(আজ আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবস । একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বজোড়া বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন প্রদীপের তলায় থাকা গ্রাম্য আদিবাসী সমাজ এখনও শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত । ওদের অন্ধকারময় জীবনের সামান্য প্রতিচ্ছবি আমার আজকের আঞ্চলিক কবিতায় ফুটে উঠেছে ।
প্রসঙ্গতঃ সারা ভারতে নাগরিকদের অভিন্ন পরিচয়পত্র প্রদানের উদ্দেশ্যে ভারতের Planning Commission “আধার কার্ড” বা UIDAI (Unique Identification Authority of India) Card এর ব্যাবস্থা করেছেন । কিন্তু গ্রামের নিরক্ষর মানুষ অতো বোঝে না, ওদের কাছে ওটা “আন্ধার (Dark) কাড়”)


বুঢ়া আঙুলের টিপ দিতে দিতে শালা আঙুলটোই খিঁয়াই গেল,
কন জম্মলে কোরা কাগজে বুঢ়া আঙুলটোর ছাপ মারেই চলেছি
তিনকুড়ি উমরেও কি তরা ছাড়বিস নাই, চিতায় উঠলেও লিবি ?
ভঁগা-পিঁধা চাষাদের বাঁ-হাতের বুঢ়া আঙুলটোর দম আছে বাপ !
আঙুলটোয় দগদগ্যা করে কালি লাগায়ে কাগজের উপরে মার ছাপ,
মহাজন দাদন দিবেক, সুদখোররা ঘরে টাকা গুঁজে দিয়ে যাবেক ।
ই টিপটোই জোর করে আদায় করে পঞ্চায়েত জুরমানা ভরে লিবেক
গাঁয়ের মড়ল বিটির বিহার কর্জা চুকাত্যে জমিনের দখল লিবেক
আইনবাবু, আমিনবাবু, পিওনবাবু, সবারই একটাই মাঙ "টিপ দে" ।
তবে বাপ ই আঙুলটোর ইজ্জত সবসে বাড়ে যায় ভট পরবের সময়,
ই বলবেক ই ছাপে ভট দিবি নাইত জিন্দেগীভর ঠুঁটা করে রাখব্য
উ বলবেক পাল্টি মারল্যে পুরা হাতটাই কাট্যে জগন্নাথ করে দিব ।
হ্যাঁরে বাপরে আঙুলেই না থাকল্যে তরা কথাল্যে ভটটো পাবিস বল ?


ধরণের সময় ক’টা শহুরা বাবু হামদের ইস্কুলঘরে হপ্তাধরে বসেছিল্,
মকবুল হামকে ফটফটিয়ে চাপায় হথায় ফট খিঁচতে লিয়ে গেছল,
হাই বাপ, শুধু মুখের লয়, চখের, হাতের আঙুলগুল্যানের ফটও লিছে ।
হামি’ত ঘাবড়াই গেলি, বিজলী মশিনে আঙুলগুল্যা যদি পুঁড়াই দেয় !
বীজধানের দাদনটো, মেজল্যা বিটির বিহার কর্জাটো লিব কি করে ?
হামি’ত পালাই যাছিলি, হামার ভাইপ মদনা বুঝাল্য নাই কুছু হবেক,
আঙুলগুল্যানের ফট তুর পহচান হবেক, ফটয়ালা আন্ধার কাড় দিবেক,
উ কাড়টো দেখাল্যে কন্টলের চাল, গহম, চিনি, মাটিতেল সব মিলবেক ।
হাঁসে বললি, হ্যাঁরে বাপ, হামদের জীবনটোই আন্ধ্যারা, কাড়ে কি হবেক ?
তারল্যে বাবুগুল্যানকে বল’ন হামদেরকে একটো করে আলর কাড় দিতে,
সি আলটোই হামদের আন্ধ্যারা জীবনে লতুন সুয্যির পারা হুলকাবেক,
হামদের আজম্ম দুঃখু ঘুঁচাই ধবধব্যা সকালে ঢেঁডরা পিটে সুখ আনবেক ।