পেরাইমারী ইস্কুলের ভবমাষ্টর বলছিল্য একুশ্যা করবেক ।
শুনে’ত হামি হাঁসব্য ন কান্দব্য, মাষ্টরের ইস্ক্রু ঢিলা ন’কি ?
উ আঁটকুড়ার ব্যাটা হ’ল্য, ন বেটি হ’ল্য যে একুশ্যা মানাবেক !
হামার বহুটোর পেট পাতলা, দুঃখার মাঙটোকে বল্যেই দিল
মাষ্টরের বৌয়ের ঠ্যাঁরে পঢ়া শিখছ্যে দুঃখার বৌ আহ্লাদি,
হাঁস্যে খিলখিলায় বলল্য, “অ খুঁড়ি, ই একুশ্যা সি একুশ্যা লয়,
হামদের মা-দিদিমাদের ভাষা লিয়ে গরব করার দিন” ।
হামার খুপড়িতে নাই আল্য, কিসের লাগ্যে হামদের গরব !
হামদের বাপ-চদ্দপুরুষের বুলির ভাষাটো কেউ শিখাঞ্ছে ন পঢ়াঞ্ছে ?
উটা’ত আপনেই আসেছ্যে রে বাপ, ই পাহাড়ল্যে, ই জঙ্গলল্যে ।


ইস্কুলের টাঁড়ে ছাগল চরাথ্যে যাঁয়ে মাষ্টরকে পাঁয়্যে গেলি,
বললি, “হেঁই মাষ্টর, তুমার আবার একুশ্যা কিসকে হবেক” ?
ভবমাষ্টর হামকে বেঞ্চিয়ে বঁসাই কাঁচের গেলাসে চা খাওয়ালেক,
বলল্য, “তুকে যদি বলি, কালল্যে তুই কুর্মি ছাঁড়্যে হিন্দি বলবি,
লাতিটোকে হিন্দি পঢ়াবি. তুই মান্যে লিবি ? তর বাপ-দাদার
ভাষাটোকে কেউ বেইজ্জৎ করল্যে, অচ্ছুৎ করল্যে, নাই কিছু বলবি” ?
শুনে’ত হামার দিমাগটো গেল চঢ়ে, বেঞ্চিয়ে দাঁড়াই হাঁকড়াঞ উঠলি,
“কন বাপের বেটা হামার কুর্মি হঠাবেক ? হামার চদ্দপুরুষের
ভাষাটোকে বেইজ্জৎ করে দেখাক ন, শালা টাঙ্গির এক্কেই কপে ……
মাষ্টর হামকে থামাঞ দিয়ে বলল্য, “ইটোই হয়েছিল্য, বঙাল
ভাষাটোকে হঠাঞ দিতে পশ্চিমা লকগুল্যান বহুত কোশিশ করেছ্যে
উঁয়াদের গুলিয়ে হামদের বহুৎ লক জান কুরবানি দিয়েছ্যে,
তো হামরা কি এই কুরবানিকে একটুও ইজ্জৎ দিব নাই ?
তাই ইংরাজীর দুসরা মাসের একুশ্যা গটা জগতের লক লিজের
ভাষার দিন বল্যে মানে । হামরাও উদিন ইস্কুলের ছ্যালাপুল্যাদের
পদ্য বলতে বলব্য, গপ্ফ শুনাত্যে বলব্য, হামরা লিজেরাও বলব্য” ।
“হেঁই মাষ্টর, হামি’ত আনপঢ়, গাঁওয়ার লক, হামি কথাল্যে জানব্য
ইসব কহানি, হামার ছুটকা লাতিটো’ত তঁরেই ইস্কুলে পঢ়ে,
উঁর সঙে হামকেও আসত্যে দে’ন, তুদের একুশ্যা মানাত্যে:
নাই কিছু পারি. ই কুরবানিটোকে গঢ় করেও ত ধন্য হব” ।


(আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলা মিশ্রিত কুর্মালি ভাষায় লিখিত কবিতা)


প্রকাশ : ২১শে ফেব্রুয়ারী, ২০১৩


কিছু আঞ্চলিক শব্দের বাংলা অর্থ


মাঙ (স্ত্রী); ঠ্যাঁরে (নিকটে); খুপড়ি (মস্তিষ্ক); টাঁড়ে (ডাঙা জমিতে); কিসকে (কিসের জন্য); হাঁকড়া (গর্জন করা); থামাঞ (থামিয়ে); আনপঢ় (অশিক্ষিত) গাঁওয়ার (গ্রাম্য); গঢ় (প্রণাম)