১.
যেদিন আজ, আমার সত্য বোঝার দিন।
বলতেই চাই তোমাদের, আমার এ কঠোর প্রতিজ্ঞা:
জীবন আমার চার নারীতেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাই।
যে নারীদের জন্য অসংখ্য মৃত্যুর দিনে জন্মেছি
আমি কারো  বুকে সন্তান হয়ে।
অবধারিত কান্নার জলে চিকচিক
সূর্য-কণার মত হেসে উঠেছি আমি শান্তনার স্বরে।
ডুবন্ত সূর্যের ঘুর্ণনে ভেসে উঠেছি শ্যাওলা পাতার মত।
যেসব নারীর জন্য হেসেছি আমি,
কমলের ঘায়ে সুখ ফোটার জন্য।
আবেগ এ অসীম প্রাণোন্মাদনায় আজ
সত্যকে অস্বীকার করতে চাই।
মা, মেয়ে, বোন আর আমার সতী-স্ত্রী ছাড়া,
কোন মেয়েলোকের জন্য করিনি আমি কিছুই।
তোমরা যে যে অকৃতজ্ঞ হয়েছ আমার গৃহে,
শুনে রাখো: প্রচন্ড রৌদ্রের দিনে
আমার চোখের পাপড়িতেই ছায়া খুঁজে মরবে সবাই!
আমি রঙয়ের আকর নই,
আকীর্ণ করিনি আমার খেয়ালে কারো পথ!
তোমরা যে যার মত সময় খুঁজেছ আমার আঙ্গুলে...
আজ কারো কাছে আমার নেই কোন হিসেব।
বিনা হিসাবেই তোমরা ছেড়ে যাও আমায়।
বলছি আমি: আর কোনো হিসাবের বালাই নেই!
আজ থেকে আমি এ এক অন্য অস্তিত্ব!
আমি ভুলে গিয়েছি নিজের সুখ;
আমি পাহাড় গড়তে চাই!


২.
আমি এক ঈর্ষাকাতর সূর্য,
যে নিজের সুখ সইতে পারেনা;
আপ্লুত নয় নিজের সলোকে,
সে রাতের ছায়া মাড়াতে
চাঁদের সাথে বসে’ মুখোমুখি,
আমারই সুখের আলোকচ্ছটায়
সুন্দরী হয় রাত,
অপ্রতিভ আলোকবর্ষ যৌবণপূর্ণ হয়
আমারই শরীরে; আমি চাঁদের সুখ,
রাত্রির বন্দনা, যৌবণের রমণগীত।
সে কথাই তো তোমরা বলতে চেয়েছ,
বলোনি কোন দিন,
হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে
এ তোমাদের কুট-নিগুঢ় অভিলাষ।
তোমরা জেনে বুঝেই সুখী হয়েছ আমাতে,
আমি যে নিরুত্তাপ হয়ে যাবো,
আমি নশ্বর,
সে খেয়াল কি ছিলনা কারো?
তোমরা বলোনি তাও,
নিজেরা ফুরিয়েছ; নিংড়েছ আমাকে।
আমি সুধু আজ নির্বাসন চাই
তোমাদের কামনা থেকে;
জ্বলতে চাই নিজের সুখের ঈর্ষায়!


৩.
আমি সেই এক অহঙ্কারী আগুনের দলা,
যা নিজেকেই পুড়িয়ে পুড়িয়ে তপ্ত হয়;
দহণ করে নিজেকেই কুন্ডুলী পাকানো রং,
বুকের বাম প্রকোষ্ঠকে দিনকে দিন
করে ফেলছে অকেজো।
যার প্রজ্জ্বলিত অহংকারের বাহির দেখতে পায়না কেউ,
আমি চুড়ো হয়ে আরেক চুড়ো দেখতে চাই।
জানি, এক পাহাড়ের শীর্ষ থেকে
আরেক পাহাড়ের দূরত্ব কমে যায় উচ্চতায়।
আমার কুন্ডুলী পাকানো আগুন পাহাড়সম হতে চায়!
দেখতে চাই আগে যারা পাহাড় গড়েছিল,
কি আছে তার শৃঙ্গে।


তোমরা আমার গায়ে আতরের ঘ্রাণ ঘসে লাভ নেই,
আমি তোমাদের হবোনা কখনো;
যে যে রকম বলতে ভালো লাগাও আমায়,
আমি আমার জীবনেই পড়ে আছি।
তোমরা আমাতে সুখী বলেই আমি অহংকারী,
তোমাদের চাইনা আমি, এটাই অহংকার!
যে আমার আঙ্গুলে গুঁজেছিলে হাত,
যে রেখেছিলে আমার বুকে মাথা,
যে চুম্বনের উগ্র আবেগে ছুঁয়েছিলে আমার গাল;
আমি তো শিশু ছিলাম;
অহংকারী হতে শিখেছি অনেক পরে,
যখন তোমাদের চিনলাম:
সবাইই সময়ের খবর নিতে আসো,
আমি তোমাদের চোখের চাঁদ,
হাতের পদ্ম ডাটা, হৃদয়ের বসন্ত;
ফাল্গুনের আগুন কেউ আমার চোখে পাওনি ব’লে,
জান্তব দেহসিদ্ধি আমার দিয়ে হয়নি ব’লে,
তবুও নিতান্ত সততার তকমা দিয়ে,
আবারও অবিশ্বাসী হয়েছ আমার আড়ালে;
তোমরা তো ঠিক ওটাই চাও:
যা জন্তুতে পরিণত করে সময়ে পুরুষকে,
আর নারীকে করে কোলের সঙ্গীনি।
আমি চাইনি আমার কৌমার্য হারাতে,
তোমরা অসতী হয়েই স্বাচ্ছন্দে থাকো বেশ!
আমি অহংকারী, আর তোমরা সময়ের ফোকর খোঁজ।


তোমাদের সময় নিয়ে চলে যাবো আমি,
মুচলেকা দিতে রাজি হবেনা কেউ।
আমারও পাহাড়ের চুড়ো হওয়ার সাধ!
যে পাহাড় মানবেনা শতকের বেড়া,
যার শিখর দেখে আমার মতই
ঈর্ষায় কাতর হবে
আরও কয়েক জন্মের  শিল্পী-অনুরাগীরা।


২৭.১.১৬