ছোট্ট ফ্রক পরা সুন্দর মেয়েটা,
এইতো কয়েক বছর আগেও,
কামদুনির রাস্তায় , অলিতে-গলিতে –
এক্কাদোক্কা খেলতো ।
মায়ের বকুনি খেয়ে ,
ছল্ ছল্ উদাসচোখে ভাবতো.
মাগো কবে বড় হবো আমি ,
সব্বাইকে বকুনি দেবো ,
পার পাবেনা তুমি ।
পূজোর সময়ে আলতা পায়ে ,
দুমুঠোতে শিউলি ফুল,
ছুটতো গাঁয়ের পথ ধরে
মায়ের পায়ে সবার আগে,
দিতেই হবে  আমায় ফুল।


নাম না জানা সেই মেয়েটা –
হঠাৎ কোরে বড় হ’ল ,
সাহস কোরে পাঞ্জা লড়ে ,
বুকভরা এক  স্বপ্ন নিয়ে ,
কলেজে পৌঁছুলো ।
বাবা-মা, ভাই-বোনেদের,
ছোট ছোট আশাগুলো –
বেঁচে থাকার রসদ পেলো ।


নাম না জানা ঐ মেয়েটা ,
কলেজ থেকে ফেরার সময়ে ,
ভবিষ্যতের স্বপ্ন চোখে নিয়ে –
লাজুক মুখ নত কোরে ,
অনেকটা পথ পায়ে হেঁটে,
ঘরে ফিরতো রোজ ।
কিন্তু সেদিন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হ’ল ,
ঘরে ফিরলো না ,
সেই স্বপ্ন -দেখা মেয়েটা ।
দুঃশ্চিন্তায়  দিশাহারা পরিবার ,
রাস্তায় রাস্তায় খুঁজে ফিরলো ।
মেয়েটা কোথায় হারালো ?


অনেক খোঁজার পরে ,
সন্ধান পাওয়া গ্যালো ।
ঘরে ফেরার রাস্তার ধারে ,
পাঁচিলঘেরা গুদামের মাঠে ,
ছিন্ন- বস্ত্র ,ছিন্ন –শরীর –
নিথর নীরব স্বপ্নহীন দেহ ।
মাননীয় কাকা –মামা-চাচাদের,
নির্মম কামোন্মত্ত মৃগয়ার ,
বিকৃত উল্লাসের চিহ্ণ ,
সেই ছিন্ন-ভিন্ন প্রাণহীন দেহে ।
অন্ধকারে ঢাকা কামদুনি গ্রাম হাহাকার করে ।
মেয়েটির রক্তে ভেজা মুঠি তুলে,
বিচারের দাবি করে ।
কামদুনির আদরের মেয়েটির রক্তাক্ত আর্তনাদ –
ধিক্কার জানায় নপুংসক প্রশাসনের কাঁদুনে বিবৃতি,
আর হৃদয়হীন দয়ার ভিক্ষাকে ।


স্বপ্ন দেখা মেয়েটির রক্তেভেজা কামদুনি কি,
বাংলার নতুন শক্তিপীঠ হবে ?
রুদ্রদেবের ডমরু কি আবার বাজবে ?
নবশক্তিপীঠের রক্ততিলকে  -
নবজন্মের অভিশেক হোক।
সশক্ত প্রতিবাদের শঙ্খ নিনাদে ,
শুভশক্তির  জয়ধ্বনি  হোক।
কামদুনির শক্তিপীঠের মাটিতে ,
মাতঙ্গিনী ,প্রীতিলতা আর জুয়েটের আবার জন্ম হোক ।
টুম্পা , শম্পা ও মৌসুমীরা নিরাপদ হোক,
ওদের ভীত স্বপ্নগুলো জয়যু্ক্ত হোক ।।
                                                                                  ------ অকবি