গরীবের আবার জ্যাত কি গো ?
বেল্যাড়ার জব্বর আর উল্যাড়ার ছিদাম
দু’লকের কী ফারাক আছে ?
ভুর সকালে দু’টা পান্তা বেঁত্যে দিহে
দুঁহেই দৈড়ায় শহুরে মজ্যুরা খাটত্যে
মাড়ুদের গদামে মালের বস্তা বঁহে
দিনমজুরীর ক’টা টেকা পাঁয়্যে
মু-আধ্যাঁরা হবার আগেই ঘরকে ফিরে ।
দেখবি যা, ছিলকা ঊঠা ঘরের মেঝ্যায় বস্যে
চুলায় ফুঁক দিছে জব্বরের বিবি,
ঝুপড়ি ঘরে ছিল্যা-পিল্যা লিহে
ছিদামের বৌটা কুলি পানে চাঁয়্যে
বস্যে আছে টুকুন চালের লাগ্যে ।
জব্বরদের গটা বছরেই চলে রজা
ছিদামদের চলে শিবরাত্তির উপাস ।


ধম্ম উঁদের পেটের ভাত জুগাবেক ?
ধম্ম উঁদের পরনের ট্যাঁনা জুগাবেক ?
গরীবের চ’খে ধম্মের ঠুলি পরাঞ দিহে
বড়লকরা উঁয়াদের খুন চুষে খাছে,
ভটবাবুরা ধম্মের নামে ভট লুট্যে যাছে,
রাম-রহিমে লড়াঞ দিহে ফৈদা লুটছ্যে উঁরা ।
দু’পড়শির মা-গুল্যানের চ’খের জলেও
ধম্মের কল বাসাতে কভুও লড়বেক নাই ।
ছ্যাঁড়া-ফাটা ট্যানার ফাঁক ফুকরে হুলকাছ্যে
ছিদামের বৌয়ের হাড়জিরজিরা গা,
জব্বরের বিবির ছ্যাঁদা-ফুটা সানকিটোয়
খাপরা শাগ আর আধভাঙা গেড়িগুগলি,
ধম্ম দিহে ই-ছবিটো বদলাত্যে পারবি ?
তবে কিসের লাগ্যে জব্বররা যাবেক মসজিদে
মন্দিরে যাবেক ছিদামদের পারা ভুখা-পিঁধারা ?


(কবিতাটি পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া-পুরুলিয়া জেলায় প্রচলিত আঞ্চলিক কথ্য ভাষায় রচিত)


পাঠকদের সুবিধার্থে কিছু আঞ্চলিক শব্দের অর্থ দেওয়া হ’ল :


বেঁত্যে (মুখে); দুঁহেই (দুজনাই); দৈড়ায় (দৌড়ায়); মাড়ুদের (মাড়োয়ারীদের);
মু-আধ্যাঁরা (সন্ধ্যেবেলা); কুলি (রাস্তা);      বাসাতে  (বাতাসে); হুলকাছে (উঁকি মারছে); সানকিটোয় (টিনের থালায়); ভুখা-পিঁধারা (অভুক্ত-বঞ্চিত মানুষেরা)