শোক-তপ্ত চঞ্চল-মৃগ’ মরুভূ-প্রান্তরে;
কাব্যের মাঝে হেরিনু তোমায়—দুঃখিনীর অন্তরে।
অত্যাচারীর গিরী-দরিতে’ বন্ধু তুমি গো আসি,
“ফণি মনসা’র” রূপ ধরিয়া—বাঁজালে “বিষের বাঁশী”।
“অগ্নি-বীণা’র” বাদক তুমি—“সর্ব্বহারা’র” গীতি;
তখ্তের শাসক শাসিছ কলমে’—ভুলি নাই—তব স্মৃতি।
“প্রলয়-শিখা’য়” পুড়ায়ে বন্ধু’ অত্যাচারীর শাসন,
মানব-হৃদয়ে করিছ’ রাজত্ব, জিনিয়া হিয়ার আসন।
“গীতি-কাব্যে’র” “সম্রাট” তুমি, কাব্য “বাদশা-জাদী”,
সাম্যের গান গাহিয়াছ কবি—ওগো ও “সাম্যবাদী”!
অধরা-নারীর ভালোবাসা তুমি—তাহারই প্রেমের “রাখী”।
নারীর প্রেমের শাড়ীর আঁচলে—সাঁজিছ “চক্রবাকী”।
“লায়লী-মজনু’র” মজনুন তুমি, তোমার কাব্যে “লায়লী”—
জ্বালিছে হিয়ার মন্দির মাঝে’ প্রেম-রাঙা “দেয়ালী”।
প্রেমের আবেগে যখনি বক্ষ’ হইল কাঁপা-কাঁপা।
তখনি পরালে প্রেয়সীর বুকে, প্রেমের “দোলন-চাঁপা”।
মমতাজ প্রেমে শা’জাহান করিল’ মমতার “তাজমহল”!
তোমার প্রেমেরে প্রণাম করিছে’ “সিন্ধু’র হিন্দোল”!
মানসী-প্রিয়ার ললাটে এঁকেছ প্রেমের “চন্দ্রবিন্দু”;
তোমার প্রেমের জল-হিন্দোলে’ সৃজিয়াছ প্রেম-সিন্ধু।
প্রেমের জোসনা বিলাতে আসিয়া’ ওগো ও “নতুন চাঁদ”!
“কুহেলিকা”-ময় ব্যাথায় তোমার’—মনে রচিল বাঁধ।
তবু—সে বাঁধন ছিন্ন করিয়া’ ওগো ও “বাঁধন হারা”!
“ছায়ানট”-রাগে ভেঙে দিলে ঘুম’—ওগো তুমি “শুকতারা”…
চপলার তুমি “চোখের-চাতক”—ওগো ও “প্রেম-সাকী”!
“চক্রবাক”-এর মতন খুঁজিছ,—কোথায় “চক্রবাকী”!
ওগো ও “সুর-সাকী”!
“গানের-মালা’তে” গাঁথিয়া দিয়াছ’—অধরার প্রেম-রাখী।
বাঁজে “জুলফিকার”—“সুর-সরোবরে”—ফোঁটে “গীতি-শতদল”;
“নির্ঝর”-স্রোতে ফুঁটিলে কেমনে’ ওগো ও “নীলোৎপল”!
“গুল-বাগীচা’র” “বুলবুল” তুমি’—গেয়ে গেয়ে “বন-গীতি”,
ধুলির-ধরা’তে রচনা করিলে’ “গন্ধর্ব্বলোকের স্মৃতি”।
—বন্ধু “চক্রবাক”!
“সন্ধ্যা’য়” তোমারে পেয়েও পাইনা’—হয়ে যাই নির্বাক।
“মৃত্যুক্ষুধা’র” ক্ষুধাতুর মাঝে,
পেয়েছি তোমায়—“মুক্তি’র” সাঁঝে,
অত্যাচারীর তখ্ত টুটিতে’ গাহিলে “ভাঙার গান”।
“পূবের হাওয়া’য়” আসিলে গো’—নিতে “মুক্তির সন্ধান”…
“রিক্তের-বেদন”-এ দোসর হয়েছ’ রিক্তার হয়ে সাথী;
ব্যাথিতের শোকে কাঁদিছ তুমি’—হইয়া “সম-ব্যাথী”।
…স্মরিণু তোমারে, সুপ্ত জড়’রে উঠালে জাগানী “ঝড়”;
“শেষ সওগাত”-এ ফুঁটিয়া কমল, ধরাপর’ ভরো-ভর্।
তোমারে স্মরি, “তসলিম” করি’—ওগো “কাজী নজরুল”!
কবিস্তানের “সম্রাট” তুমি—“গীত মালঞ্চ’র” “বুল্-বুল্”।
তুমি আজও আছো—মানব হৃদয়ে, ঢাকিয়াছে প্রেম’—চাঁদোয়া।
বাঁশের মূরলী লুকায়ে রেখেছ, কুন্তলে জ’ড়ি “মহুয়া”।
মহুয়ার বনে বাঁজে আজও বাঁজে' সে বংশী-নিরুপমা।
অজানা কিসের বিরহে গাহি গো’—তোমারই “চিত্তনামা”!


০৫.০৬.২০০৮
পাইকপাড়া