শিমুল নামের এই ছেলেটি
গায়ের রংটি কালো
তালুকদারি বংশ তাহার
ডাক নাম অনেক ভালো ৷


পদ্মার পারে বসতভিটা
শেগুন কাঠের বাড়ি
অপরাধি ধরলে সেথায়
কয়না কথা ছাড়ি ৷


লোকের মুখে শুনলে কথা
তাহার নামটি আগে
চুর ডাকাত সিটার বাটপার
নামটি শুনে ভাগে ৷


শত সাহসী এই ছেলেটি
পড়া-লেখায় পাকা
বলে সবাই গ্রামটি যেনো
তাহার ছায়ায় ঢাকা ৷


বর্ষা কালে নিশি বেলা
গভির ঘুমের কালে
এক সর্বনাশি ঢল আসিয়া
ভাসিয়ে দেয় জলে ৷


বাবা কোথায় মা কোথায়
কোথায় ছোট ভাই?
কে দেবে আজ তীরের বুকে
একটু খানি ঠাই?


খাট পালং যায় ভাসিয়ে
ভেসে গেল গেল বাড়ি
চাল ডাল থালা বাসন
রান্নার শুকনো খরি ৷


গায়ের পাশে খেয়া ঘাট
বীলিন হয়ে গেল
সর্বনাশি ঝড় আসিয়া
সব কারিয়া নিল ৷


খালি হাতে ফিরে গেল
অচিন পুরের গায়
বাবার ভিটা ভেসে গেল
ফিরে ফিরে চায় ৷


সেথায় গিয়ে জুটল হাতে
রাখালিয়ার কাজ
কোথায় গেল তালুকদারি
নব রংগ সাজ?


মাদুর পেতে ঘুমায় শিমুল
ভাসায় চোখের জলে
কত বেলা উপুশ করে
রজনী কাটে জেগে ৷


এক দিন এক বিকেল বেলা
গাঁয়ের হাটে গিয়ে
কিনে নিল বাশেঁর বাশি
বাতাসার দাম দিয়ে ৷


মাঠের পানে গরু চড়ায়
দুঃখ নিয়ে বুকে
কদম তলায় বসে শিমুল
বাশেঁর বাশি ফুঁকে ৷


বাতাসেতে সুরের ঝংকার
বাজে বারে বারে
বেসে গেল সুরের রাশি
নবাব বাড়ির ঘরে ৷


পারুল নামের এই মেয়েটি
মাঠের পানে হায়
হাতের কার্জ ফেলে দিয়ে
বারে বারে চায় ৷


এক দিন এক বিকেল বেলা
সবাই গেল হাটে
সুর শুনিয়া চলল পারুল
রাখালিয়ার মাঠে ৷


কাধে তাহার পুতির চাদর
গায়ে সাদা শাড়ি
সবুজ মাঠে আকাশ থেকে
নামল যেন পরি ৷


কদম তলায় বসে পারুল
কথা নাহি কয়
রাখালিয়ার বাশির সুরে
চুপ করিয়া রয় ৷


বহু দিনের পর এক
দুপুর বেলা এসে
হাসি মুখে বসল পারুল
রাখালিয়ার পাশে ৷


মুখের পানে চেয়ে শিমুল
চুপ করিয়া বসে
পারুল তাহার মনের কথা
বলল হেসে হেসে ৷


সব শুনিয়া শিমুল আবার
বাশি মারে টান
উদাশ কন্ঠে গেয়ে শুনায়
পদ্মা পারের গান ৷


অচিন পুরে গিয়ে শিমুল
ডোরে ডোরে হাকে
বিয়ের কথা বলতে গিয়ে
ময়-মুরব্বি ডাকে ৷


বৈঠক খানায় বসলো এবার
দুই গ্রামের লোক
বিয়ের কথা শুনে তাহার
চমকে উঠে চোখ ৷


পান তামাক খেয়ে তারা
বিয়ের কথা বলে
আষার মাসের বার তারিখ
দিন ধার্য্য করে ৷


শত অপেক্ষার পরে আজ
বিয়ের সানাই বাজে
তাই বুঝি আজ শিমুল-পারুল
নব রংঙ্গে সাজে ৷


আষার মাসের বাদলা দিনে
ঝড় তুফানের পর
অবশেষে দুজন মিলে
বাধলো সুখের ঘর ৷


তালুকদারি জন্ম মাঠি
দেখবার মনে চায়
পারুল তাহার সঙ্গে চলে
পন্মা পারের গায় ৷


ঠায় দাড়িয়ে দেখে দুজন
হারিয়ে যাওয়া বাড়ি
অচিন পুরে চলল শিমুল
বাবার ভিটা ছাড়ি ৷