নারী
আলী আমজাদ আল আজাদ
_____________//
নারী তুমি 
পদ্মকলি রজনী-গন্ধা নাকি ফুটন্ত গোলাপ 
তুমি শুধু প্ররাণের পিপাসা মিটানো প্রেমের মিষ্টি আলাপ 
বকুলের মালা বেলীর সৌরভ কৃষ্ণ চূড়ার লাল 
সূর্যমুখীর চেয়ে থাকা, শিল্পীর ছবি আঁকা, স্বপ্নের মহাকাল। 


নারী তুমি 
আমোদ আসরে, মিলন বাসরে, পূজারীর প্রতিমা 
দিবা-নিশি ঘিরে হৃদয় মন্দিরে, নিত্য নব শান্তির পরিসীমা 
কালের গর্ভে থেমে থাকা জীবনে তোল সুরের ঝংকার 
হৃদয়াকাশে সুখে তারা হয়ে বাড়াও সুখের হাহাকার। 


নারী তুমি 
মৌচাকের মধু, প্রেমের যাদু,অসম আশার সমীকরন 
সহস্র-কোটি জনতার মঞ্চে তুমি পুষ্প শোভিত মাল্য বরণ 
তুমি অনন্যা, তুমি পাহাড়ী ঝর্না, তুমি সমুদ্রের কল্লোল ধ্বনি 
হৃদয় ভুবনে বয়ে চলো গোপনে যেন তুমি অন্তহীন প্রবাহিনী। 


নারী তুমি 
প্রকৃতির সবুজ বৃক্ষরাজির মিলন মেলার শ্যামলিমা ছায়াছবি 
স্বাধীনতার আকাশে উদীয়মান এক রক্তিম লাল রবি 
তুমি জয়ন্তীর জয়, তুমি চির অক্ষয়, তুমি বাংলার স্বাধীনতা 
তুমি নও উদ্বাস্তু, তুমি লেখকের বিষয়-বস্তু তুমি প্রেমময়ী কবির কবিতার খাতা। 


নারী তুমি 
আমার হৃদপিন্ডের একটি মহাখন্ড 
তুমিহীনা এই জীবন যেন মহাপ্রলয়ের লন্ড-ভন্ড 
তুমি লজ্জাবতীর লাজ, ফুলশয্যার সাজ, তুমি ধ্রুবতারার আলো 
কোটি নক্ষত্রের মাঝে তুমিই শুধু আমার হৃদয়ে সুখের প্রদীপ জ্বালো। 


নারী তুমি 
স্বয়ংবরা, প্রেমের জোড়া, সুখের চাবি-কাঠি 
হ্নদয় মহলে বুকের অতলে শান্তির শীতল পাটি 
তুমি গ্রাম বাংলা বধুর নকশী কাঁথার মাঠ 
সুখ তারার দিশা তুমি, অনাবিল স্বপ্নের সাধ। 


নারী তুমি 
অন্ধের দৃষ্টি, বোবার ভাষা, বোধির শোনার অভিলাষ 
প্রানের আকুতি, মনের মিনতী, সৃষ্টির মহা ইতিহাস 
তুমি বেহুলার ভেলা,আনন্দ মেলা, তুমি স্বর্গের অপ্সরী 
প্রিয়সী আমি, পিপাসার্থ মন, তোমার প্রতীক্ষায় মরি। 


নারী তুমি 
অবনীর বুকে যেন একটি গোলাপ ফুল 
মোহনীয় সৌরভে মন মুগ্ধতায় আকুল 
সমস্ত রূপের শ্রেষ্ঠ বাহার, নেই কোন ভূল 
সত্যিই তুমি সদ্য ফোঁটা একটি গোলাপ ফুল। 


নারী তোমার 
ভুবন মোহিনী হাসিতে যেন মেঘেরাও থমকে তাকায় 
হীরা-মুক্তা ঝরে পরে প্রতিটি হাসির কনায় 
তোমার অভিসার অলৌকিত সিগ্ধতায় এই হৃদয় ছোঁয়ে যায় 
অসহায় চিত্ত আমার স্বপ্নীন সন্ধানে বার বার তোমাতে হারায়। 


নারী তুমি 
নদী মাতৃক বাংলার পদ্মার মোহনা 
তোমাতেই প্ররিলক্ষীত হয় স্বর্গ সুখের সূচনা 
তুমি কক্স বাজারের সমুদ্র সৈকত, তুমি সুন্দরবনের মায়াবী হরিণী
কোহিনূর হীরার রূপ ভান্ডার তুমি, তুমি অনন্ত মায়ার অন্তহীন খনি। 


নারী তুমি 
শত ব্যস্ত তার মাঝে খানিক বিশ্রাম 
বান্নান তাসের খেলায় তুমি, টেক্কা-কুড়ির-ট্রাম 
যে জনমে ছিলেনা তুমি,সেতো জীবন নয় মরনেরই একাংশ- 
তুমি মানব সৃষ্টির লগ্নে,আছো; তুমি সংযোজনে! তুমি থাকবে হয়ে অধাংশ। 


নারী তুমি 
তুমি মজনুনের পাগলামী, মাথিনের অপেক্ষা, দেবের হাতে মদের বোতল, 
ফারহাদের সামনে বিশাল পাহাড়, হৃদয়ে তাহা কাটার কোলাহল 
তুমি শাজাহানের গড়া তাজমহল, চন্ডির হাতে বরশির কাঠি 
তুমি প্রেম নগরীর পরশ পাথর, তুমি কাশ্মীরের সোনা ঝরা মাটি। 


নারী তুমি 
অবনীর মাঝে শ্রেষ্ট অভিরাম মায়া 
তোমাতে খুজে পাই যেন, ফুটন্ত গোলাপের ছায়া, 
প্রেমের মিষ্টি গন্ধে সৌরভিত তুমি 
তোমার রূপের রশ্মিতে, আলোকিত নরের হৃদয় ভুমি। 


নারী তুমি 
মেঘলা গগনে ভেসে উঠা নব পূনিমার চাঁদ 
মৃদু প্রভঞ্জনে এক সোনালী প্রভাত, 
মেদিনীর বুকে, তুমি যে মহা প্রেমের অর্ণব 
নিশ্চয় নরের প্রাণ উতলা করো প্রীতি উৎসব। 


নারী তুমি 
নরের বুকে বয়ে চলা এক চঞ্ছলা নদী 
পাল তোলা সুখের নাঁয়ের মোহনা অবধি, 
সহস্র ক্লান্ত চিত্তে বিলাও শান্তির পরশ 
মায়াবী আঁখির দৃষ্টি রেখায় কতো প্রাণ করেছো যে বশ। 


নারী তুমি 
কাংক্ষিত হৃদয়ের খোরাক, ব্যর্থ হৃদয়ের সফলতা 
স্বপ্ন ভিবোর দিশাহারা জীবনে আনো হর্ষময় প্রফুল্লতা 
ভীতু মনে সাহস যোগাও, দুর্বল মনে বল 
তোমার অনুপ্রেরনায় বলীয়ান হচ্ছে সর্ব নরদল। 


নারী তুমি 
অন্ধকার আচ্ছাদিত ভূবনে ছড়াও উজ্বল আলোক রাশি 
প্রিয়ার আকুলতায়, গভীর নিশিতে বাজানো তুমি বাঁশরীর হাতের বাঁশি, 
তুমি প্রসব বেদনার মৃত্যু যন্ত্রনা শেষে, মায়ের বুকে জড়ানো শিশুর মায়া 
হাশর প্রাঙ্গনে, দ্বাদশ রবির বহ্নি জ্বালায়, তুমি আরশের নিচে শান্তির ছায়া। 


নারী তুমি 
প্রবাসী যুবকের প্রিয়জনের নিকট লিখা প্রেম রোমাঞ্ছিত পত্রের শিরোনাম 
প্রতিমার সম্মুক্ষে শির নত করে আবেগ মোহিত পূজারীর প্রনাম 
তুমি মেশক্‌-আম্বরের সুভাস, তুমি নব বধূর যৌবনা অঙ্গ জুড়ে মোড়ানো লাল বেনারশী 
তুমি রমজান শেষে পশ্চিমাকাশে উদিত ঈদের চাঁদের বাঁকা হাঁসি। 


নারী তুমি 
নিঃসঙ্গ আদমের বিপরীত মুখি সঙ্গী ও শান্তির গতিবেগ 
তুমি লিও-নাদো-দ্যা বিঞ্ছির, দ্বি-খন্ডিত হৃদয়ের অতৃপ্ত আবেগ 
তুমি পিতার আপন হস্তে, পুত্র ইসমাঈলের কোরবানীর উল্লাস 
তুমি যুগ যুগ ধরে, মানবের জীবন তরে স্বর্নাক্ষরে লিখা প্রেমের ইতিহাস। 


নারী তুমি 
শান্ত যুবকের ক্লান্ত নয়নের অশ্রূ সিক্ত দুটি পাতা 
তুমি চঞ্ছল যুবকের তন্দ্রায় ভরা-নিদ্রাহীন অজস্র নিষ্ঠুর রাত। 
তুমি পরাজিত প্রেমিকের ঘুমের ঘরে কবরসম শূর্ণ্য শয্যা 
তুমি ব্যর্থ যুবকের না পাওয়া বেদনায়, বিদ্রোহী চিত্তে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা। 


নারী তুমি 
নব বরের জন্য শ্বশুরালয়ের আপ্যায়নের উৎসব মুখরিত সুবিশাল আয়োজন 
তুমি কাংখিত স্বামীর বুকে, ঝড় তোলা ভালবাসার অভাব পূরণে নিত্য প্রয়োজন 
তুমি ইউছুপ-জুলেখার সূপ্ত হৃদয়ের রহস্যময় গুপ্ত প্রেম-ভালবাসা 
তুমি ভাস্কো-দা গামার নব দ্বীপ সন্ধ্যানে উচ্ছাসিত বিপুল আশা। 


নারী তুমি 
নজরুলের পারুলী, রবির গীতাঞ্জলী, জীবনানন্দের বনলতা সেন 
তুমি থার্টিফাষ্ট নাইটের উল্লাস, তুমি চৌদ্দ ফেব্রুয়ারীর যুবক-যুবতীর ফাঁটা-ফাঁটি প্রেম 
তুমি মহাকাশচারীর মহা বিশ্ব ভ্রমন জয়ে নিত্য নব অভিযান 
তুমি যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামীর ফের-স্ব-সন্মানে মুক্তির নিশানা। 


নারী তুমি 
শীতের সকালে অঙ্গজুড়ে প্রাণ জোড়ানো মিষ্টি রোদের খেলা 
তুমি ফাল্গুন মাসে প্রকৃতির বুকে সান্নিধ্যময় বসন্তের মেলা 
তুমি চৈত্রের প্রাণ হারা মাটিতে, প্রাণ ফিরানো বর্ষার জল 
তুমি টর্ণেডোর ক্ষতিগ্রস্ত চাষীর মাঠ ভরা ফসল, তার বধূর শুকনো ঠোঁটের কোণে হাঁসি ঝলমল। 


নারী তুমি 
মহাগ্রন্থ প্রবিত্র আল-কোরানের লিপিবব্ধ সুরায়ে-নূর 
তুমি ঐতিহাসিক রমনী রহিমার রূগ্ন স্বামীর সেবায় নিয়োজিত স্নেহ মধুর 
তুমি মরিয়মের সত্বীত্ব, রাবেয়া বসরীর ত্যাগ তিতিক্ষাময় প্রভুর সনে প্রেম-প্রীতি 
মাদার তেঁরেসার মহত্ব তুমি, তুমি প্রিন্সের ডায়নার সুনাম খ্যাতি।


নারী তোমার 
রূপের নেশাতে মাতাল কতো বরেণ্য বীর 
তোমার বিরহে মহাপ্রয়ান কেহ, কারো লোচনে নীর 
কেউ হচ্ছে দেশ ত্যাগী, কারো জ্বলছে হৃদয় 
তবুও তো সাঁজাও তুমি স্বর্গ সুখের নিলয়। 


নারী তোমার 
আকুল মায়া লুকিয়ে আছে মোর হৃদয় তলে 
নারী তোমার মধু প্রেমেতে আমার রক্ত জ্বলে, 
জানিনা, কিসের দহনে, কিসের বিরহে জ্বলে পুড়ে হই ছাই 
স্বপ্নের রঙ্গে সাঁজিয়েছি বাসর, তুমি যে হেথায় নাই। 


নারী তোমার 
আগুন লাগা যৌবন উৎসবে হোকনা আমার অবগাহন 
বল, তুমি বিহনে এই যৌবন জলতরঙ্গ, রুখিবে কোন জন, 
তৃষ্ণা মিটাতে নয়, তৃপ্তি পেতেই শুধু, তোমাকে কাছে পাওয়া 
জানি হাজার জনমেও হবে না পূরণ, এই কাংখিত চাওয়া। 


নারী তুমিহীনা, 
জগৎ সংসারে নর যে বড় অসহায় 
জন্মের লগ্নে থেকে বেঁচে আছি তোমারী করূনায় 
“জননী হইয়া গড়েছো জীবন, রমনী হইয়া সাঁজাও 
দৃষ্টি চরাচরে, হৃদয় অগোচরে, জানিনা তুমি যে কি চাও”।


রচনাকালঃ ২৭/১১/২০২০ইং