এক সপ্তাহও হয় নি শেষ হয়ে গেল বিশ্বকাপ। যোগ্য দল হিসেবেই কাপটি তুলে নিয়ে গেলো অস্ট্রেলিয়া। তাদের জন্য অসীম শুভেচ্ছা।  না, না। এর মধ্যে চিন্তা করার মত কিছুই নেই। চিন্তা করার বিষয় হল এই বিশ্বকাপ ঘিরে আমাদের প্রতিবেশী দুটি দেশের মধ্যে যা যা ঘটে গেল, তাকে এই শতাব্দীর জঘন্যতম অপকান্ড বলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করছি না। আমরা দুটি দেশের বাঙ্গালীরাই ভুলে গেলাম এটা নিছকই একটা ক্রীড়া মাত্র। অনেক আগে থেকেই অল্প-বিস্তর ধুঁয়ার আভাস দেখা যাচ্ছিল। সেই ধুঁয়া অগ্নিস্ফুলিঙ্গের রূপ নিল ভারত-বাংলাদেশের ম্যাচ ঘিরে। সামাজিক মাধ্যমগুলিতে বিশেষতঃ ফেসবুকে নোংরা পাঁকের মত ছড়িয়ে পড়তে লাগল একে অন্যের বিরুদ্ধে কুৎসা যা রীতিমত অকথ্য এবং ছাপার অযোগ্য।


          ব্যাপারটা শেষ অবধি ‘গরু’ রচনার মত হয়ে গেল। গপ্পোটা শুনেছ তো? একটা ছেলেকে পরীক্ষায় ‘গরু’ বিষয়ে রচনা লিখতে দেওয়া হয়েছিল। ছেলেটি লেখা শুরু করল – গরু একটি গৃহপালিত পশু। গরু আমাদের প্রভুত উপকার করে, গরুর চারটি পা, একটি লেজ, দুটি চোখ। গরু ঘাস খায়। ঘাস পাওয়া যায় নদীর তীরে। নদী নেমে এসেছে পাহাড় থেকে, সেই পাহাড়ের উৎপত্তির পিছনে...............................। এক্ষেত্রেও তাই হল। কাদা ছোঁড়াছুড়ি খেলা ছাড়িয়ে রাজনীতির, দেশ, কবে কে স্বাধীন হয়েছে, কে কাকে কি দেয় (ভালো/মন্দ), কি এযাবৎ কেড়ে নিয়েছে এইসব আলোচনায়। সাথে বাছাই করা গালিগালাজ ফ্রি! যাকে এতদিন পরম বন্ধু ভেবে এসেছি, শুরু করলাম আমরা তার বাপ পিতৃপুরুষ ধরে টানাটানি। আমরা নিজে করেছি কি না এই কাজ, সেটা বড় কথা নয়, দুই দেশের নাগরিক হিসেবে এর দায়ভার তো আমাদের সব দেশবাসীকেই নিতে হবে।  দু-একজন পরিচিত কবি এই নোংরামি বন্ধ করার আপ্রান চেষ্টা করেছেন, পারেন নি।  আমাদের মানবিকতা, চেতনা, শুভবুদ্ধি সব ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেলো।


          সীমা পাহাড় ছাপিয়ে গেল যখন জাতীয় পতাকার মত শ্রেষ্ঠ সম্মানের অধিকারীকে ধুলায় ভুলুন্ঠিত হতে দেখলাম। এ আমরা কি করলাম? অপরের মা’কে অপমান করার অন্য মানে তো নিজের মা’কে আগে কলুষিত করা! গায়ে কাঁটা দিলো আর চোখ বুজে নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকল না।


          ভাগ্য ভালো এই আসরের কবিরা এ সবের আঁচ বাঁচিয়ে চলে আসতে পেরেছি।  আমাদের মধ্যে একমাত্র সেতু বন্ধন ‘কবিতা’। তার ওপর দিয়ে আমরা অনায়াসেই একে অন্যের ঘরে পাড়ি দেই, ইচ্ছে করলেই। গিয়ে দুদন্ড বিশ্রাম নেই, কুশল জিজ্ঞাসা করি, খুশী হই। ধন্যবাদ মহামান্য এডমিন, অন্ততঃ এই একটা বিশ্বআসন পেতেছেন যেখান আমরা না ভারতীয় না বাংলাদেশী। সবাই কবি। আমার নিজের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ ভ্রমণ সেই সুখস্মৃতির সশ্রদ্ধ সমর্থন রাখে।


        ভালো থেক। একটা দুঃস্বপ্নের মত কেটে যাক এই বিশ্বকাপের বেদনাদায়ক স্মৃতি। এসো মেতে উঠি মোরা সৌভাতৃত্বের কাব্য-বাহু-বন্ধনে।


         শুভায়ূ।