[ ১ম পর্বে –‘ভোর-সকাল’ ও ‘ দুপুরের’ গপ্পো ছিল ।এবারে শেষাংশ ]


সন্ধ্যাকাল :
দরজা-খোলা দোকানগুলোর ,খদ্দেরের জন্যে রোমাঞ্চিত প্রতীক্ষা,;
ভুলুর চায়ের দোকানের আড্ডা -
হাতি-ঘোড়া কেনা-বেচায় সরগরম ।
পার্কে বেড়াতে আসা দু-চার জোড়া কপোত-কপোতী ,
হাতে-হাত ধরে , চোখে চোখ রেখে –
আলুর চপ আর চায়ের সাথে ভাবি জীবনের মায়াবী ছক আঁকে ।
বুম্বাদার বাড়ির কলেজে পড়া শ্যামলা মেয়েটা –কৃষ্ণা;
কদিন আগেই আমার বুকের ওপর দিয়ে ,
স্বপনের সাথে পালিয়েছিল ঘর বাঁধতে ।
ফিরে এলো দু-তিন দিন পরে , মাথা নিচু করে ;
রাতে শুনেছিলাম ,
ওর যন্ত্রণাময় আর্তনাদ আর চাবুকের আস্ফালন ;
পরের দিন কৃষ্ণা দড়িতে ঝুলে -আবার পালালো জন্মের  মত ।
আমি অক্ষয় বটের মত - নিরুপায় জড়-দর্শক ;
আমার শরীর-মন জুড়ে, মানুষের দেওয়া শত -শত ক্ষত ।


রাতের-বেলা :
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নামে ,বাবুরা কাজ সেরে ঘরে ফেরে ;
ফিটফাট্ বিবিরা বাবুদের খাঁচায় পোরে ,
খানা-পিনা দিয়ে পোষ মানায় ।
তারপর পাশাপাশি  বসে আয়েস করে বিবির শরীর ছুঁয়ে -
টিভিতে নাচা-গানা আর সিরিয়ালের নকল উত্তেজনা উপভোগ ।
সামনের তিনতলায় অঞ্জনদের ফ্ল্যাটের ছবিটা- একটু ভিন্ন ;
গরিব ঘরের মেয়ে সুন্দরী বিপাশা ,কেমন যেন ভীত আনমনা ;
ব্যাল-কনি থেকে উদাস চোখে,
আকাশে মেঘ হয়ে যাওয়া মাকে খোঁজে ।
অঞ্জন ঘরে ফিরে একটা বিলিতি বোতল আর গেলাস নিয়ে বসে ,
চুমুকে চুমুকে পৌরুষে শান দেওয়া চলে দীর্ঘক্ষণ ।
অবশেষে ডাক পরে বিদিশার  ,আতঙ্কিত মেয়েটা কেঁপে ওঠে; বারান্দার রেলিংটা শক্ত মুঠোয়  চেপে ধরে , মায়েরআঁচল ভেবে ।
মত্ত পতি-দেব , বিপাশার চুলের মুঠি ধরে টানে ঘরের ভিতর ,
একটু পরে শোনা যায় বেল্টের আওয়াজ – ছপাৎ ছপাৎ ;
আর নির্বস্ত্রা মেয়েটার বোবা কান্নার গোঙানি – ‘মা, মাগো’ !!
মাতাল হুঙ্কার-‘ বাঁজা মেয়েছেলে- পেটে বাচ্চা ধর,নয়তো মর ‘।
রাত বাড়ে, বিপাশার  বিক্ষত শরীর বারান্দায় লুটিয়ে পরে ,
দুচোখভরা বাষ্পের কুণ্ডলী মেঘের দেশে পাড়ি দ্যায়।
ঘরের ভিতর  সুন্দর নেটের মশারীর নীচে –
ধর্ষণ- পরিতৃপ্ত পৌরুষ , গভীর সুখে নিদ্রামগ্ন হয় ।
বারান্দায় বিপাশা প্রস্তরীভূত জীবাশ্ম অহল্যা ;
আকাশ থেকে মেঘেরা নেমে আসে , হাত বাড়িয়ে –
আদর করে ; নরম মমতায় ক্ষতে প্রলেপ লাগায় ।
অহল্যা বিপাশা ,মেঘ-মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে বুক হাল্কা করে ।
শেষ রাতে ভোরের আজান শুরু হওয়ার আগেই,
ছোট পুঁটলি হাতে বিপাশা গেটের বাইরে রাস্তায় নামে ।
দ্রুত পায়ে আমার বুকের ওপর দিয়ে -
এগিয়ে যায় ‘দিকশূন্যপুরে’র দিকে ;
পিছন ফিরে একবার তাকায় তিনতলার ফ্ল্যাটের দিকে ,
একদলা ঘৃণা আর রক্তমাখা থুৎকার ছুঁড়ে মারে -
পরিত্যক্ত পতির উদ্দেশ্যে ।
ওর চোখে তখন শিশু সূর্যের ঝলকানি আর মুক্ত খোলা আকাশ।


রাস্তা ক্লান্ত হয় , খেজুরে গপ্পো শেষ  ,
কুমু , ভিখু , চম্পারা নিত্য লড়াইয়ের জন্যে প্রস্তুত হয় –
কৃষ্ণা আর বিদিশারা কোথাও হারিয়ে যায় !
আবার একটা সূর্যোদয় হয় , নতুন দিনের গপ্পো তৈরি হয় ।।
(কৃতজ্ঞতা স্বীকার :‘দিকশূন্যপুর’ -নীললোহিতের “নিরুদ্দেশের   দেশে” থেকে নেওয়া )
-অকবি -