*** মন্তব্য করতে হলে অনুগ্রহ করে সম্পূর্ণ কবিতা পড়ুন ***


[গ্রাম্য উপভাষায় “ন” ও “ল”এর উচ্চারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিপরীতমুখী হয়; যেমন লাচ (নাচ); লতুন (নতুন); আবার নঙ্কা (লঙ্কা) নব (লব); তেমনই “ক্যানেল” শব্দের উচ্চারণ “ক্যালেন” হয়]


হামদের গাঁয়ে ক্যালেন আইসবেক গো, ক্যালেন আইসবেক;
খরায় পুঢ়া ডাং-ডহরে ইবার লদীর জল ছলছল্যাবেক,
বিটি-বহুরা ক্যালেনঘাটে কাপড় কাইচবেক, বাসন মাইজবেক
গাঁয়ের জুয়ান ছেল্যারা ঘুলঘুলি, বড়শি লিয়ে মাছ ধইরবেক
বাদলাদিনে ইয়া বড় বড় চ্যাং-গঢ়ইগুল্যান উলফা দিবেক
লে, কত খাবি খা, পুঢ়াবি ন সিঝাবি, ঝোল করবি ন ঝাল ।


ক্যালেনের জলে খরায় ঝামুরে যাওয়া ধান আবার লকলকাবেক
বাদার ডিংলা, ফুঁটি, ঝিঙা, পরলগুল্যান ডাগুর-ডুগুর হবেক
লিজেরা খা, গটা গাঁ বিলা, বাদবাকি বিকে দে পাইকারদিকে
ঘরের ছামুতে পুঁই, খাঁড়ি, কাল্লা বনাব বড় ছোঁয়াটোর লাগ্যে
তদ্দিনে নকরির চক্কর ছাঁড়্যে হামার হারান্যাটো নাই ঘুরবেক !
চাষার ছেল্যা চাষ করবি, হাল বাইবি, নকরিতে কি হবেক ?


পরান্যা সিবার রেল আপিসল্যে খপর লিল্য, হারান্যা আর নাই
জঙ্গলমহলে লাইনের পাত্তি খুল্যে মাওবাদীরা গাড়ী পাল্টি করেছ্যে
মেয়্যা-মরদ-ছিল্যাপিল্যা লিয়ে শ’য়ের উপর লক খতম হয়েছ্যে ।
হারান্যা’ত উ গাড়ীটোতেই রেল কেন্টিনে জগাড়দারের কাম করত্য
তাবাদে উঁয়ার কন খপর নাই, রেলবাবুরা বলল্য উ মরে গেছে
পাল্টি খাওয়া ডাব্বায় উঁর রক্ত-মাস লাগা পেন্টুল উঁরা পাঁয়েছ্যে ।


বল্লেই হল্য মরেছ্যে ? হামার মন বলছ্যে হারান্যা বাঁচেই আছে
গাঁয়ের লক জবরজস্তি করলেও হামি উঁয়ার শেরাদ্ধ করি নাই
রেলবাবুরা পরান্যাকে নকরি দিতে চাইলেও উঁকে লিতে দিই নাই ।
ক্ষ্যাপা মাষ্টর বলে - তুর মন যখন বলছ্যে উ লিচ্চই ঘুরবেক
হামি’ত ঠিকেই করে রাখ্যেছি আসছে ফাগুনেই উঁর বিহা দিব
লতুন বহু পাল্যে নকরির লেশা কাঁটাই যদি বেটা ঘরেই থাকে !


কন লেংটাকালল্যে দেখেছি ই গাঁয়ের ছামুটোয় একটো লদী ছিল
কলকলায়ে জল ছুটত্য বনবাদাড় ফাঁড়্যে, নাম ছিল হারান্যাজোড়
হামার পুয়াতি বৌটো হুঁই জোড়ে সিনাই আস্যেই ন বেটা জন্মাল
লদীর সঙে মিলমিশ করে হামিই বড় বেটার নাম রাখলি হারান্যা
কাদা বালিয়ে ভঁতে ভঁতে লদীটোই হারাঁই গেল হারান্যার মতন
মন বলছ্যে ক্যালেন হয়ে লদীটোই ঘুরে আসছ্যে হারান্যাকে লিয়ে ।


কিছু আঞ্চলিক শব্দের অর্থ :


ডাং-ডহরে (উঁচুনিচু জমি); ঘুলঘুলি (মাছ ধরার ফাঁদ); চ্যাং-গঢ়ই (ল্যাটা মাছের প্রকারভেদ); উলফা (ডিগবাজি দেওয়া); সিঝাবি (সিদ্ধ করবি); ঝামুরে (নেতিয়ে পড়া); বাদার (বাগানের); ডিংলা (কুমড়ো); ফুঁটি (শষার প্রকারভেদ); পরল (পটল জাতীয় সব্জী); ডাগুর-ডুগুর (বড় সড়); বিলা (বন্টন করে); কাল্লা (করলা, উচ্ছে); পাল্টি (উল্টে দেওয়া); তাবাদে (তারপর); খপর (খবর); ডাব্বা (কামরা); রক্ত-মাস (রক্ত মাংস); পেন্টুল (পায়জামা); জবরজস্তি (বলপূর্বক); শেরাদ্ধ (শ্রাদ্ধ); লিচ্চই (নিশ্চই); ঘুরবেক (ফিরে আসবে); লতুন বহু (নতুন বৌ); লেংটাকালল্যে (বাল্যকাল থেকে); ছামুটোয় (সামনে); লদী (নদী); বনবাদাড় (বনজঙ্গল); ফাঁড়্যে (ভেদ করে); পুয়াতি (গর্ভবতী); সিনাই (স্নান করে); মিলমিশ (মিলিয়ে); ভঁতে (মজে যাওয়া)