কি আজ্ঞা, চিনতে লারছেন ত ?
টুকু কৌশিস করল্যে বধহয় চিনে লিবেন ।
তবে ইখনকার ছেল্যা-ছকরারা নাই চিনবেক ।
বুঢ়াই গেছি, শ’য়ের উপরে উমরটাও হল্য,
সেই জুহানির জলুস কি আর আছে ?


হামি উপেন গ, উপেন
কবি ঠাকুরের দু’বিঘা জমিনের উপেন ।
ঠাকুর বাবা লিজের কাজ করে চলে গেলেন
হামকে না মারে লটকাঁই রাখ্যে দিলেন
উপেনদের মরণ নাই, জিয়াঁই থাকে ।


সবার লজর ভাল লয়গো
হামি’ত বিঘা দুই জমিন লিয়ে ভালই ছিলি
সম্বছরী ধান, বোশ্যাখে গাছের টসটস্যা আম
ছাগল-ভেঁড়ি-কুঁখড়া লিয়ে কুঁড়্যা ঘরে
কারুর সাতেও নাই, পাঁচেও নাই ।


তা জমিনদারের সইল নাই
বে-ফালতু হামার জমিনটো হড়পে লিল
হামকে বেঘর করে ভবঘুরা সাধু বনাই ছাড়ল্য
ইদিক উদিক ঘুরেও পাসুরত্যে লারলি,
একদিন লিজের গাঁয়েই ফিরলি ।


কি বলব্য আজ্ঞা, একটো আম
পাকা টুসটুস্যা, হামার ছামুটোয় পড়ল্য ।
ভাবলি, মা হামার হামকে ভুলত্যে পারে নাই
ল্যে বাপ, কথাল্যে একটো লক হামকে পাকড়াঁল্য
আবার সেই খুনচুষা জমিনদারের মুহে ।


হামি হাঁসব্য ন কান্দব্য
লিজে জমিন চুরি করে হামকেই বলছ্যে চোর ।
ই আবার কন জমানায় আল্যম রে বাপ !
মার-ট্যার খাঁয়ে, জনম মাটিকে দন্ডবত করে
হামেশার লাগ্যে গাঁ ছাড়লি ।


সাধু মানুষ, কথাই আর যাব
শহুরের বাহারে ফাঁকা টাঁড়ে ঝুপড়ি বনালি ।
ভালই ছিলি, শাগ-পালা, লাউ ডিংলার লতে
অচানক কটা ছেল্যা-ছকরা আস্যে কুঁড়াটাই ভাঙে দিল
বলল্য হঠে যা, বাঁচত্যে হল্যে ।


শুনেছিলি উঠেনে দলান উঠবেক
বাবু বিবিদের ফ্যালেট হবেক, সাঁতরাবার পুল  
বিজলী বাতির আলয় চারধার ঝকমক্যাবেক ।
উ লকগুল্যান নকি “পমুটার” বাবুর পালা গুন্ডা
সেই জমিনদারই আজকের পমুটার ।


জুহানিতে যিটা পারি নাই
আজ বুঢ়ান্তিকালে মনে হয় সিটা পারথ্যম
যদি গায়ে টুকুও তাগদ থাকত্য কাঁড়-বাঁশ লিয়ে
ভুলকাঁই দিথ্যম হুঁই পৈসা আলা “পমুটার”গুল্যার চখ
দু`বিঘা জমিনের কসম ।


কিছু শব্দের অর্থ
লটকাঁই (টাঙিয়ে); জিয়াঁই (জীবিত); লজর (নজর); কুঁখড়া (মোরগ); হড়পে (ঠকিয়ে দখল করা); পাসুরত্যে (ভুলতে); ছামুটোয় (সম্মুখে); মুহে (মুখে); দন্ডবত (প্রণাম); টাঁড়ে (অনুর্বর জমি); ডিংলার (কুমড়োর); ফ্যালেট (ফ্ল্যাট); পমুটার (প্রমোটার); ভুলকাঁই (বিদীর্ণ করা)