পৃথিবীতে দুই শ্রেণীর জীব আছে, শোষক আর শোষিত
সেটি যেমন মানুষের বেলায় প্রযোজ্য, তেমন বন্যপ্রাণী;
পৃথিবীতে আরেক শ্রেণীর জীব লক্ষ্য করা যায়
তারা কবি।
এই কবি শ্রেণীর জীবের ক্ষেত্রে প্রাণীজ বৈশিষ্টগুলো অনুপস্থিত;
যেমন ক্ষুধা, তৃষ্ণা, অজীর্ণ, অরুচি, স্বর্গ-নরক, জাত-বেজাত, ধর্ম-অধর্ম
এমনটি মুত্যুও তাদের স্পর্শ করেনা!
এই যে হাজার বছরের জরা ও মৃত্যুহীন পথচলা,
তার বিরাম নেই কবিদের।


তবে হ্যাঁ, মার্শাল কবির “প্রগতিশীল যৌগ পৃথিবী’র” ধারণাকে যদি কেউ আঘাত করে,
তখন বিশ্বময় কবিদের শব্দ সন্তানরা দ্রোহে কাঁপতে থাকে;
আবার অত্যাচারী শাসক ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে
যদি ফাঁসিতে ঝুলতে হয়, তখন কবিকে বাঁচিয়ে রেখে
একজন বেঞ্জামিন মোলায়েস ফাঁসিতে ঝুলে পড়ে খুশি মনে।
কিংবা সাম্রাজ্যবাদীর মসনদে লাত্থি মারার অপরাধে
একজন কাজী নজরুল ইসলাম, ঝু ইউফু ঢুকে যায় গারদে,
আবার কালোদের হাতে একটি বাতি ধরিয়ে দিয়ে
দুনিয়া থেকে চলে যায় একজন মায়া এঞ্জেলো, কিন্তু
কবি মৃত্যুহীন নীল অমরত্ব লাভ করে পৃথিবীতে।


একজন কবি তখনই চাঁছাছোলা কবিতা লিখে
যখন দেখে বিশ্ব মানবতা খুবলে খায় অত্যাচারী শাসক,
কবি ক্ষুধার্ত হয় যখন বিনি-রামারা ক্ষুধার্ত থাকে,
কবি আঘাত পায় তখন, যখন কাকাতুয়ার জবানীতে প্রকৃতিকে
বাঁচানোর জন্য বিশ্বময় আর্তনাদ করতে হয়,
কবি বিচলিত হয় তখন, যখন দেখে অত্যাচারের তীব্রতায়
নাগরিকের হাত থেকে খসে পড়ে রক্তাক্ত পতাকা;
কবি নীলাঞ্জনা কিংবা নীলাদের চিত্র আঁকে প্রশান্তির প্রত্যাশায়,
কবি ঝর ঝর বর্ষায় হারানোকে খোঁজে,
প্রকৃতির ক্রোধের শিকার ছোট্ট টুনটুনির আবাস নিয়েও কবিগণ চিন্তিত।
কোন তরুণ কবি নীতিকথা খুঁজে সমাজের ক্ষত সারানোর প্রয়াসে
অথবা কেউ নিজ ধর্মের অসাম্প্রদায়িক দিকটি ছড়াতে চান বিশ্বময়;
দেশে দেশে যখন মজলুমের ওপর নেমে আসে অমানিশা
হিমালয়ের মতো প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায় এই কবি।
যেখানে শিশিরের মতো হিম হয়ে রাতের আঁধার ঝরে পড়ে
সেখানে সূর্যের আলো জ্বালিয়ে উত্তাপ দেয় এই নীল অমরত্বের কবি।
পৃথিবীর চালাক-চতুর মানুষরা, যাদের শুধু অকর্মণ্য বলে গালি দেয়
উপনিবেশবাদের প্রাচীরে লাত্থি মেরে এই কবিই
পৃথিবীটাতে প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করছেন যুগে যুগে।
পৃথিবীর বর্তমান ক্রান্তিকালে এই নীল কবিদের একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে-
পৃথিবীতে কোন ঘটনা এমনি এমনি ঘটেনা, ঘটনা ঘটাতে হয়, তাই ঘটে।