ্র নারায়ন  স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির সময় রোল হল এক শত তিন ।
পরের বছর ম্যাজিক দেখিয়ে ছিলাম সবাইকে  ।
চমকে দিয়ে দুই রোল ছিনিয়ে নিয় , ষষ্ঠ শ্রেণীতে পরীক্ষায়  দ্বিতীয় হয়ে ।তার পর থেকে আর কেও আমার হাতে হাত রাখতে পারেনি  পড়াশোনায় । গণিতবিদ্  স্বর্গীয় নবদল ঘোষ থেকে শিখে নিয়েছিলাম সহজে অঙ্ক কষার বুদ্ধি । আর আমার পঠন সহযোগী শিক্ষক ছিলেন নন্দ দুলাল নন্দী (স্বরাজ বাবু)  ।
সহদেব পাল বাবুর বাংলা ব্যাকরণ , বৃন্দাবন বাবুর বাংলা পাঠ , আহমদ স্যারের অঙ্ক , ভূগোল   আর গম্ভীর গলায় দীপক শর্মা স্যারের  ইংরেজিতে গর্জন মন ছুঁয়ে যেত ।
তবে বিপুল স্যারের কথা খুব একটা মনে না এলেও উনি আমায় কম্পিউটার বলতেন সেটা ভুলি কি করে ?
     বাকি সব স্যারের প্রিয় খুদে ভক্তের অন্যতম ছিলাম আমি ।


   দু বছর পর পরিচয় হল 'নায়ক স্যারে'র সাথে তথা বর্তমানে সাটুই রাজেন্দ্র নারায়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রী হীরক দাস মহাশয় ।
   আর  'ইস একুয়ালটু' স্যার বা  পদার্থ  বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষক শ্রী অভিজিৎ পাল মহাশয়ের সাথে ।


সেই সময় হীরক বাবুর গর্জনে   বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খাওয়ার উপক্রম এতটাই ভয় পেতাম আমরা ।
    সর্বপরি  শ্রদ্ধেয় প্রধান শিক্ষক শ্রী গৌতম ব্যানার্জি এর অসীম  প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়ের পরিবেশ ছিল বেশ   'টান টান ' ।
      সুনাম করা স্কুল কুমার পুরের হাই স্কুলকে সব দিক থেকে টেক্কা দিয়ে বেশ সুনাম অর্জন করেছিল , সাটুই রাজেন্দ্র নারণয়ন উচ্চ বিদ্যালয় ।
বেশ কিছু শিক্ষক যেমন মৃনাল বাবু , সৌমেন বাবু , মানস বাবু , বুনোদি , রূপায়ন বাবুর সেই সব দিনের কথা গুলো কখন যে  ভিতরটা  ভিজিয়ে দেয় , নিজেও বুঝতে পারিনা ।
ইনরা সেই মহাজ্ঞানী ব্যাক্তি যাদের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে ছিল গোটা সাটুই এলাকা আর সুনাম অর্জন  করে ছিল আমাদের স্কুল । খুব অবনমিত হয় ,যখন সেই দিনের স্কুল আর আজকের স্কুলকে তুলনা করি ।
হয়ত এমন পরিবেশের জন্য আমিও দায়ী ।
আমরা দায়ী। সকলে দায়ী।
এই সমাজ ব্যবস্থা , শিক্ষা ব্যবস্থা দায়ী ।
অন্ধকার আছন্ন হওয়ায় আগেই স্বর্ণ প্রদীপ জ্বলিয়ে  রাখার আপ্রাণ চেষ্টায় শিক্ষক শ্রী সুব্রত দাস ও  বিদ্যালয়ের সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকা মন্ডলী ।
তারই এক মানবিক দৃষ্টান্ত  " সাটুই রাজেন্দ্র নারণয়ন ব্রতচারী নিকেতন" ।
      কুর্নিশ জনায় আপনাদের ।


(কাওকে মন থেকে  আঘাত দিতে  চাইনি , যদি অজান্তে  কেও আঘাত পেয়ে থাকেন ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে নিয়ে , নিজের ... বলে মাফ করবেন )