প্রিয়তম
তোমায় লিখবার আকুতি নিয়ে পর্বত সম।
করেছি আঁকা ঝোঁকা রাত বিরাত
বর্ণের পর বর্ণ কেটে  ব্যাথা হয়েছে যে হাত।
নিঝুম বহুরাত কেটেছে নির্ঘুম
জানালার পাশেও হয়েছে শব্দ ধুম ধুম।  
ফিসফিসিয়ে ডেকেছে কূজন
দিনের পর দিন বহুদিন।    
অঘটন রটাতে আর করতে নিন্দা
ওৎপেতে লোকেরা রয়েছে সকাল সন্ধ্যা।
জানিনা বিধি মোরে বানিল কোন খেয়ালে
বন্দী হয়ে কাটতে লাগল দিন চার দেয়ালে।  
পুতুল খেলার দিন ফুরাল না মোর
কাটল না বয়ঃসন্ধির ঘোর।
হতে দিলে না মোর পুতুলের বিয়ে
তার আগেই আসলে অনেক লোক নিয়ে।
বধূয়ার সাজে লাল পেড়ে শাড়ী পরে
গেলেম বাসর ঘরে।
কিছু বুঝে উঠার আগে
হয়ে গেল অনেক কিছু ঝড়ো বেগে।
অবাক হয়ে দেখলাম কোন মতে
কি হচ্ছে কেন হচ্ছে এসব আমার সাথে।
মোর ভিতরটা ভেঙ্গেচুরে যেন হতে থাকল
চুরমার চোখের কোনে জমতে থাকলেও জল।
তা পড়তে দিইনি মনকষ্ট নিয়ে কোনভাবে
পিতা কি দিলেন বিয়ে! মোরে বোঝা ভেবে!
জানিনা কি এমন ছিলেম বোঝা
খেদিয়ে তোমার সাথে পাঠাল সোজা।
কিছুদিন না পেরোতেই সেই তুমি
পাড়ি দিতে গেলে বিদেশ ভূমি।
হাতের রাঙ্গা মেহেদী
ধূসর ও হল না তত অবধি।
তারপর আসলে না আর আজও ফিরে
বুঝিইনি কাটল মোর দুইকাল কোন ঘোরে।
শখ করে তুমি দুধে মিশিয়ে খেতে বলে নিত্য নিত্য
আমের রসে রসে বানিয়ে রেখেছিলুম আমস্বত্ব।
বছর বছর রোদে শুকোতে গিয়ে সেই আমস্বত্ব
হলেম কত যে ক্লান্ত।  
চিড়া, মুড়ি আর ভাজা চালের মোয়া
টিনে ভরা থেকে থেকে হয়েছে ধোঁয়া ধোঁয়া।
তোমার তরে ফুল তোলা রুমালগুলো
ভাঁজ কেটে মোর চোখে শুধু অশ্রু ঝরালো।
সুন্দর সুন্দর সাজের শীতল পাটি শীতল পাখা
কত না যতনে হল মোর ট্রাংকে রাখা।    
তোমারও তরে বাধিনু সখা
শুধু পত্র পত্র খাঁজের শীতল পাখা।
বেঁধেছি মোর হৃদয় খানে
বিদেশ ভুমের মরুতট পানে।
জেনেও কেন জানতে চাওনা
তোমার ওরসে আসল মোদের ফুটফুটে ময়না।
পুতুল খেলার দিন পুরায়ে হল যে সে ষোড়শী
নানা কথা বলতে ছাড়ে না আজি পাড়া পড়শী।
শেষ হতে অল্প বাকী তার উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়া
কন্যাদান মোর হবে কেমায় তুমি ছাড়া?  
তোমার পথপানে চেয়ে চেয়ে থেকে
মোর অশ্রু গুলো যেন গেল শুকে।
দেখে মোর অনিত্য কর্ম অনিত্য আহার
কত জনায় বলেছে হয়ে গেছি পাথর।  
তিনকাল গিয়ে মোর ঠেকিলে এককালে
দিবে না কি দেখা তব যৌবনান্তও বৈকালে।
তোমায় দেখার তরে মোর অশ্রু জল
দিবা রাতি সদায় করে টলো টল।
আশা ছাড়িনি এতকাল আজও না
ইতি তোমারই বধূয়া মিনা।