স্নেহ মমতা, মায়ার ডোরে
নিতেন মা আমায় স্কুলে হাত ধরে ধরে।  
ঘণ্টা পড়লে ঢুকতাম যখন ক্লাসে
মা আমার থাকত একা নিরালায় বসে।  
অ্যান্টিরা আসত দেখতাম সেজেগুজে
আমার মা পরত বোরকা একটাই রোজে।
থাকত বসে মা গুটিসুটি আর জড়ো হয়ে
চোখে মুখে রাজ্যের সব চিন্তা নিয়ে।  
অনেক হাসি অনেক গল্প করত অ্যান্টিরা
মা আমার থাকত করে মুখ ঘোমড়া ।
বন্ধুরা খেত কত কি ক্লাসের ফাঁকে
আমি শুধু দেখতাম তাকিয়ে থেকে।
একটা টোস্ট হাতে ধরিয়ে
দিতেন মা মাথায় হাত বুলিয়ে।  
টোস্টটা ও থাকত বাঁধা মায়ের আঁচলে
আঁচল খুলে দিতেন মা ওটা একটু আড়ালে।
নিজের চেয়ে মায়ের জন্য কষ্ট হতো আমার অনেক বেশি
হঠাৎ হঠাৎ মায়ের চোখে দেখে জল কনা রাশি রাশি।
এইভাবে সেইভাবে কাটত কোনভাবে দিন
হয়নি দেখা মায়ের বেশে বসন কভু রঙ্গিন।
প্রাইমারী শেষে উঠলাম যখন হাই স্কুলে
কত্তজনে তাই দেখে থাকত গাল ফুলে।
আমার মা যেন বড় অনেক অপরাধী
কেন বানায় না আমায় গাধা আর গাধী।
কেন যাই স্কুলে আমি নিয়মিত
অনেকের মুখ তাই হতো বাংলা পাঁচের মত।  
কুটনামিতে কুটনা দাদুর ছিল অনেক খ্যাতি
স্কুলেতে যেতে দেখলে তুলত কথার ফিরিস্তি।
মুখ বেঁকিয়ে বলত আমায়
বাপ আর আসবে না দেখতে তোমায়।
মেয়ে হয়েছে বলল দাই
বাপ তোমার পালিয়েছিল তাই।
কুটনা দাদুকে কুটনা বলত কেন তা জানিনা
ওর সাথে মা আমায় কথাই  বলতে দিত না।    
বয়স যত দিনে দিনে বাড়ছিল    
দাদুর মত আরও অনেকে অনেক কথা বলছিল।
ইনিয়ে বিনিয়ে গলা টানিয়ে টানিয়ে
কি অইব মাইয়ারে অত্ত লেইখে পড়িয়ে।
অপয়া মাইয়া বাপ করছে দেশান্তর
বিয়া দিলে জামাইরে ও করব দ্বীপান্তর।
অপয়া গো কিয়ের এত্তো লেখাপড়া
পড়ার নামে পালাইয়া হইব একদিন ঘরছাড়া।
আমার পড়াশুনায় কি ক্ষতি হত ওদের?
সকাল বিকাল দিত শুধু খিস্তি খেঁউড় ।
মেয়ে হয়ে জন্মেছি প্রতিবন্ধী এক বোন আর আমি
বাবা হলেন মোদের তাই চির বিদেশগামী।
চোখের জল ধরে রাখতে পারতাম না  
মা বলল, ‘কাঁদবি না একদম কাঁদবি না।
আমি মা আমি বাপ আমি তোর সব
আর আছে মাথার উপর স্বয়ং রব’।  
বাবাকে আমি কখনও দেখিনি
বাবা কেমন তাও কখনও বুঝতে পারিনি।
আমার আগে মায়ের কোলে এলো এক বোন
প্রতিবন্ধী হয়ে তার জায়গা হল ঘরের কোন।
বোনটি ডাকে দিন রাত আবু আব আব
জানিনা ওর কথাও কি মনে করে না নিঠুর জন্মদাতা বাপ।
ছোট থেকেই দেখেছি মাকে কাঁদতে
এখনও দিন যায় মায়ের শুধু কাঁদিতে।  
একটুখানি দিলে মুছে চোখের পানি
অঝোর ধারায় ঝরে মায়ের নয়ন খানি।
গর্ভে ধরে মেয়ে দু’খানি
মা আমার হল চির দুঃখিনী।  
আজি থেকে শুধু এই করছি পণ
জন্মদাতা বাপেরে আনিব মায়ের সমন।  
আমার মা আমার স্বর্গ
মা আমার বেহেস্ত
মায়ের পায়ের নিচে ফেলব আমি
সকল কেতা দুরস্ত।