সাল ১৭৪৯, পুবর্তন রাশিয়া। ইউক্রেন-এর ইয়ারস্লাভ্ল-এ এক চাষী পরিবারে জন্ম নিল যে মানুষটা, তিনিই প্রতিষ্ঠা করবেন প্রথম বাংলা থিয়েটার। শুধু প্রতিষ্ঠাই করবেন না, হবেন বাংলারই একজন অগ্রগন্য নাট্যপ্রযোজক ও অণুবাদক ।


অবিশ্বাস্য লাগছে?


পুরো নাম লেবেদেফ গেরাসিম স্তেপানোভিচ। চার ভাই বোন-এর একজন। লেবেদেফ-এর পরিবার পরে ইয়ারস্লাভ্ল থেকে সেন্ট পিটারসবার্গে-এ চলে আসেন।


সেন্ট পিটারসবার্গে-এই তাঁর সাথে যোগাযোগ হল ‘ফীয়ডোর ভল্কভ’-এর (প্রথম স্থায়ী রাশিয়ান থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাতা)। তাঁর হাত ধরে এখানকার নাট্যমঞ্চে তিনি গান গাইতেন ও নাটকে অভিনয় করতেন। লেবেদেফ একাধারে ইংরেজি, জামার্নি, ফরাসি, বাংলা, সংস্কৃত, হিন্দি ভাষা জানতেন। নিজে নিজে শিখে ছিলেন ভায়োলিন। নাট্যমঞ্চে সেই ভায়োলিন ব্যবহার করতেন। গানের দল নিয়ে ঘুরে বেরাতে লাগলেন ইউরোপময়। রুশ রাজদুত-এর সঙ্গী হয়ে নেপেলস হয়ে প্যারিস, লন্ডন, ইতালি ভ্রমন। বেহালা-বাদক হিসেবে নামডাকও মন্দ হল না। কিন্ত এ ভাবে চললে তো বাংলা থিয়েটার-এর আতুঁর-ঘর খালি র‍য়ে য়ায়। লেবেদেফ ‘ইংলিশ মিলিটারি ব্যান্ড’-এ যোগদান করলেন। নির্দেশ এল যেতে হবে ভারতবর্ষে।


১৭৮৫। লেবেদেফ পা রাখলেন মাদ্রাজ-এর পুর্ব-উপকুলের এক বন্দরে। কয়েক বছর পর তিনি পাড়ি জমালেন বাংলার উদ্দেশ্যে। আসলেন কলিকাতায়।


কলিকাতায় বাঙ্গালী শিক্ষক গোলোক নাথ দাশ-এর সহযোগীতায় বাংলা, হিন্দি ও সংস্কৃত ভাষা চর্চ্চা করলেন। শুধু  নিলেনই না, দিলেনও। তার বাঙ্গালী শিক্ষক-কে তিনি বেহালা-বাদন ও ইউরোপীয়ান সংগীত-এ দীক্ষিত করলেন। লেবেদেফ বাংলায় অনুবাদ করলেন M.Jodrelle-এর The Disguise এবং Moliere-এর L’Amour Medecin। প্রথম অনুবাদটির নাট্যরূপ, নাম দিয়েছিলেন ‘কাল্পনিক সংবদল’ –তার কয়েকটি অংশ পরিবেশিত হল ডোমতলা (অধুণা এজরা স্ট্রিট)-এ অবস্থিত ‘নিউ থিয়েটার’ (মতান্তরে ‘বেঙ্গলী থিয়েটার’) মঞ্চে। আমাদের প্রথম বাংলা থিয়েটার-দর্শন। দিনটা ছিলো ২৭ নভেম্বর ১৭৯৫। ২০০ সিট হাউসফুল!! সেদিন অভিনয় করেছিলেন ১০ জন অভিনেতা ও ৩ জন অভিনেত্রী। পরবর্তী নাট্যস্থাপনা ২১ মার্চ ১৭৯৬। তারপর ইতিহাস................। লেবেদেফ-এর আদর্শে অণুপ্রানিত হয়ে একের পর এক গড়ে উঠতে থাকে ১৮৩১:হিন্দু থিয়েটার, ১৮৫৩:ওরিয়েন্টাল থিয়েটার, ১৮৫৭:বিদ্যোৎসাহিনী মঞ্চ (কালী প্রসন্ন সিংহ), ১৮৬৫:জোড়াসাঁকো নাট্যশালা১  (প্যারিমোহন বসু) ও জোড়াসাঁকো নাট্যশালা২ (গুনেন্দ্রনাথ ঠাকুর), ১৮৬৫:পুববঙ্গ রঙ্গভুমি (মোহিনী মোহন দাশ), ১৮৬৮: বঙ্গ নাট্যালয়১ (যতীন্দ্রমোহন ঠাকুর) ও বঙ্গ নাট্যালয়২ (বলদেব ধর), ১৮৮৭:এমারেল্ড থিয়েটার(গোপাললাল শীল), ১৮৯০-৯২:ক্রাউন থিয়েটার মঞ্চ, ১৮৯৭:ডায়মণ্ড জূবীলী থিয়েটার (কিশোরি লাল রায়চৌধুরী) । এছাড়া  এই সময় জগধাত্রী নাট্যমঞ্চ নামে এক থিয়েটার-দল তো এখনও বিদ্যমান। এ বাদে গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার তো (অমৃতলাল বসু/গিরিশ ঘোষ ধন্য) সর্বজনবিদিত।