কিলাব সিকরেটরী বুধন মাষ্টর বলল্য আস্যে ঘরে
স্বাধীনতার দিনে আসতে হবেক ধুতি পাঞ্জাবী পরে ।
সকাল সকাল যাঁয়ে কিলাবে তুলবি তিরঙা ঝান্ডা
তুকেই খুঁড়া মালা পরাবেক হামদের লীডার পান্ডা ।
শুনেই গরবে ফুল্যে উঠে হামার ছেঁদাফাটা পাঞ্জরা
ইয়াদে আসে জওয়ানির সেদিন যেমন আগুন ঝরা ।


রাধু মাষ্টর বলল্য মিটিনে বিলাতি জিনিস জ্বালাও
স্বাধীন করে দেশটো মুদের লালমুঁহা যত পালাও ।
গাঁয়ের যত বাউরি-বাগদী সঙ্গে মাহাত সাঁওতাল
জড় করলি একসাথে সব ইবার লালমুঁহারা সামাল ।
ছাঁচায় ছাঁচায় ঘুরলি সবাই বিলাতি জিনিস মাঙতে
মিলল বহুত সিলিকের শাড়ী আগুন লাগালি রাত্যে ।
সকাল হতেই গরা পল্টন ঢুকল্য গাঁয়ে ভিড়ভিড়াই
ইজ্জত লুটে গাঁয়ের বিটির গুলি চালায় গিড়গিড়ায় ।
কাঁড়বাঁশ আর টাঙি লিয়ে বাউরি-বাগদী-সাঁওতাল
জবর লড়াই করল্য সবাই গরা পল্টনরা বেসামাল ।
মরল্য ক’জন গাঁয়ের ছেল্যা, ভরল্য জেলে মুদের
রাখল্য ছ’মাস জেল হাজতে ছ্যাঁকা গরম শিকের ।
আঁকল শরীলে কালদাগ আর জবান কাট্যে গঙা
দেশটো ইপর স্বাধীন হল্য চারদিকে উড়ে তিরঙা ।
আজাদীর সুয়াদ নাই পালি শুধু গঙা হয়েই রইলি
কেউ কনদিন লেয় না খবর বাঁচলি নকি মরলি ।


বুধন তবুও পরধান হয়ে হামকে ইজ্জত দিতে চায়
পরলি ধবধব্যা ধুতি পাঞ্জাবী লাতনিটো সঙে যায় ।
কিলাবে তখন চলছে মাইকে “টুনির মা”য়ের গান
লাচাকুঁদায় মশগুল উঁরা, কে দিবেক মুকে সম্মান ।
চারদিকে দেখি মদের বতল, ঝিমাছ্যে ক’টা ছঁড়া
বুধন আসেই বলল্য হামকে “কেমন আছগো খুঁড়া” ?
মাটির ভাঁড়ে চা আনাল্য লাতনির লেড়্যা বিস্কুট
ভটভটি করে আসল্য পান্ডা মুখে তখনও চুরুট ।
বুধন আস্যে বলল্য হামকে ইবার উড়াও ঝান্ডা
রশিতে বাঁধা তিরঙা পতাকা লম্বা বাঁশের ডান্ডা ।
ফরফরায়ে উড়ল্য তিরঙা রশির এক হ্যাঁচকায়
শরীলের কাল দাগগুল্যা সব যেমন গেল মিলায় ।
আজকে পরথম মনে হল্য দাগগুল্যা মুর গরবের
স্বাধীনতার সুয়াদ বড় মিঠা দিনটা শুধু পরবের ।
গেঁদা ফুলের পরাল্য মালা, হাততালি দেয় লকে
গঙা বলে বক্তিমা ছাড়, জল আস্যে যায় চখ্যে ।


ফাঁকা হতেই বসল্য বুধন হামার পাশের চিয়ারে
সিগরেটে টান মারে বলে শুনে লাও খুঁড়া ইবারে
ইজ্জত দিলি মালা পরালি জিন্দেগীতে নাই পাও
ক্যালেনপাড়ের জমিন টুকু কিলাবকে লিখে দাও ।
নাইলে হামার ছেল্যাগুল্যা দেখেছ্য কেমন বজ্জাত
লাতনি তুমার ডাগরডুগর ছিঁড়ে খাবেক ইজ্জত ।
মনে হল নালীর পকারা কাল দাগে কিলবিলাই
দেশের লাগ্যে লড়াই করার পালি সম্মান ইটাই !
হ্যাঁচকা টানে তুললি হাতে তিরঙা জড়ানো বাঁশ
বুধন কিছু বুঝার আগেই উঁকে বনাই দিলি লাশ  ।


(পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া-পুরুলিয়া জেলায় প্রচলিত কথ্য ভাষায় রচিত)


কিছু আঞ্চলিক শব্দের অর্থ
কিলাব (ক্লাব); সিকরেটরী (সেক্রেটারী); ছাঁচায় (ঘরের সামনের চালা); গরা (সাদা চামড়ার মানুষ); পল্টন (সৈন্য); ভিড়ভিড়াই (দলে দলে); বিটির (কন্যার); কাঁড়বাঁশ (তীর-ধনুক); পরধান (প্রধান); ভটভটি (মোটর সাইকেল); পরথম (প্রথম)