(প্রায় ৩০-৩২ বছর আগে লেখা আমার একটি কবিতা।)


ইচ্ছা ছিল রোজ নামচা লেখার
কিন্তু লেখার মত ঘটে না কিছু আমার।
যা ঘটে তা লেখার মত না
আবার ওসব লেখার মত সময় জোটে না।
প্রথম দিকে বুকের ভিতর সখের জোয়ার উঠত
তর তরিয়ে লিখে যেত কলম
সেই সব পুরোনো দিনের একটা লেখা তুলে দিলাম।
সকাল তখনো হয়নি, চারিদিকে কালো আঁধার
পাখিগুলো বোধ হয় ক্ষিদেয় চেল্লাচ্ছিল
ওরা বড় সুখের ঘুম কেঁড়ে নিয়েছিল.......
এমন সময় বঊয়ের বুকের ছেলেটা
ককিয়ে কেঁদে উঠল
জিজ্ঞাসা করে জানলাম—
বুকের দুধ শুকিয়ে গেছে—দুধের কৌটোও আনা হয়নি।
চোখ বোজার চেষ্টা করলাম
এলনা ঘুম
এল বৌয়ের ডাক—তাড়াতাড়ি বাজার করে এসো
আর- টাকা ধার করেছিলে, মনে আছে
টাকা চাইতে দাঁড়িয়ে আছে বদ্যি পাড়ার মেসো।
এমন কথা কেউ কোনদিন রোজ নামচায় লেখে
তবু সখ জাগে সেলিব্রিটিদের লিখতে দেখে—
সেদিনের রোজ নামচা লেখা
এখনো রয়েছে বাকি
আগে সেটাই করি শেষ।
বাজার থেকে ফিরে এসে বলি
“ও বউ, সিগগির দাও তো চা,
অনেক বেলা হল, কাজে যেতে হবে
তুমি কি কিচ্ছু বোঝ না”।
বউ বলল—“আজ কাজ থাক
তোমার শরীর এখনো সেরে ওঠেনি
দুটো দিন ঘরে বসে নাও বিশ্রাম”।
হেসে বলি—“মৃত্যুর আগে এ দেহে সবে না আরাম”।
বিকেলে কাজ থেকে ফিরে খাওয়া শেষে
দাওয়ায় সপ পেতে একটু জিড়োব ভেবেছি
এমন সময় বউ কাছে এসে বলল
“ওগো, কেরোসিনের পাত্তর এক্কেবারে খালি
রাতের হিংস্র অন্ধকার বড় ভয় করে”।
বিশাল লাইনের পিছনে গিয়ে দাড়ালাম
দেখলাম বড় দাদাদের লাইন দিতে হয় না
ওনাদের লাইনে দাঁড়ানো অসম্মানকর ব্যাপার
আর আমরা, অর্থাৎ বুড়ির বাবা, পচার মা
লাইনে দাড়িয়েও তেল পেলাম না।
সন্ধ্যায় খবর পেলাম
তেলের দোকানের সদর দরজা বন্ধ করে
পিছনের দরজা দিয়ে কানাগলিতে
অনেক তেল পাচার হয়েছে
যা এখানে ১ টাকা ৯৫ পয়সা
তা ওখানে চার টাকা লিটার।
আমার সাধ্যে কুলোল না
একটা মোমবাতি কিনে ফিরলাম বাড়ি
তার পর আর ঘটেনি তেমন কিছু
রোজ নামচা শেষ করছি
শীতের রাতে কড়কড়ে ভাত খেয়ে
ছেঁড়া লেপের তলায় শুয়ে পড়ছি তাড়াতাড়ি।