কবিতার পটভূমি : অতি সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের পুর্ব মেদিনীপুর জেলায় ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজকের কবিতা । গ্রামের মেধাবী মেয়েটি ছিল সর্বগুনসম্পন্না, একটাই দোষ গায়ের বর্ণ কালো । শৈশব থেকেই বাবা-মায়ের অবজ্ঞা, ভাইবোন পাড়াপ্রতিবেশীদের তাচ্ছিল্যে বেড়ে ওঠা অসম্ভব বিদুষী মেয়েটি আজন্ম এই প্রতিবন্ধকতার সাথে লড়াই করে নিজ যোগ্যতায় শিক্ষকতার মহান পেশায় নিজেকে উৎসর্গ করেছিল । কিন্তু তথাকথিত শিক্ষিত আদর্শ শিক্ষক শিক্ষিকারা তার প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ অব্যাহত রেখেছিলেন । এমনকি তাঁদের সায় পেয়ে ছাত্রছাত্রীরাও যত্রতত্র তাকে অপমান করতে ছাড়তো না । শেষ পর্যন্ত কালো চামড়ার অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে, গায়ে কেরোসিন ঢেলে নিজেকে ভস্ম করতে চাইল মেয়েটি । মহাকুমা হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে শেষ লড়াই করে মেয়েটি পরাজিত হল মাত্র ৩২ বছর বয়সে । একটি প্রতিভার অকালমৃত্যু হল ।
আমার কবিতার মাধ্যমে আমি এই সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছি । চামড়া দিয়ে মানুষ বিচার করার দিন শেষ করে গেছেন মহান বিপ্লবী নেলশন ম্যান্ডেলা । তবু আজও কেন এই ঘৃন্য বৈষম্য আমাদের সমাজে দিনদিন গভীরতর প্রভাব ফেলছে ? আমি কবিতার মাধ্যমে ওই অকালপ্রয়াতা কালো বরণের মেয়েটির স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি । রবীন্দ্রনাথের ভাষায় - কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক ……….. আমি দেখেছি যে তার কালো হরিণ চোখ ।


কালো বরণ কন্যা তুমি
               করলে লড়াই শেষ
পিতা মাতা বন্ধু স্বজন
               বাঁচবে এবার বেশ ।
কালো হয়ে জন্ম নিলে
               তোমার কিবা দোষ ?
নিত্য তবু গঞ্জনা দেয়
              বাবাই বলে মোষ ।
ক্লাশে যত ছাত্র শিক্ষক
              তোমায় দেখে হাসে
প্রতিবছর তারই মাঝে
              প্রথম হতে ক্লাশে ।
একে একে পেরিয়ে এলে
              সব কটি ধাপ
আঁচল ভরে কুড়ালে শুধু
              সবার অভিশাপ ।
শিক্ষিকা হয়ে মহান পেশায়
             করলে নিজেকে যুক্ত
কালো হওয়ার অপবাদ থেকে
              হলেনা তবুও মুক্ত ।
তোমায় দেখে সতীর্থরা সব
              অশ্লীল চোখে তাকায়
আস্কারা পেয়ে ছাত্র ছাত্রী
              ডাকে কুৎসিত ভাষায় ।
এত অপমান এত অনাদর
             পারলেনা আর সইতে
কালো বরণে কেরোসিন ঢেলে
             আগুন দিলে রাতে ।
শেষ লড়াইটা হারতে চাইলে
             মৃত্যুর সাথে লড়ি
পরাজয় হল চারদিন পর
            থামলো জীবন ঘড়ি ।