বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের আবহমান সংগ্রামের প্রতীক হয়ে,
সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের চিরকালীন ভাষা হয়ে
দীর্ঘ সময় কাটিয়ে, হে বিদ্রোহী, তুমি কি সত্যিই রণক্লান্ত ?
নাকি যুগের আবর্ত্তে, আগ্রাসনের পরিবর্তনশীল তত্ত্বের বিরুদ্ধে
প্রতিবাদের ভিন্ন ভাষা নিয়ে, সময়োপযোগী নয়া রণকৌশল নিয়ে
সারা বিশ্বের শোষিত জনগণের মুক্তিসংগ্রামে, হতে চাও অভ্রান্ত !


হে বিদ্রোহী ! তুমি দাসত্বের বন্ধনে শৃঙ্খলিত জনগণের মুক্তির বীজমন্ত্র,
চির বিদ্রোহী, তুমি কবির কলমে কালবৈশাখী জাত এক অনন্য, সতন্ত্র ।


ভাষার কাঁটাতার অন্তরায় না হ’লে হয়তো তোমার বিমুগ্ধের দলে
সামিল হতেন হো-চি-মিন, মরিশ বিশপ অথবা সেই গুয়েভারা চে,
না হলেও তুমি আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিকতা দিয়ে তোমায় বাঁধা বৃথা ।
তোমার স্রষ্টা নজরুল তাই দেশ-সমাজ-ধর্মের উর্ধ্বে এক বিরল কবি,
হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে এঁকে গেছেন দুঃখিনী বাংলার অশ্রুমুখী ছবি,
সঙ্গীতের লহরে লহরে ভাসিয়ে দিয়েছেন কত না বলা নীরব ব্যথা ।


হে বিদ্রোহী ! তুমি বিশ শতকের শ্রেষ্ঠ কাব্যকলা, বাংলার সাংস্কৃতিক বিপ্লব,
চির বিদ্রোহী, তুমি রাবীন্দ্রিক বন্ধন ছিঁড়ে বেরানো কবির অসামান্য গৌরব ।


বিশ্বায়ণের আড়ালে সাম্রাজ্যবাদ আজও চালিয়ে যায় শোষনের শাসন,
সাম্প্রদায়িকতা জঙ্গী মৌলবাদের রুপে সৃষ্টি করছে সন্ত্রাসের বাতাবরণ,
তুমি কি ভেবেছো বিদেশীমুক্ত স্বদেশে তোমার ভুমিকা এখনই শেষ ?
উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোলে তোমারই দেশে আজও কলুষিত বাতাস,
অত্যাচারীর খড়্গকৃপাণে আজও বলি হয় মানুষের গণতান্ত্রিক বিশ্বাস
দেশের এই সঙ্কটকালে, তুমিই ত্রাতা, বিশ্বাসী মোরা বিশ্বাসী সারা দেশ ।


হে বিদ্রোহী ! তুমি চির উন্নত শির, মুক্তিকামী জনগণের শৌর্যের প্রতীক
চির বিদ্রোহী, অশান্তির উত্তাল সাগরে শান্তি তরণীর তুমিই শ্রেষ্ঠ নাবিক ।


(কাজী নজরুলের “বিদ্রোহী” কবিতার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী)