করমন্ডলের বাতানুকুল কামরায় আলাপ হল তাঁর সাথে,
ভাইজাগের এক বহুজাতিক কোম্পানীর চিফ ইঞ্জিনীয়ার
চলনে বলনে কেতাদুরস্ত মধ্য চল্লিশের ডঃ ডি রবীন্দ্রনাথ ।
নামটা শুনেই সুপ্ত বাঙালি আবেগে লাগে গর্বের সুড়সুড়ি
মস্তিষ্কের ক্যানভাসে সদাজাগ্রত শ্মশ্রুমন্ডিত এক দীপ্ত মুখ ।


শ্যামবর্নের দক্ষিণি মানুষটার ব্যাক্তিত্ব ছড়ানো সারা অঙ্গে
অসাধারণ দীপ্ত দুটি চোখ,বলিষ্ঠ মুখমন্ডল, কাঁচাপাকা চুল ।
আলাপের ছলে স্বযত্নে হিন্দি এড়িয়ে প্রথম প্রশ্ন ইংরেজীতে
স্মিত হেসে বাঙালি জাত্যাভিমানকে স্ট্রেট সেটে উড়িয়ে
দক্ষিণি রবীন্দ্রনাথের উত্তর এলো খাঁটি বোলপুরী বাংলায় ।


বোলপুরে ইঞ্জিনীয়ারিং পড়ার সূত্রে শান্তিনিকেতনে পদার্পণ
ধীরে ধীরে বাংলা শেখা, হয়ে ওঠা গভীর রবীন্দ্র অনুরাগী ।
রবীন্দ্র কাব্য-সাহিত্যকে তেলেগু ভাষায় রূপান্তরের প্রচেষ্টা,
রবীন্দ্র জীবনদর্শনকে আপন করে নিজেকে পরিবর্তিত করা
চলছিল ঠিকঠাকই, হঠাৎ জীবনে চলার পথে ছন্দপতন ।


যুবক রবীন্দ্রনাথ সারা মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিল পারুলকে
বসন্ত উৎসবে ছাতিমতলায় নৃত্যরতা “চিত্রাঙ্গদা” দেখে মুগ্ধতা
ধীরে ধীরে আলাপ, আলাপ থেকে অন্তরঙ্গতা, ভালোবাসাবাসি ।
হঠাৎ পরিবার পরিজনে সুপ্ত বাঙালিয়ানার তীব্র উদগীরণ
ঘৃণ্য প্রাদেশিকতার যূপকাষ্ঠে বলি হল দুটি না ফোটা ফুল ।


প্রাদেশিক সঙ্কীর্ণতা তবুও কেড়ে নিতে পারেনি তাঁর রবীন্দ্রচর্চ্চা,
বঞ্চিত জীবনের শুণ্যতাকে ভরাট করতে আরও বেশী রাবিন্দ্রিক
পেশাদারিত্বের পোষাকের আড়ালে রবীন্দ্রমনষ্ক অকৃতদার মানুষটা
আজও হৃদয়ের অন্তঃস্থলে বয়ে বেড়াচ্ছেন নৃত্যরতা “চিত্রাঙ্গদা”,
তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম নিবিড় নিভৃত পূর্ণিমানিশীথিনীসম ।


মনে পড়ে যায় বহু সম্বর্ধিত বিদগ্ধ প্রতিষ্ঠিত এক কবির কথা
একবিংশ শতাব্দী আধুনিক কবিদের জন্য, রবীন্দ্রনাথ অপ্রাসঙ্গিক
প্রেম আর প্রকৃতির কবিতা বড়ই সেকেলে, দাও সেক্সের ছোঁয়া ।
বাতানুকুল কামরার বাইরে ঝাপসা কাঁচে জমা বিন্দু বিন্দু জল
ভিতরে আবছা আলোয় আধুনিক স্থপতিকারের মুখ শ্মশ্রুমন্ডিত ।