হামদের মুঁহের কথ্যাগুল্যান লিয়ে আইজ্ঞা বেশ পইদ্দ লিখছেন,
হামদের সুখ-দুখের কহানিগুল্যান বিরুল্যের পারা দৈড়ে যাছে
ই দেশ ল্যে উ দেশ, লে কে আটকাবি আটকাই দেখা ন !
হাল বাহা, মাটি কাটা, কৈলা তুলা লকগুল্যার দিকে ভাল্যে
ভদ্দর লক বাবুরা বলথ্য, তদের যেমনি ভাষা তেমনি ছিরি,
হামরা মাথা নুয়াই পালাই যাথি, লাজে মুহ লুকাথি গাজড়ে,
টাঁড়-বাদের চাষাভুষা মানুষ মুরা, সোন্দর ভাষা পাব কুথায় ?


আপনারা আইজ্ঞা পঢ়ালিখা মানুষরা হামদের অছুত ভাষাটো দিয়ে
এমন পইদ্দ লিখছেন, যেমন ডবকা মহুল্যের পারা মিঠা মিঠা বাসে
চাদ্দিক মঁহকাই দিছে, ছলছল্যা ঢেউয়ের লহরে হেলকাঁই দিছে গ !
হামদের কাঁড়াখুঁটা ল্যে কুঁখড়া লঢ়াই, বাঁদনা বাহা ল্যে ভক্তা পরব
ভাদর মাসের ভাদু, পউস পরবের টুসু, কনটাই বাদ রাখেন নাই ।
হামদের বুকের আগুনটোকে ছুঁয়াই দিয়েছেন রাত্যের ভুড়কা তারা
ইটো যেমন টবটব্যা খেজুর রসে ভিজে মনটো সুঁটরু হয়ে গেল হে !


ফুরফুরা ধুতিপঞ্জাবী পরা ফুল বাবুগুল্যান’ত চুপসাঁই গেল আইজ্ঞা !
টাঁড়-বাদের ভাষায় লিখা হুঁই পইদ্দগুল্যান’ত টাঙিরল্যেও শনশন্যা
চিতি সাপের পারা বিষ উগরাঁই পুঁঢ়াই খাঁক করল্য খুনচুষাদের ।
নাই বাবু, ইটো লয় যে পইদ্দগুল্যান হামদের পেটের ভখ মিটাঞ্ছে,
তবে হেল্যার পারা ডরে সিঁধানোর ল্যে খরিসের ফঁস করাটা শিখাঞ্ছে,
দুনিয়ার লককে জানাই দিয়েছে ভাত-টেন্যা-ভিটার লাগ্যে লঢ়াই করা
সব গরীবই এক, মুঁহের ভাষা দিয়ে উঁদের ভিনু করা যাবেক নাই ।


(কবিতাটি পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলে প্রচলিত কথ্য ভাষায় রচিত)


কিছু আঞ্চলিক শব্দের বাংলা অর্থ :
মুঁহের (মুখের): আইজ্ঞা (আজ্ঞে); পইদ্দ (কবিতা); কহানিগুল্যান (গল্পগুলো); বিরুল্যের পারা (বিড়ালের মতো); দৈড়ে (দৌড়ে); কৈলা (কয়লা); ভাল্যে (তাকিয়ে); গাজড় (জঙ্গল); বাসে (গন্ধে); মঁহকাই (সুবাসিত করা); হেলকাঁই (ভাসিয়ে দেওয়া); কাঁড়াখুঁটা (গরু/মহিষের পূজা); কুঁখড়া লঢ়াই (মোরগ লড়াই); বাঁদনা বাহা (এক প্রকার লোকাচার); ভক্তা পরব (গাজন উৎসব); ভাদর (ভাদ্র মাস); ভাদু (এক প্রকার লোকপূজা); পউস (পৌষ মাস); টুসু (এক প্রকার লোকপূজা); ভুড়কা তারা (ধ্রুব তারা); টবটব্যা (রসালো); সুঁটরু (রসসিক্ত, কুঞ্চিত); ফুরফুরা (মিহি, মসৃণ); চুপসাঁই (চুপসে যাওয়া); টাঙিরল্যেও (কুঠারের চেয়েও); শনশন্যা (ধারালো); উগরাঁই (ঊগরে দেওয়া); পুঁঢ়াই খাঁক (পুড়িয়ে শেষ করা); ভখ মিটাঞ্ছে (খিদে মিটিয়েছে); হেল্যার (হেলে সাপ, এক প্রকার নির্বিষ নিরীহ সাপ); সিঁধানোর (গর্তে ঢোকা); ভাত-টেন্যা-ভিটা (ভাত-কাপড়-ঘর); ভিনু (পৃথক)


সংক্ষিপ্ত বাংলা তর্জমা


একজন গ্রাম্য আদিবাসীর মুখে কবিতাটি ফুটে উঠেছে । ও বলতে চাইছে - শহরের বাবুরা আগে গ্রামের মানুষের ভাষাটাকে হেয় করতো, এখন কিছু শিক্ষিত ভদ্রলোক সেই ভাষাতেই কবিতা লিখে তাদের মোক্ষম জবাব দিষেছে । কবিতাগুলো যেন পুরুষ্ট মহুয়া ফুলের মত গন্ধ ছড়িয়ে চারদিক সুবাসিত করছে, ছলছলিয়ে ঢেউ উঠিয়ে এক উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছে । কবিতাগুলো তাদের আশা আকাঙ্খাকে আকাশের তারা ছুঁয়িয়েছে । ঐ কবিতাগুলো যেন কুঠারের চেয়েও ধারালো, চিতি সাপের মতো বিষ উগরিয়ে রক্তচোষাদের পুড়িয়ে খাঁক করছে । একথা ঠিক, কবিতাগুলো ওদের পেটের খিদে মেটাতে পারছে না, তবে কাপুরুষের মতো বাঁচার চেয়ে অন্তত খরিস সাপের মতো ফোঁস করতে শিখিয়েছে, পৃথিবীর লোককে জানিয়ে দিতে পেরেছে, ভাত-কাপড়-বাসস্থানের জন্য লড়াইএ পৃথিবীর সব গরীব অভিন্ন, মুখের ভাষা দিয়ে ওদের পৃথক করা যাবে না ।