সামনে স্রাঙ্গণ, পেছনে চাঙ্গি
সাথে জীবনের স্রোত,
বিধবা দুপুরের অদেখা শহর
চারদিক ছিমছাম, পরিপাটি মিনিমার্ট
গাড়ির হর্ণ, কোলাহল শব্দহীন।


আমি তলিয়ে যাচ্ছি, অকস্মাৎ
মনে হচ্ছে এটি আমার দেশ নয়,
চোখে মাতুয়াইল শিশু ও মাতৃসদন
সামনে খলিল মিয়ার চায়ের দোকান,
বাম পাশে টুলে বসা আতর আলী
বসবাস ফ্লাইওভারের নীচে,
ডান হাতে ভিক্ষার ছোট থালা
তাতে দুই টাকার একটি নোট, তিনটি এক টাকার কয়েন।


সারা দিনে কত রোজগার?
কোনদিন দেরশ বা একশ আশি
তিন বেলা খেতে প্রায় একশ
বাকি কটা টাকা মজিবরের দোকানে জমা থাকতো আগে
এখন থাকে না,
কারণ গত মাসে আঠারশ থেকে
মেরে দিয়েছে ছয়শ পঞ্চাশ,
-তুমি আগে নিয়ে গেছো আতর আলী
বলেছে মজিবর,
আতর আলীর জীবনের হিসেবের মতো
আঠারশ টাকার হিসেব আর মিলে না।


বড় ছেলে খেতে পরতে দেবে বলেছিল
বউ মেরে তাড়িয়ে দিয়েছে বাড়ি থেকে,
বাড়ি মাওয়া ঘাটের একটু পরেই
বুড়ির মাথায় একটু ছিট,
কোথায় চলে গেছে ছেলের বউয়ের ঝাটা খেয়ে
বছর চারেক আগে
আজো জানেনা আতর আলী।


ছোট ছেলেটি চোর-বাটপার
বিয়ে করেছে তিন চারটি
বউ নেই একটিও।
স্টেশনে একটি গাড়ি
যাত্রি নামার অপেক্ষায় আতর আলী,
যাত্রি নামে, আতর আলী ফিরে আসে টুলে
দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না বেশীক্ষণ
দোকানে কাস্টমার থাকলে টুলে বসে না,
ছোট থালায় দুই টাকার দুটি নোট, তিনটি এক টাকার কয়েন।


-খলিল মিয়া বালা লোক
আতর আলী রাবার পেচিয়ে পুটলি করে টাকা জমা দেয়
খলিল মিয়া সেই ভাবেই টাকা রেখে দেয়,
মাঝে মধ্যে চা বনরুটি খেতে দেয়
কখনো টাকা নেয় না,
চলতি মাসে সতের দিনের পুটলিগুলো
গুনে হয়েছে এগারশ তিরিশ,
আমি তলিয়ে যাচ্ছি অতলান্তে
চাঙ্গি নেই, জুরং গেটওয়ে নেই কিংবা হার্ভার ফ্রন্ট,
সামনে দাঁড়িয়ে সাতাত্তর বছরের আতর আলী
থালায় দুই টাকার দুটি নোট, পাঁচ টাকার একটি, চারটি এক টাকার কয়েন।