একটি ঘর ছিল;
চকচকে তকতকে,
সোনালী কার্পেটে মুড়ানো মেঝে,
ঝলমলে ঝাড়বাতি।
কাঁচের দেয়ালে রেশমের পর্দার আভরণ।
তুষার শুভ্র ছাদ।
গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো চাঁদর -
ধবধবে সাদা।
কারুকাজ খচীত
দুলখাওয়া পালঙ্ক,
দখিনা হাওয়ায়, আর...  
বয়ে চলা নদীর কলকল ধ্বনি।
রাজহাঁস পানিতে ঠোঁট গুঁজে
ভেসে বেড়াত সেথায়।


ঝুলানো বারান্দায়,
রুপালী রোদেলা দুপুর,
কিম্বা,
আলো ঝলমলে বিকেল,
অথবা সেথায়...
জোনাকির আনাগোনা পূর্ণিমা -
স্নান করিয়ে যায় অবিরাম।


শেফালী-বকুল-জুঁই-কামিনী ছড়িয়ে থাকা...
তার সেই পথে,
শিশির ভেজানো পায়ে,
আলতো করে পরশ বুলাবে বলে -
পথ চেয়ে থাকে।


রঙ্গিন ঠোঁটের টিয়ে,
কামরাঙ্গা শাখে প্রতীক্ষায়, আর-
নাম না জানা সুরেলা পাখীগুলো
গেয়ে চলে...বিরামহীন...


তুমি আসবে বলে;
আজও অনড় সে ঘরখানি,
দুই যুগ ধরে,
শীর্ণকায়, মলিন স্যাঁতসেঁতে।
মরিচা ধরা তালা, ঝুলানু।
অনাদরে আর্তনাদ করে,
... খয়ে খয়ে যায় যেন।


নেই সে কলতান,
শুকিয়েছে নদী,
বারান্দার পাশ থেকে ভেঙ্গেগেছে খানিকটা,
পাখীগুলো ভুলে গেছে কলরব,
চাঁদ-সূর্য-তারা সবাই জেগে উঠে,
উপহাস করে, আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
আজ সবই যেন ক্লান্ত,
প্রাণহীন ধূধূ মরুভূমি, তপ্ত।


ঘরখানি তেমনি আছে,
যেমন তুমি রেখে গিয়েছিলে,
পাশে আরেকটি ঘর উঠেছে, নুতন,
কোলাহল যেন চুটিয়ে নিয়ে যেতে চায়।
স্থবির ঘরের কপাটে কষাঘাত করে।


মনে পড়ে সেই
কুল গাছটির কথা ?
তুমি পেড়ে দিতে,
আর, আমি আয়েস করে খেতাম।
সেই স্বাদ আজও
আমায় জাগিয়ে তোলে।


তুমি নেই বলে,
মাকড়শা জাল বুনে এখানে ওখানে,
সারাবেলা সারা ঘরে, নির্লিপ্ত,
চেয়ে থাকে ঐ দূরে...অলস ভরে।


তুমি হয়তো ভুলেগেছ ঘরটির কথা,
অজান্তে হারিয়েছ ঠিকানাখানি...।
সে ঘর তোমায় আজও ভুলেনি কিন্তু...
তাইতো সে উন্মুখ,
ব্যকুলচিত্তে,
তোমার পদচারনা আশা করে অহর্নিশ।
অন্যকারো অনধিকার প্রবেশ হতে আজও সুরক্ষিত।