হে আমার প্রাণের স্বদেশ!
তুমি কি আমার বুভুক্ষু হৃদয়ের হু হু আকুতি শুনতে পাও?
তোমায় ছেড়ে, সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে,
দূর পরবাসে আটকে আছি শূন্যতার জালে!
যেখানে অর্থের জৌলুস, চাকচিক্য, মোহময় জীবনের হাতছানি
জীবনকে তাড়া করে বেড়ায় প্রান্তিকের দিকে!
এখানে সীমাহীন প্রশান্তির সবুজ মাঠে
সাদা বক আর প্রজাপতি উড়ে বেড়ায় না,
প্রকৃতির নিবিড় নীল আকাশ ও প্রশান্ত নদীর কুলকুল মুগ্ধ ধ্বনির পরিবর্তে
এখানে আছে যান্ত্রিক জীবনের পানসে স্বাদ!
যেখানে সবুজকে চুমু খায় দিগন্তের নীল,
মন্ত্রমুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয় দিন রাত্রির সঙ্গম,
যেখানে ক্লান্তির একাকীত্ব অবতরণ করে গাছের ছায়ায়,
লাল পোশাক পরে শিমুল গাছ দেখায় আকাশ ছোঁয়ার ধৃষ্টতা,
যেখানে কৌতূহলী পাখিরা আরামদায়ক গাছে বসে সুখে গান গায়,
আমের মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ স্বাগত জানায় বসন্তকে,
ফসলের ক্ষেত মাড়িয়ে যায় নরম বাতাসের স্নিগ্ধ প্রকৃতি;
সোনালী ফসলের মাঠ
পুলকিত সুখে ভরিয়ে দেয় কৃষকের আঙ্গিনা,
যেখানে গোধূলীর কোলে আশ্রয় নেয় কমলা রঙের সূর্য,
দিনের বিরতির পর আকাশের দেহে অঙ্কিত হয় মায়াময় চাঁদ,
সবুজ ঘাসের মাথায় শিশির বিন্দু হেসে হেসে
মমতা বিছিয়ে স্বাগত জানায় স্বর্ণালী ভোরের আগমন,
গ্রামের সরল মানুষের আতিথেয়তার হাসি মুগ্ধতা ছড়ায় প্রাণে,
এসবের কিছুই এখানে নেই!
এখানে সুরুজ গাওয়ালের ডাক শোনা যায় না,
যে এশার ওয়াক্তের পর,
কাঠালিয়ার মাওলি করা গুদারা চলে গেছে বলে, পার হতে না পেরে
এক নাগারে ডেকে যায় তার ভাই তারা মিয়াকে!
বাল্য বন্ধুদের দুষ্টুমি ভরা আড্ডায়,
ফুলিকে নিয়ে টিটকারী মেরে কেউ কথা বলে না।
বুধবারের হাট থেকে ভেদরের খাল পার হয়ে,
সংসারের টুকরি মাথায় কাউকে আসতে দেখিনা বহু বছর!


তবুও আমি তোমার চোখ দিয়েই অবলোকন করি পৃথিবীকে,
এখানে দুঃসময়ের আবর্তে ঘোরে সময়ের অঙ্গীকার,
যতি চিহ্নহীন সময়ের দুঃসহ বেদনায়,
স্নেহের পরশ বুলায় তোমার মায়াময় হাতছানি!
দীর্ঘশ্বাসের মুহূর্তগুলিতে তুমি স্নেহের পরশ বুলাও পরম মমতায়।
হে আমার প্রাণের জননী,
এক মুঠো বিস্ময় হাতে নিয়ে তুমি আমাকে ডেকে যাচ্ছো নিরন্তর!
আমি আসবো তোমার কোলে,
যেখানে আমার অন্তিম আরাধ্য ও স্মৃতিময় গন্তব্যে
আমার প্রিয়জন অপেক্ষা করে আছে!
-------------------------------------------------------------
আমার এই ক্ষুদ্র লেখাটি, পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশী রেমিটেন্স যোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করলাম। যাদের কষ্টের অর্জনে, পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে আমার বাংলাদেশ যথেষ্ট ভালো আছে।