হরিদাস, তুই এই চিঠিতে যা লিখেছিলি-
অনেক বছর যাবত প্রভুর কোন কার্যক্রম নেই পৃথিবীতে!
শুধু তোমাদের বিজ্ঞান ও আকাশছোয়া জ্ঞানী মগজের বিজ্ঞাপন
সাথে সীলমোহরকৃত কৌতূহলী রহস্যময় গোপনীয়তা
নিখরচায় ভোগ করছে পৃথিবীর মানবগোষ্ঠী।
তোমাদের দাম্ভিক ও মিথ্যার নিবন্ধিত বুদ্ধিঘরে প্রভুর অবস্থান
কখনোই ছিলো না, বা থাকলেও প্রগতির ধ্বজারা
ঔদ্ধত্য অহমিকায় লাজুক।
জ্ঞানের হালকা উপলক্ষ কিংবা ছিটেফোঁটাও প্রভু প্রদত্ত নয়,
বরং জ্ঞানের উৎস কেন,
সৃষ্টির একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও মালিকানা তোমাদের,
এটিই তোমরা বোঝাতে চাইলে সভ্যতাকে;
আর, অদৃশ্য প্রভুর স্থানটি দখল করে নিলে তোমরা দৃশ্যমান প্রভুরা।


প্রথমেতো করোনা’র চিবুকে হাত দিলে; ঠোঁট, উরু, বুক
এমনকি গুপ্ত জায়গায় পর্যন্ত স্পর্শ করে দেখলে,
তাকে দিয়ে কি কি বানর নাচ দেখানো যায়, কি কি ফায়দা উসুল করা যায়,
পৃথিবীর কোন কোন উপত্যকাকে নিঃস্ব করে সম্পদ কব্জা করা যায়, ইত্যাদি।
কিন্তু ঠিক তখনই শুরু হলো স্রষ্টার প্রহার,
স্বর্গীয় বধির ক্রোধ জানান দিলো প্রভুর উপস্থিতি,
মতলববাজির ঘোরে থাকা সংক্ষেপ, কিংবা কখনো অশ্বগতিতে
তোমাদের দুর্দশা ও অসহায়ত্বের পালক অবলীলায় প্রভুর দরবারে বিছিয়ে দিলে।
তোমাদের দানাদার ও পুষ্টিকর চিন্তার ভেতর,
নিজের অসহায়ত্ব ও অক্ষমতা ঢাকার ঔদ্ধত্য অহমিকায়
নিজের দোষ স্রষ্টার ঘাড়ে চাপানোর অক্ষম প্রয়াস চালিয়ে গেলে।


সভ্যতার ইতিহাসে তোমাদের লজ্জা
ঝুঁকির মুখে পড়ে গিয়ে চারদিকে প্রভুর মহিমা উদ্ভাসিত;
তোমাদের পাকানো মিথ্যা দিয়ে ঢাকা সত্যের পলেস্তারা
আস্তে আস্তে খসে পড়তে শুরু করলো; আর পূর্বপুরুষের দুর্বল
পুরাতন বাসস্থানের ন্যায় হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়লো গাফেল সভ্যতার দেয়াল।
এই যে দেশে দেশে, লক্ষ লক্ষ মৃত্যু এবং লাশ,
তার ভেতর দিয়েই আবার সৃষ্টি হয়েছে নতুন পৃথিবী,
পৃথিবীর বাতাস স্বস্তির মিষ্টি নিঃশ্বাস নেয়া শুরু করলো।
তোমরা যে প্রভুর অমূল্য নেয়ামতকে অস্বীকার করে
সভ্যতাকে নোংড়া ও ময়লা করে ফেলেছিলে,
সেই ক্রোধেই প্রভু তোমাদের মুখ থেকে অক্ষমের বাণী বের করে আনলেন-
“পৃথিবীতে বাঁচার এবং টিকে থাকার কোন অনুসঙ্গ নেই,
যিনি উপরে বসে আছেন, তার কাছে তোমরা আশ্রয় প্রার্থনা করো।”
-----------------------------------------------------------------


[প্রেক্ষাপট : পৃথিবীতে সভ্যতার দাবিদার ধ্বজাবাহিরা মনে করতে শুরু করলো, তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, বুদ্ধি-কৌশল ইত্যাদি দিয়েই পৃথিবীকে তারা সাজিয়েছে। তারা এতোবেশী জ্ঞানী, এখানে শ্রষ্টার আবার ভুমিকা কি? পৃথিবীতে তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও জুলুমের পরাশক্তির চেয়ে শক্তিশালী কে আছে? নিজেদের পুঁজিবাদী ও সামজ্যবাদী সার্থের জন্য, সভ্যতা ও আধুনিকতার নামে নোংড়ামি, জোর-জুলুম করে প্রভুর সৃষ্টি মানুষ ও প্রাণীকুলকে নানাভাবে কষ্ট দেয়। দেশে দেশে বিগ্রহ বাধিয়ে সম্পদ লুট করে নেয়। তাদের আত্মবিশ্বাস দেখে মনে হয়, তারাই যেন প্রভুর জায়গাটি দখল করে রেখেছে। কিন্তু করোনা এসে তাদের ভাতে ছাই মেরে দিয়েছে। শুরুতে করোনা নিয়েও বাণিজ্য করার একটা উদ্দেশ্য পৃথিবীব্যাপী লক্ষ করা গেছে। শেষে করোনায় এতোটাই নাকানি চুবানি খাইয়েছে যে, যে নাস্তিক প্রভুর অস্তিত্বেই বিশ্বাস করেনা, সে পর্যন্ত আকাশে যদি কেউ থেকে থাকে, তাঁর কাছে মানুষকে সাহায্য চাওয়ার জন্য জ্ঞান প্রসব করছে।]
------------------
বি.দ্র. হরিদাসের চিঠি তিন পর্বের পরেই আমি আর আগাতে পারছিলাম না। আমাকে এখানে একরকম টেনে এনেছেন আমাদের সবার প্রিয় গুণী কবি, আমার পরম বন্ধু “মার্শাল কবি” জনাব মার্শাল ইফতেখার আহমেদ। এই আট পর্বের উপাদানটিও আমি ওনার একটি মন্তব্য থেকে নিয়েছি। এই পর্বটি আমি কবি বন্ধুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলাম।