কিছু গল্প অথবা গল্পের মতোই - আমরা বলি
আমরা শুনি, এমন কি যেন স্বচক্ষে দেখতেও পাই,
রাজকন্যা, কোটালপুত্র বা ব্যাঙ্গমীর গপ্পো,
কিছু রূপকথা, কিছু মানস পটে ভেসে চলা রক পাখির মত -
ইয়া বড় বড় ডিম পেড়ে রেখে যায় কোন নামনাজানা বৃক্ষের নীচে।
শুধু আমার মত সামান্য কিছু হাতে গোনা রাজপুত্তুরের জন্য।
আর সেই মুহুর্তেই বেশ কিছুটা দুরে -
আরো কিছু গপ্পো জমা হতে থাকে –
তুমি গপ্পো বল গপ্পো, সত্যি ভাবতে পারো সত্যি।
মানুষ শুধু তেপান্তরের মাঠের পরে সাতমহলা বাড়ির কথায় মজে থাকতেই চায়।
তবু তুমি ছিলে –  
তাই ইতিহাস নেমে এল ঘাটের কাছাকাছি,
এঁদো ডোবা আর ধুতরো ফুলের ঝুপসি ঝোপের কাছাকাছি,
জোনাক জ্বলা বাঁশবন আর কাদামাটিধোয়া তুলসিতলার কাছাকাছি,
ইঁট বের করা মাজারের কাছাকাছি,  
তবু তুমি ছিলে –
আর ছিল অকৃত্রিম সরল মাধুর্য্য, যেতে চাই যার কাছাকাছি।
মাথার কাছাকাছি আধখোলা 'আমার জীবন’।  
আজ তোমায় প্রনাম।


(রাসসুন্দরী দেবী ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম পূর্নাঙ্গ আত্মজীবনীকার। হ্যাঁ ঠিকই পড়েছ। কোন পুরুষ নয়। রাসসুন্দরী দাসী নাম নিয়ে লেখা আত্মজীবনী ‘আমার জীবন’ গ্রন্থটির প্রথম অংশ তিনি লিখেছেন ৬০ বছর বয়সে,  ৮৮ বছর  বয়সে এর দ্বিতীয় অংশ। প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৬৮ সালে। রাসসুন্দরীর দেবীর জন্ম ১৮০৯ সালে পাবনার পোতাজিয়া গ্রামে। তিনি যে সময়ে জন্মেছিলেন, সেই সময়ে নারী শিক্ষা বলতে কোনো কিছুর অস্তিত্ব ছিল না। সমাজ ছিল প্রচণ্ড রকমের কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং ভয়াবহ ধরণের পুরুষতান্ত্রিক। আটপৌরে এক গ্রাম্য নারী  ছিলেন তিনি।  বিশাল সংসারের ঘানি টেনেছেন তিনি সারাজীবন।  কোনো  বিদ্যালয়ে তিনি যান নি, কেউ  তাঁকে বাড়িতেও বিদ্যাশিক্ষা দেয় নি। নিজ আগ্রহে বহু কষ্টে লুকিয়ে লুকিয়ে নিজে নিজে পড়া শিখেছেন তিনি, পূর্ণ  বয়সে লেখাও শিখেছেন। তারপর ষাট বছর বয়সে অত্যন্ত ঝরঝরে, সহজ সাবলীল  এবং সতেজ ভাষায় লিখে ফেলেছেন তাঁর আত্মজীবনী। কবিতা ও ভক্তিগান লিখতেন তিনি। আজ এই মহান জীবনকে আমার শ্রদ্ধার্ঘ্য)