আমায় সবাই বলে ,আমি নাকি বিষণ্ণতার রুগী ;
আমি নাকি দুখ:-রোগে ভুগি ।
খুশী হওয়ার দাওয়াই খেয়েও ,
রয়ে গেলাম বিষণ্ণ ও দুঃখী ।
মনে মনে শুধু ভাবি,কেন আমি এত দুঃখী !


আমার ছোট ঘরটায় যখনি ঢুকি ,
আমি যে অনেক কিছু দেখি ।
ঐযে জানলার পাশের চেয়ারটা ,
যেখানে বাবা বসতো রোজ বিকালে -
সেই চেয়ারের পিছনে এখনো বাবার মাথার দাগ ;
দেরিতে বাড়ি ফিরলে ,বাবা আর কখনো  করবেনা রাগ ।
ঐ-তো বিছানার বাঁদিকে ,এখনো মায়ের দেহের মিষ্টি গন্ধ পাই ;
হাসিমুখে ডেকে মা আর বলবে না –
খোকা, আজ জন্মদিনে তাড়াতাড়ি ফিরিস ,
দেরী হোলে একটা ফোন নিশ্চয়ই করিস ।
ঐযে ভাঙা জানলাটা, ওটার পাশেই দাঁড়িয়ে -
কিশোরী ছাত্রী রুমার ঠোঁটে ,প্রথম চুম্বনের পাগলামো  ;
ওর অঙ্কের খাতায় লিখেছিলাম –
আমি তোমার ,তুমি শুধু আমারই ।
থাপ্পড় খেলাম রুমার বাবার হাতে ;
রুমা পাড়ি দিলো বিদেশে , ইঞ্জিনিয়ার স্বামীর সাথে ।
আমি রয়ে গেলাম এই ভালবাসার ধ্বংসাবশেষে ,
যেখানে ঐ ছবিগুলো ফিরে ফিরে আসে;
মনটা আটকে যায় ঐ চেয়ারে ,মায়ের বিছানায় ,
আর ভাঙা জানলার পাশে ; ছবিগুলো ফিরে ফিরে আসে ।


যখন পথের মোড়ে ,পাঁচুর চায়ের দোকানে বসি ;
এদিক-ওদিক চলন্ত জীবনটাকে দেখি ,
মনটা তখন অকারণে হয় খুশী ।
দোকানের অনাথ গোলগাল ছেলেটাকে ,
যেই ডাকি আমি ফুচকা বোলে ;
ছুটে পাশে আসে ,এক গাল হেসে জিজ্ঞাসা করে ;
দাদাভাই , সকাল থেকে পেটটা মনে হয় ফাঁকা ?
ডিমভাজা আর ঘুগনি আছে , সাথে রুটি নয় পাঁউরুটি পাবে ;
আমি প্রশ্ন করি- তোর পেটে কি আছে  ফুচকা ?
ফুচকা বলে হাসিমুখে – দুটো বাসি রুটি রাখা আছে ;
আধখানা তার চুহার পেটে গ্যাছে ,বাকিটা আমার জন্য আছে ।
আমি বোলি – দুটো ডিমভাজা ,ঘুগনির সাথে ছয়টা রুটি চাই ;
তাড়াতাড়ি আয় ,দুই ভাই মিলে  জম্পেশ কোরে  খাই ।
ফুচকা এলো খাবার নিয়ে ,সাথে দুচোখ-ভরা ভোরের আকাশ ;
খাওয়া শেষে ফুচকা হাত চাটে চটাস্ চটাস্ ,
আমার বুকের ভিতর- জল পরে ,পাতা নড়ে টাপুস্ টুপুস্ ;
গরম চায়ের কাপে ভাল লাগার চুমুক -চুকুস চুকুস ।


ফুচকার চোখে রোজ ভোরের আকাশ ফুটুক ,
জীবনটা এখন বিষণ্ণ নয় , যেন খুশীতে ভরা ফানুস ;
বিষণ্ণতার দাওয়াই বোধহয় ভালবাসা আর খুশীর শরিক মানুষ ।।